সারাদেশ

সাতক্ষীরা সীমান্তের জিরোপয়েন্ট ঘিরে দুই ভাইয়ের মানব পাচার চক্র

ডেস্ক রিপোর্ট: নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে ২০০১ সালে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের গণধর্ষণের শিকার হন পূর্ণিমা রানী শীল। সেই দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা পূর্ণিমার প্রশ্ন, আমার ধর্ষণে আমি লজ্জা পাবো নাকি বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দ্বাদশ সংসদের সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন ফরম কিনতে এসে সাংবাদিকদের কাছে এ প্রশ্ন করেন নির্যাতিতা এই নারী।

২০১৮ সালেও সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন পূর্ণিমা রানী শীল।

বার্তা২৪.কম-কে পূর্ণিমা বলেন, ধর্ষণের কলঙ্ক থেকে মুক্তি পাবার জন্য, সুস্থভাবে বাঁচার জন্য আমি আসছি। এটা আমার প্রাপ্য, এটা আমার অধিকার।প্রধানমন্ত্রী আমি কেন আপনার দিকে চেয়ে থাকবো? আপনার পাশের লোকগুলো কেন আমাকে একটু সহযোগিতা করলো না? কেন একটু দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিলো না? কেন আজকে আমাকে এখানে আসতে হবে?

তিনি আরও বলেন, আমাকে যদি সুযোগ দেওয়া না হয় তাহলে বাংলাদেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত নারীরা কখনোই আমাকে ফলো করবে না, ভালোবাসবে না। বলবে, পূর্ণিমাকে জায়গা দেয়নি তাহলে আমাদেরও জায়গা দিবে না। রাষ্ট্র ও এই সমাজের কি আমার প্রতি কোন দায়িত্ব ছিলো না একটু ভাল রাখার?

তার বাবা আওয়ামী লীগ করতেন জানিয়ে পূর্ণিমা বলেন, জন্মের পর থেকেই আমি দেখে এসেছি, আমার বাবা আওয়ামী লীগ করতেন। আমি আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘু পরিবারের একজন মেয়ে। ধানের শীষে ভোট দেই বা নৌকায় ভোট দেই আমাকে আওয়ামী লীগই বলতো। আমার পরিবার এমন একটা অবস্থায় চলে গিয়েছিলো, জামায়াত-বিএনপির জোট সরকারের অত্যাচার ও নির্যাতনের শুরুটা করেছিলো আমার পরিবার দিয়ে।

তিনি বলেন, আমি পূর্ণিমা রানী শীল কিন্তু খাতায় দেখুন লেখা কি? পূর্ণিমা রানী সরকার। কারণ সে সময় এতটাই চিরুনি অভিযান চালানো হয় যে, পূর্ণিমা নামে কোন স্কুলে ভর্তি হতে পারতাম না। যে কারণে আমার নিজ নামে কোন সার্টিফিকেট নাই, পাসপোর্ট নাই, আইডি কার্ড নাই। আমি তখন থেকেই এভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছি। এই সমাজ এখনো আমাকে ধর্ষিতা বলে……যা এখনো আমার কানে বাজছে।

অনেকটা ক্ষোভ নিয়েই নির্যাতনের শিকার এই নারী বলেন, আমি ২০০১ সালে গণধর্ষণের শিকার হয়েছি। আমি কৃতজ্ঞ যে প্রধানমন্ত্রী আমাকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন। কিন্তু তারপরও আমার প্রশ্ন, আমি কেন এইভাবে থাকবো? আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাই, উনি যেনো আমার দিকে সুদৃষ্টি দেন। আমার বাবা নেই। আমি ঘর ছাড়া, বাড়ি ছাড়া, এলাকা ছাড়া, বিবাহ ছাড়া। আমি আর মানতে পারছি না। আমি ধৈর্য ধারণ করতে পারছি না। আমার সুইসাইড ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।

সুযোগ পেলে সংসদে গিয়ে নির্যাতিতা নারীদের পাশে দাঁড়াতে চান জানিয়ে পূর্ণিমা বলেন, সংসদে গেলে আমার মতো যারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, আমি তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। যদি সুযোগ পাই জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে ধর্ষণের বিরুদ্ধে কথা বলতে চাই। তাদেরকে সহযোগিতা করতে চাই। তাদের অনিশ্চয়তা দূর করতে চাই। ধর্ষণের শিকার হওয়াদের নিয়ে একটা সংগঠন করতে চাই।

উল্লেখ্য, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের ‘ব্যক্তিগত কর্মকর্তা’ (পারসোনাল অফিসার) হিসেবে ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি নিয়োগ পেয়েছিলেন পূর্ণিমা। সেখানে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তারপর থেকে অনেকটা অনিশ্চয়তায় জীবন কাটাচ্ছেন। বর্তমানে একটি স্কুলে গান শিখিয়ে কোন রকম জীবিকা নির্বাহ করছেন পূর্ণিমা।

২০১১ সালের ৪ মে ধর্ষণকারীরা সবাই বিএনপি-জামায়াত জোটের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। ধর্ষণের এই মামলায় ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করে আদালত। তবে চূড়ান্ত বিচার কার্য এখনো শেষ হয়নি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *