সারাদেশ

সাতক্ষীরা সীমান্তের জিরোপয়েন্ট ঘিরে দুই ভাইয়ের মানব পাচার চক্র

ডেস্ক রিপোর্ট: বিগত এক বছরে দেশে হ্যান্ডসেট ডিভাইসের উৎপাদন কমেছে ২৬ শতাংশ। এমন পরিস্থিতির জন্য ডলারের দাম বেশি, কর বেশি এবং সর্বোপরি উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে দায়ি করা হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এগুলো কারণ। তবে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসবের সাথে সবচেয়ে বড় হুমকি এখন অবৈধ হ্যান্ডসেট ডিভাইসের মার্কেট। গত কয়েক বছরে দেশে অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট ডিভাইসের বাজার বাড়তে বাড়তে এটি এখন ৪০ শতাংশে চলে এসেছে। টাকার অংকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার অবৈধ বাজার এটি।

স্যামসাং, অপো, ভিভো, শাওমি, রিয়েলমি, টেকনো, সিম্ফনি, ওয়ালটন, নোকিয়াসহ বিশ্বের খ্যাতনামা হ্যান্ডসেট ব্র্যান্ড গত কয়েক বছরে এদেশে কারখানা তৈরি করতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এ খাতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। কিন্তু অবৈধ হ্যান্ডসেটের দৌরাত্ম্যে এই বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ এখন হুমকির মুখে পড়েছে।  

২০২১ সালের ১ জুলাই দেশে প্রথমবারের মতো মোবাইল ফোন সেট নিবন্ধন (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিষ্টার-এনইআইআর) চালু হয়। এরপর একে একে মোবাইল হ্যান্ডসেট ডিভাইস নিবন্ধন শুরু হলে বৈধ চ্যানেলে আসা ও দেশীয় কারখানায় তৈরি মোবাইল হ্যান্ডসেট কিনতে বাধ্য হন ক্রেতারা। এর ফলে অবৈধ বাজারের আধিপত্য কমতে থাকে। এক পর্যায়ে এই বাজার শূণ্যের কোঠায় নেমে আসে। এতে করে দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের নির্মাতার মধ্যে স্বস্তি ফেরে। 

তবে কিছুদিন পর হঠাৎ কোনো অজানা কারণে এই নিবন্ধন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে অবৈধ হ্যান্ডসেটের বাজারের প্রসার ঘটতে শুরু করে। একে একে অবৈধ বাজার বাড়তে বাড়তে এখন তা ৪০ শতাংশে চলে এসেছে। দেশের মোট হ্যান্ডসেটের বাজার এখন ১৫ হাজার কোটি টাকার। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অচিরেই এই অবৈধ হ্যান্ডসেটের বাজার বন্ধ না হলে হুমকিতে পড়বে দেশে উৎপাদিত কারখানার বিনিয়োগকারীরা। 

এই অবস্থায় দায়িত্ব নিয়েই টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গত ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) এর সাথে এক সভায় অবিলম্বে এনইআইর কার্যকর করতে বলেন। তিনি বলেন, স্থানীয় উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও রফতানি বৃদ্ধি এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিবন্ধিত ও বৈধ মোবাইল ফোন ছাড়া কেউ যেন অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহার করতে না পারে। 

বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর আগামী ১ জুলাই থেকে পুনরায় হ্যান্ডসেটের নিবন্ধন চালু হতে যাচ্ছে। 

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর দেশে উৎপাদিত কারখানাগুলো দুই কোটি ৩৩ লাখ মোবাইল হ্যান্ডসেট তৈরি করে। আর ২০২২ সালে তৈরি করা হয়েছে ৩৩ লাখ ১৭ লাখ হ্যান্ডসেট। ২০১৭ সালের পর বিদায়ী বছরে প্রথম দেশে হ্যান্ডসেটের উৎপাদন কমেছে। কারণ অবৈধপথে আসা হ্যান্ডসেট তুলনামূলক কম মূল্যে পাওয়ায় মানুষ বৈধ বাজার থেকে হ্যান্ডসেট কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া এখান থেকে কিনলে করের টাকাও দেওয়া লাগছে না। 

এই সময়কালে বিটিআরসি বিভিন্ন বড় বড় মার্কেটে অবৈধ হ্যান্ডসেট জব্দে মাঝে মাঝে অভিযানও চালিয়েছে। কিন্তু এতে কাজ হয়নি। বরং দিনে দিনে অবৈধ বাজার বিস্তৃত হয়েছে। ৫ হাজার কোটি টাকার এই বাজার থেকে সরকারের কমপক্ষে দেড় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হতো। সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। 

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রেজওয়ানুল হক প্রতিমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বার্তা২৪.কমকে বলেন, এই নিবন্ধন পদ্ধতি চালুর জন্য আমরা অনেক সংগ্রাম করেছি। শেষ পর্যন্ত এটি চালু হলে খাতটি চাঙা হয় এবং অবৈধ বাজারের বিস্তার বন্ধ হয়ে যায়। এখন যেভাবে এই বাজার বিস্তৃত হচ্ছে অচিরেই তা বন্ধ না হলে এই খাতের শতশত কোটি টাকা বিনিয়োগ বিফলে যাবে। প্রতিমন্ত্রীর এই উদ্যোগে খাত সংশ্লিষ্টরা স্বস্তি ফিরে পাবে। 

এটি করা গেলে তখন বিটিআরসিতে অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধ করতে কোনো ধরনের অভিযানেরও প্রয়োজন হবে না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবৈধ বাজার বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে বিনিয়োগকারীরা যেমন স্বস্তি পাবেন, সেই সঙ্গে সরকারেরও এতদিন ধরে যে রাজস্ব পেতো না, তা পাওয়া হবে। 

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *