বাস চাপায় নারী-শিশুসহ নিহত ২, চালকসহ গ্রেফতার ৩
ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর আয়োজনে ৯০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী ‘ওস্তাদ ভাই লাঠিখেলা উৎসব ও লোকজ মেলা’য় পাঁচ শতাধিক লাঠিয়াল জড়ো হয়েছেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে।
গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবের উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শিশির কুমার রায়।
জানা যায়, ১৯৩৩ সালে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর এলাকায় প্রয়াত সিরাজুল হক চৌধুরী লাঠিখেলার দল তৈরি করেছিলেন। এরপর তার পরিবারের সদস্যরাও লাঠিখেলায় জড়িয়ে পড়েন। নারী-পুরুষ সবাই লাঠিখেলার দলে নাম লেখান। ৯১ বছর ধরে চৌধুরী পরিবারের শতাধিক নারী-পুরুষ গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই লাঠিখেলা ধরে রেখেছেন।
লাঠি খেলার ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করেছেন সিরাজুল হক চৌধুরী। ১৯৩৩ সালে তিনি সারা দেশের লাঠিয়ালদের একটি সংগঠন তৈরি করেছিলেন।
দেশের নারী লাঠিয়ালদের মধ্যে অন্যতম রুপন্তী চৌধুরী বলেন, ‘দাদার হাত ধরেই বাবা রতন চৌধুরীও ছিলেন নামী লাঠিয়াল। আর তাদের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করছি।’
তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া উৎসাহ-অনুপ্রেরণার কথা উল্লেখ করে রুপন্তী বলেন, ‘আমার বাবা সবসময় চাইতেন যে আমরা নিজেরা নিজেদের মতো চলাফেরা করি। যেহেতু আমরা দুই বোন, ভাই নেই। তাই উনি চাইতেন আমরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠি, নিজেই যেন নিজেকে রক্ষা করতে পারি।’
চৌধুরী পরিবারে সন্তান রুপন্তী চৌধুরী বলেন, তার দাদার হাতে তৈরি লাঠিয়াল বাহিনী। তিনিও দেশের বিভিন্ন জায়গায় লাঠিখেলা দেখান। নারীরাও যাতে এই খেলা রপ্ত করতে পারেন, সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আত্মরক্ষায় নারীরা যাতে কাজে লাগাতে পারেন, এ জন্য দেশের স্কুল-কলেজে লাঠিখেলার কসরত শেখানো দরকার।
বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর কেন্দ্রীয় সদর দপ্তরের (কুষ্টিয়ায় অবস্থিত) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের দিনও লাখো মানুষ সমবেত হয়েছিলেন বাংলার এই বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে। ১৯৯৩ সালে সাফ গেমসের সমাপনীতে লাঠিয়াল বাহিনীর শতাধিক সদস্য লাঠিখেলা প্রদর্শন করেছিলেন। এমনকি দেশের বাইরে কলকাতাতেও এই লাঠিলেখা দেখানো হয়েছিল। এই খেলা অব্যাহত রাখা হবে।’
বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘আধুনিক সভ্যতার আড়ালে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে ও কালের বির্বতনে যেন তা হারিয়ে না যায় সেইজন্য এই খেলা আজও টিকিয়ে রেখেছেন ওস্তাদ ভাইয়ের পরবর্তী প্রজন্ম।’
বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষক আলাউদ্দিন আলাল বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এ খেলাটি হারিয়ে যাচ্ছে। ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আমরা লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে তুলেছি। সরকারি অনুদান ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খেলাটি আরও জনপ্রিয়তা করা যেতো।’
উদ্বোধনী দিনে তিনিও লাঠিখেলা দেখান। উৎসবে আসা লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যেরা লাঠি ছাড়াও ঢোল, কাসরসহ বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র নিয়ে এসেছেন। কারও হাতে মোটা লাঠি আবার কারও হাতে চিকন ছড়ি। মাথায় বাঁধা কাপড়। ঢোল আর কাসরের তালে তালে নেচে প্রদর্শন করা হয়ে লাঠিখেলা।
লাঠি হাতে সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন ৭০ বছরের আজিজুল বিশ্বাস। পাশেই আরেক সারিতে দাঁড়িয়ে ১০ বছরের ইমরান হোসেন, তার হাতেও লাঠি। দুজনই লাঠিয়াল। বয়োবৃদ্ধ হলেও লাঠির ভরে দাঁড়িয়ে নয়, বরং প্রতিপক্ষকে শক্ত হাতে দমন করতে লাঠির কৌশল দেখাতে এসেছেন আজিজুল।
সেখানে হাজারো দর্শক লাঠিখেলা দেখতে ভিড় করেন। কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লাঠিয়াল দল এসেছে। একেক দলে ২০ জনের বেশি সদস্য।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।