সারাদেশ

স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনে তরুণদের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে: নাছিম

ডেস্ক রিপোর্ট: বার্ধক্যের ভারে শরীর চলে না। ভার টানার শক্তি নেই, তবু পেটের তাড়নায় রিকশা নিয়ে প্রতিদিন নামতে হয় রাস্তায়। দৈনিক রোজগার দিয়ে দিন চলে তার।

কথা হচ্ছিল রিকশাচালক আবু বকর সিদ্দিকের সাথে। কাজ করার শক্তি না থাকলেও উপায় নেই তার। জীবনজীবিকা তাকে খাঁটিয়ে নেয়। শুধু নিজের না, কাঁধে দায়িত্ব স্ত্রী-নাতিসহ আরও পাঁচজনের। তাই বিশ্রামের সুযোগ কম। দিনভর পরিশ্রম করেও আয় ব্যয়ের হিসাব মেলাতে পারেন না। দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতেই পকেট খালি। পুষ্টির যোগান থাকে বহু দূর।

আনুমানিক বাহাত্তর বছরের বৃদ্ধ আবু বকর সিদ্দিক। হাড্ডিসার জীর্ণ-শীর্ণ দেহ তার। বয়সের ভারে শরীরই চলে না, রিকশার গতিও তাই ধীর। বয়সের ভারে শরীরের চামড়া কুঁচকে গেছে অনেকটাই।

আবু বকর সিদ্দিক থাকেন রাজধানীর মিরপুর এলাকার শেওড়াপাড়ায়। টিনশেডের এক রুম ভাড়া করে। এক রুমেই পাঁচ জনের সংসার। স্ত্রী অসুস্থ, নাতি ছোট। তাই সংসারের হাল তার ঘাড়ে। মিরপুর এলাকায় কথা হয় তার সঙ্গে।

এই বয়সেও রিকশা চালান, ছেলে-মেয়ে নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, “রিশকা (রিকশা) না চালাইলে খামু কী মা? তিনডা পোলা আমার দ্যাশে থাহে (গ্রামে), খোঁজ খবর রাহেনা আমগো। তারা আছে তাদের লাহান, তাগো জীবন তারা দেখতাছে। বড় ব্যাটার আগের ঘরের তিনটা নাতি-নাতিন পালতাছি আমি।”

আবু বকর সিদ্দিকের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে যমুনা তীরের নলকা গ্রামে। এক সময় তার সংসার ভালই ছিল। যমুনার ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। কোন সালে ঢাকায় এসেছেন ঠিক মনে করতে পারেন না। স্মৃতি হাতড়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার কিছুদিন পরে জীবিকার তাগিদে চলে আসেন রাজধানীতে।

আবু বকর বলেন, ‘প্রায় পাঁচচল্লিশ (৪৫) বছর ধইরা ঢাকা শহরে রিশকা চালাইতেছি। অহন আর শরীর পারে না! তোমগো চাচীও বড় অসুস্থ। এই বয়সে আইসা পাঁচজনের সংসার চলে না।”

ভাড়া করা রিকশায় দৈনিক তার আয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, সেখান থেকে ১০০ টাকা দিয়ে জমা দেন মালিককে। বাকি টাকায় বাজার করে বাড়ি ফেরেন। স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

এক প্রশ্নের জবাবে আক্ষেপ করে বলেন “কোরবানির ঈদ ছাড়া গরুর গোস্ত খাইতে পারি না। নাতিনগো মুখে প্রতিদিন দু’বেলা ডাল ভাত তুলে দেওয়াই কষ্ট।”

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির এই সময়ে যেখানে চালের কেজি ৫০ টাকা, সেখানে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় দিয়ে ৫ জনের সংসার টানা অতি কষ্টসাধ্য, যোগ করেন তিনি।

বৃদ্ধ আবু বকর সিদ্দিক তার জীর্ণ দেহ নিয়ে প্রতিদিন বের হন দুবেলা পরিবারকে দুমুঠো অন্ন যোগাতে। ভাগ্যবদল আর জীবিকার অন্বেষণে সেই ছোটবেলায় চলে আসেন ঢাকা শহর। বয়সের সাথে শক্তির ক্ষয় হয়েছে, দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির এ সময়, তার মতো বৃদ্ধরা বড় অসহায়। ৪৫ বছর ধরে রিকশার চাকা ঘোরালেও ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পারেননি। কথা বলতে বলতে ততক্ষণে গন্তব্যে পৌঁছে গেছি। যা ভাড়া সাধ্য অনুযায়ী কিছু অতিরিক্ত দিলাম। আনন্দে হাসলেন, দোয়াও করলেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *