আন্তর্জাতিক

পাকিস্তান ছাড়তে শুরু করেছে আফগান শরণার্থীরা

ডেস্ক রিপোর্ট: পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে অক্টোবরের শেষের দিকেই ঘোষণা করা হয়েছিল যে, নভেম্বর মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই নিজেদের দেশে ফিরতে হবে পাকিস্তানে বসবাসকারী আফগানিস্তানের নাগরিকদের।

ওই সময়সীমা শেষের প্রহর ঘনিয়ে আসতেই মঙ্গলবার (৩১ নভেম্বর) পাক-আফগান সীমান্তে শুরু হয়েছে প্রশাসনিক তৎপরতা। এদিন সীমান্তে পাক সেনা এবং ফ্রন্টিয়ার কোর বাহিনীর বাড়তি মোতায়েন চোখে পড়েছে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হাতে হেনস্থার আশঙ্কায় আতঙ্কিত বহু আফগান শরণার্থীও সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ফিরতে শুরু করেছেন।

এনডিটিভি জানিয়েছে, পাক-আফগান সীমান্তবর্তী খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তান প্রদেশের বিভিন্ন চেকপোস্টে আফগানিস্তানের মানুষ ও যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।

২০ হাজারেরও বেশি মানুষ মঙ্গলবার সীমান্ত পেরিয়েছেন বলে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের একাংশ দাবি করেছে।

আশির দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনার অনুপ্রবেশ এবং মুজাহিদ বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই শুরুর পর থেকে পাকিস্তানে মূলত পাশতুন জনগোষ্ঠীর শরণার্থীদের ভিড় শুরু হয়।

দুই দশক আগে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান শুরুর সময়ও কয়েক লাখ আফগান নাগরিক প্রাণ বাঁচাতে পাকিস্তানে চলে এসেছিলেন। মূলত পাক-আফগান সীমান্ত লাগোয়া খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তান প্রদেশে তাদের বসবাস।

পাকিস্তানের দাবি, তাদের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। যদিও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সমীক্ষায় তা সাড়ে ১৭ লাখের আশপাশে।

দীর্ঘদিন ধরে আফগান শরণার্থীদের জন্য বিপুল অঙ্কের আন্তর্জাতিক অর্থ সাহায্য এবং ত্রাণ পেয়েছে ইসলামাবাদ। কিন্তু, ২০২১ সালের আগস্টে কাবুলে তালেবানের ক্ষমতা দখলের পরে সীমান্ত চিহ্নিতকরণ নিয়ে দুই দেশের বিরোধ শুরু হয়।

সেই সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবানকে (টিটিপি) কাবুলের মদতের অভিযোগ ঘিরেও দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়।

অক্টোবরের শেষভাগে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি একটি সরকারি নির্দেশিকা প্রকাশ করে বলেন, ‘পাকিস্তানের মাটিতে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের কোনও জায়গা হবে না। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সকলকে পাকিস্তানের মাটি ছাড়তে হবে। তা না হলে প্রয়োজনে আমরা বল প্রয়োগের পথে হাঁটব।’

জানা গেছে, মূলত দুটি কারণে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ। প্রথমত, দেশের বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাড়তি ব্যয়বহনে অক্ষমতা। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সঙ্কট। পাশতুন বিদ্রোহী গোষ্ঠী টিটিপির সঙ্গে আফগান নাগরিকদের একাংশের যোগাযোগ।

ইসলামাবাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর গত বছরের নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে পাকিস্তান সরকার এবং সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তারা। টিপিপিকে আফগান তালেবানদের একাংশ সরাসরি মদত দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী মানববোমা হামলায় আফগান শরণার্থীদের জড়িত থাকার প্রমাণও মিলেছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *