আন্তর্জাতিক

বিজিপির ৩৩০ সদস্য আশ্রয়ে বাংলাদেশে: মনে আছে রাজ্জাক-মিজানের কথা?

ডেস্ক রিপোর্ট: মিয়ানমারে জান্তা বাহিনীর সাথে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সংঘর্ষ চলছে। সংঘর্ষের মধ্যে প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির (বর্ডার গার্ড পুলিশ) ৩৩০ সদস্য। ভারি অস্ত্রশস্ত্রসহ বাংলাদেশে পালিয়ে এলেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের আশ্রয় দিয়েছে। দেওয়া হচ্ছে ভালো খাবার-দাবার।

কিন্তু ইতিহাস কী বলে? বিজিপি হলে কি বিজিবিকে এমন আশ্রয় দিত? তারজন্য ফিরতে হবে ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে।

২০১৫ সালের ১৭ জুন, বুধবার। ভোরে বিজিবির ছয় সদস্যের একটি দল নায়েক আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে টেকনাফের নাফ নদীতে টহল দিচ্ছিল। তারা বাংলাদেশের জলসীমায় মাদক চোরাচালান সন্দেহে দুটি নৌকায় তল্লাশি করছিল। এ সময় মিয়ানমারের রইগ্যাদং ক্যাম্পের বিজিপির সদস্যরা একটি ট্রলারে করে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে।

একপর্যায়ে বিজিপির সদস্যদের বহনকারী ট্রলারটি বিজিবির টহল নৌযানের কাছে এসে থামে। বিজিপির ট্রলারটিকে বাংলাদেশের জলসীমা ছেড়ে যেতে বলা হলে তারা নায়েক রাজ্জাককে জোর করে ট্রলারে তুলে নেয়। বিজিবির অন্য সদস্যরা এতে বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়। এতে সিপাহি বিপ্লব কুমার গুলিবিদ্ধ হন। পরে বিজিপির ট্রলারটি রাজ্জাককে তুলে নিয়ে মিয়ানমারের দিকে চলে যায়। অপহরণের পর বিজিপির সদস্যরা রাজ্জাককে শারীরিক নির্যাতন করে, এতে তার নাকে গুরুতরভাবে জখম হয়।

পরদিন বৃহস্পতিবার আপত্তিকর তিনটি ছবি প্রকাশ করা হয় মিয়ানমার থেকে। ছবিগুলোতে দেখা যায়, আবদুর রাজ্জাককে হাতকড়া পরানো। মুখে আঘাতের চিহ্ন। তার নাকের কাছে ক্ষত এবং শুকিয়ে কালচে হয়ে যাওয়া রক্তের দাগ। তার পরনে লুঙ্গি, গায়ে বিজিবির ইউনিফর্ম। সামনে কিছু অস্ত্র রাখা।

মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ ছবিগুলো প্রকাশ করেছে বলে তখন জানিয়েছিল বিবিসি বাংলা। বিজিবি সদস্যের ছবি ফেসবুকে প্রকাশের পর দেশব্যাপী ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় ওঠেছিল। অনেকেই ছবিগুলো ফেসবুকে শেয়ার করছিলেন। তারা আটক সীমান্তরক্ষীর সঙ্গে অবমাননাকর আচরণের অভিযোগ তুলছিলেন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে।

অপহরণের পর নির্যাতনের ৯ দিন পর নানা কূটনীতিক তৎপরতায় তাকে বাংলাদেশের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পিলখানা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল বিজিবি সদস্য আবদুর রাজ্জাককে।

২০১৪ সালের ২৮ মে বান্দরবানের পানছড়ি সীমান্তে কোনো রকম উসকানি ছাড়াই বিজিবি সদস্যদের ওপর গুলি চালায় বিজিপি। সে সময় নায়েক সুবেদার মিজানুর রহমানকে ধরে নিয়ে যায় তারা। পরে তাকে হত্যা করা হয়। অবশ্য ওই ঘটনায় দু’দিন সীমান্তে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে নায়েক মিজানুর রহমানের লাশ হস্তান্তর করে বিজিপি।

এদিকে, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে কক্সবাজারেও চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। একটি পক্ষ মানবিক দিক থেকে আশ্রয় দেওয়ায় বিজিবিকে বাহবা দিলেও আরেকটি পক্ষ বলছে- তারা তো বিজিবি এবং বাংলাদেশিদের সাথে এরকম আচরণ করে না। তাদের আশ্রয় দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না।

যেখান থেকে নায়েক রাজ্জাককে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ওই এলাকার বাসিন্দা আরশাদুর রহমান একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এজন্য বিষয়টি আবারও আলোচনায়।

আরশাদুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা হয় বার্তা২৪.কমের প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, আমি উনাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনতাম। তখন বাজারে কিংবা নাফনদীর সাইডে দেখা হলে সালাম দিতাম। চাকরির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতাম। তখন সহকর্মীদের বাঁচাতে গিয়ে নিজে অপহরণের শিকার হন। তিনদিন পর ফেসবুকে ছবি দেয়। কী মর্মান্তিক অবস্থা। একজন সেনার নাক ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে, হাতে হাতকড়া পরিয়েছে। তিনদিন ধরে টর্চার করেছে। সেই দিনের এই রক্তমাখা ছবি ছিল লজ্জার। তারা ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা মুসলিমের সাথেও অত্যাচার চালিয়েছিল, অথচ বাংলাদেশ তাদের জামাই-আদর করেছে।

আমিনা খাতুন (৩৪) তার তিন সন্তানকে নিয়ে মগ (বিজিপির আঞ্চলিক ভাষা) দেখতে এসেছেন ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ওরা হলে বিজিবিকে খেয়ে ফেলতো আর আমরা সেবা দিচ্ছি! রোহিঙ্গাদের যেভাবে নির্যাতন করেছে। বিজিবি এবং বাংলাদেশিদের কীভাবে নির্যাতন করেছে এসব আমাদের মনে আছে। তাই এদের একটু দেখতে আসলাম।

তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, চোখের বদলে চোখ নিতে থাকলে পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যাবে। ওরা যে রকম আচরণ করেছে আমরা জাতি হিসেবে তাদের সাথে এরকম আচরণ করতে পারি না। ওরা বাংলাদেশের কাছে আশ্রয় চেয়েছে, আমরা আশ্রয় দিয়েছি। আন্তর্জাতিক আইনেও এরকম করা যাবে না। বাংলাদেশ সঠিক একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কূটনৈতিক ভাবে বাংলাদেশ এটার সমাধান করবে। তাদের ফেরত পাঠাবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *