সারাদেশ

১৩ পদে বিএনপি, ৭ পদে আ. লীগ সমর্থিত প্রার্থী জয়ী

ডেস্ক রিপোর্ট: নিজের কোন জমি নেই। স্থানীয় বিভিন্ন মানুষ থেকে জমি বর্গা ও ইজারা নিয়ে করছেন কুল চাষ। নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে ফেনী আসেন আছমত আলী। রিকশা চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করতেন তিনি। পাশাপাশি বিভিন্ন শাকসবজি আবাদ করলেও সেখানে তেমন সফলতা আসেনি।

শাক-সবজিতে সফলতা না পেয়ে কৃষি বিভাগের সহায়তায় শুরু করেন কুল চাষ। এতে অল্প কয়েকবছরে সফল কুলচাষী হয়ে উঠেছেন আছমত আলী। ফলন ভালো হওয়ায় এ মৌসুমে ২ লাখ টাকার কুল বিক্রির প্রত্যাশা করছেন তিনি। প্রতিদিন বাগান থেকে ২০ থেকে ৩০ কেজি কুল বিক্রি করেন তিনি।

আছমত আলী বর্তমানে ফেনী সদর উপজেলার পূর্ব ফলেশ্বর আলী আজ্জম ইট ভাটা সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করছেন। পরিবারে তার ৪ ছেলে ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। প্রায় ৬০ শতক জমিতে বিভিন্ন জাতের কুল চাষ করছেন তিনি। পাশাপাশি সিম, টমেটো, বেগুন, আলু, করলা, মেটে আলু, লাল,পালংশাকসহ বিভিন্ন শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজিরও আবাদ করেন এ কৃষক।

কুল চাষের শুরুর পথচলা তুলে ধরে কৃষক আছমত আলী বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে ফেনীতে এসে প্রথমে রিকশা চালিয়েছি। তখন ছোট পরিসরে শাকসবজি আবাদ করতাম। শাকসবজি চাষে তেমন সফলতা না পেয়ে পরবর্তীতে কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনবছর আগে ৪০ শতক জায়গায় রাজশাহী থেকে চারা এনে কুল চাষ শুরু করি। সফলতা পেয়ে পরে খুলনা থেকে চারা এনে আরও ২০ শতক জায়গায় আরেকটি বাগান করেছি।’ 

তিনি বলেন, ‘বল সুন্দরী জাতের কুল চাষে বেশি সফলতা পেয়েছি। এ জাতের বরই অনেক সুস্বাদু। ফলনও ভালো হচ্ছে। বর্তমানে দুইটি বাগানে বল সুন্দরী ও কাশ্মিরী বাউকুল আছে। এখন বাগান থেকে দৈনিক ২০ থেকে ২৫ কেজির মতো বরই বিক্রি হয়। কেজিপ্রতি ১০০ টাকা করে এলাকার মানুষ বাগান থেকে এসে পছন্দের বরই কিনতে পেরে খুশি।’ চলতি মৌসুমে বাগান থেকে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো কুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

কুল চাষের পাশাপাশি একই জমিতে অন্যান্য সবজি চাষ করেন কৃষক আছমত। এ পদ্ধতিতে চাষ নিয়ে আছমত আলী বলেন, ‘দুয়েকমাস ছাড়া বছরের পুরো সময়েই কুল চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজি আবাদ করি। এখনও কুলের বাগানে আদা ও হলুদ রয়েছে। এছাড়া বছরজুড়ে অন্যান্য ফসলের মতো কুল চাষে খুব বেশি পুঁজি দিতে হয়না। এজন্য লাভের পরিমাণও সন্তোষজনক।’ 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পোকা ও পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষায় বাগানের চারপাশে মশারী জালের বেড়া দিয়েছেন তিনি। প্রতিটি গাছের থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল-সবুজ রঙের কুল। কুলের ভারে মাটিতে নুয়ে পড়েছে গাছের ডাল। সুস্বাদু বাহারি রংয়ের কুল নিজেই গাছে থেকে নিয়ে বিক্রি করছেন কৃষক আছমত আলী।

কৃষক আছমত আলীর বড় ছেলে মো. বেলাল বলেন, ‘নদী ভাঙ্গনে বাড়িঘর হারিয়ে লক্ষ্মীপুর থেকে আমরা ফেনী চলে আসি। তখন রিকশা চালিয়ে বাবা আমাদের অনেক কষ্ট করে বড় করেছেন। বাবা বিভিন্ন শাকসবজি আবাদ করলেও তেমন সফলতা মেলেনি। পরে এই কুল বাগান করে আমাদের পরিবারে সুদিন ফিরেছে। এখন প্রতিবছর দুইটি বাগান থেকে ২ লাখ টাকার বেশি আয় হয়।’ 

কৃষক আছমতের এমন সাফল্য খুশি এলাকাবাসী। স্থানীয় যুবকরা অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেরাও উদ্যোগ নিচ্ছেন চাষ করার। পাশাপাশি সরাসরি বাগান থেকে কুল ক্রয় করতে পারায় খুশি ক্রেতারাও।

রহিম নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, এ উদ্যোগ আমাদের জন্য শিক্ষনীয়। বিশেষ করে তরুণদের আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এখানে এসে বাগানের মালিক থেকে কুল চাষের বিষয়ে ধারণা নিচ্ছি। সুযোগ হলে ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগ বাস্তবায়নের ইচ্ছে আছে।

আবদুল্লাহ শফিক নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘ভেজালমুক্ত কুল কিনতে এখানে এসেছি। বাগানে উৎপাদিত কুল কিনতে মানুষের আগ্রহ বেশি। সচরাচর এভাবে সরাসরি বাগান থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়না। তাই সবার মত আমিও এসেছি।’ 

ফয়সাল মাহমুদ নামে আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘এখানে এসে নিজেই গাছ থেকে পছন্দের কুল পেরে বাড়ি নিচ্ছি। বাজারে কিনতে গেলে ভেজাল নিয়ে শঙ্কার মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু এখানে ভেজালমুক্ত কুল কেনার শতভাগ নিশ্চয়তা রয়েছে।’ 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ফেনীতে ৯০ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ৮০ মেট্রিক টন। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলায় কুলের আবাদ হয়েছিল ৮৬ হেক্টর জমিতে। ফলন হয়েছিল ৯৩৮ মেট্রিক টন।

সদর উপজেলার কাজীরবাগ ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘কৃষি বিভাগ সবসময় এ চাষীদের পাশে থেকে কাজ করছে। বিভিন্ন রোগবালাই প্রতিরোধে এবং বাগান পরিচর্যা বিষয়ে পরামর্শসহ দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আছমত আলী একই জমিতে কুল চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন শীতকালীন সবজিও আবাদ করছে। এতে বাড়তি লাভবান হচ্ছেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. জগলুল হায়দার বলেন, ‘ফেনীর মাটি ও সামগ্রিক পরিবেশ কুলের আবাদের জন্য ইতিবাচক। আগামীতে এ জেলায় কুলের আবাদ আরও বাড়তে পারে। এটি ফেনীর কৃষির জন্য ভালো দিক। কুল চাষে কৃষক যে লাভ পাচ্ছে তাতে সে যেমন লাভবান হবে তেমনি দেশও লাভবান হবে। পুষ্টি নিরাপত্তার পাশাপাশি দেশ বাণিজ্যিক কৃষিতে এগিয়ে যাবে।’ 

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *