সারাদেশ

ময়মনসিংহ-কুমিল্লা সিটি ভোট: প্রার্থীদের তথ্য চায় বাংলাদেশ ব্যাংক

ডেস্ক রিপোর্ট: দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে মাদ্রাসা ছাত্র মো. তাওহীদ ইসলামকে (১০) অপহরণ করার পরে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারী। কিন্তু মুক্তিপণ পাওয়ার পরেও তাওহীদকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী মকবুল হোসেনকে (৩৭) গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। রোববার রাতে রাজধানীর শ্যামপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‍্যাব বলছে, ঘাতক মকবুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। নিহতের পরিবার ও মকবুল একই এলাকায় বসবাস করতো। কিছুদিন আগে বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করার সুবাধে পরিবারিকভাবে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। ভিকটিম তাওহীদের বাবা একজন প্রবাসী থাকায় মুক্তিপণের আশায় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন তিনি।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গত শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার রসুলপুর জামি’আ ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে শিক্ষার্থী তাওহীদ ইসলাম নিখোঁজ হয়। খোঁজাখুজির এক পর্যায় ঐদিন রাতে একজন ব্যক্তি বাসায় পড়ে থাকা মোবাইল ফোনে জানায়, সে ভিকটিম তাওহীদকে অপহরণ করেছে এবং মুক্তিপন হিসেবে ৩ লাখ টাকা দাবি করে। ফোনটি অপহরণকারীই রেখে যান। পরবর্তীতে তাওহীদের মা বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। নিহতের মা তার ছেলেকে উদ্ধারে র‌্যাবের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।

মঈন বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাতে র‌্যাব-১০ এর একটি দল মাদরাসা ছাত্রকে অপহরণ করে হত্যার পর সেপ্টিক ট্যাংকে মরদেহ গুমের পরও মুক্তিপণের টাকা আদায়ের মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী মকবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় মুক্তিপনের ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত উক্ত অপহরণ ও হত্যার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত মকবুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। নিহতের পরিবার ও মকবুল একই এলাকায় বসবাস করতো এবং কিছুদিন পূর্বে গ্রেফতারকৃত মকবুল ভিকটিমের বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেছে বলে জানায়। একই এলাকায় বসবাস এবং বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করার সুবাদে ভিকটিমের পরিবারের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল। ভিকটিম তাওহীদের বাবা একজন প্রবাসী। তাওহীদ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে পড়াশুনা করতো। যার ফলে সে সকালে মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে বাসা হতে বের হতো এবং বাসায় ফিরতে প্রায়ই সন্ধ্যা হয়ে যেতো।

কমান্ডার বলেন, গ্রেফতারকৃত মকবুল এর ধারণা ছিল যে, ভিকটিমের বাবা প্রবাসী তাই ভিকটিমকে অপহরণ করলে মোটা অংকের মুক্তিপন আদায় করা যাবে। এরই প্রেক্ষিতে মকবুল অল্পসময়ে অধিক অর্থ লাভের আশায় প্রায় ছয় মাস অপহরণের পরিকল্পনা করে আসছিল। মকবুল ভিকটিম তাওহীদ মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির রাস্তার পাশে ওঁৎ পেতে থাকে। এ সময় ভিকটিম মাদ্রাসা থেকে আনুমানিক রাত ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা মকবুল ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে উক্ত এলাকার নিকটস্থ একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে কলাগাছের সঙ্গে তার হাত, পা ও মুখ বেঁধে রাখে।

পরবর্তীতে মকবুল আগে থেকে কিনে রাখা মোবাইল কৌশলে তাওহীদের বাসায় ফেলে রাখে। মকবুল বাসায় রেখে আসা মোবাইল ফোনে কল দিয়ে অপহরণের বিষয়টি জানিয়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ সময় মুক্তিপণের টাকা না দিলে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিলে তাওহীদকে হত্যা করার হুমকি দেয়। কলা গাছে বেঁধে রাখা অবস্থায় মুখের বাঁধন খুলে যায় এই সময় মকবুলকে চিনে ফেলে ও ডাক-চিৎকার করলে গ্রেফতারকৃত মকবুল ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিম তাওহীদের মুখ ও গলা মাফলার দিয়ে পেচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ওই এলাকার সেইফটি ট্যাংকের ভিতরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

র‍্যাব জানায়, হত্যার পরও সে মুক্তিপণের টাকা চায়। নিহত তাওহীদের মামাকে ঘাতক মকবুলের কথা মত ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের ফুটওভার ব্রিজের উপরে ৪নং পিলারের গোড়ায় ৩ টাকা রেখে আসেন। গ্রেফতারকৃত মকবুল মুক্তিপণের টাকা নিয়ে পোস্তগোলা এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে। হোটেলে অবস্থাকালীন সময় র‌্যাব গ্রেফতার করে।

এক প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, প্রাথমিকভাবে মকবুলের আগের কোন অপরাধের তথ্য পায়নি র‍্যাব৷ তবে এই ধরণের ইউনিক অপরাধের ধরণ দেখে আমরা ধারণা করছি তার আগের অপরাধের ইতিহাস থাকতে পারে৷ এটা মামলার বিস্তারিত তদন্তে উঠে আসবে বলে আশা করি।

গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র‍্যাব।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *