আন্তর্জাতিক

রাজার ঢিবি খননে বের হচ্ছে একের পর এক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

ডেস্ক রিপোর্ট: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের বিরাট রাজার ঐতিহাসিক ঢিবি খননে বের হচ্ছে একের পর এক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। নিদর্শনগুলো প্রাচীন ও মধ্যযুগের হতে পারে বলে ধারণা করছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর সংশ্লিষ্টরা।

২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রথমবারের মতো এই ঢিবিতে খনন কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর।

এর আগে, ১৯৭৮ সালে এখানে সংস্কৃত অক্ষরে খোদাই করে ‘নম: নম: বিরাট’ লেখা ৯ ইঞ্চি দীর্ঘ মহামূল্যবান একটি শিলালিপি পাওয়া যায়। যা বর্তমানে মহাস্থানগড় যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া ওই সময়ে কৃষ্ণ রঙের শিলা পাথর দ্বারা তৈরি একটি হস্তিমস্তক ও সিংহদ্বারের একটি পাথরের খাম্বাও পাওয়া যায়। তার মধ্যে হস্তিমস্তকটি রাজশাহী যাদুঘরে এবং সিংহদ্বারের পাথরের খাম্বাটি মহাস্থান যাদুঘরে রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৫ টন ওজনের একজোড়া পাথরের কপাট (দরজা) পাওয়া একই সময়ে। অবশ্য দরজাটি বর্তমানে বিলুপ্ত। কেননা পাথরের ওই দরজাটি কয়েক যুগ ধরে পড়ে থাকার পর স্থানীয়রা তা খণ্ড খণ্ড করে ভেঙে নিয়ে গেছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিরাট রাজার ওই ঢিবিতে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন যাবত সংরক্ষিত ৫০ মিটার প্রস্থ, ৩৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৪ মিটার উচ্চতার ঢিবিটিতে খনন কাজ করছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের খনন সংশ্লিষ্টরা। খনন যতই এগুচ্ছে ধীরে ধীরে ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে প্রাচীন যুগের বিভিন্ন অবকাঠামো ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো। আর এই প্রাচীন নিদর্শনগুলো বের হওয়ার খবর ইতোমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় জেলা এবং পার্শ্ববর্তী জেলার কৌতূহলী মানুষেরা ভিড় জমাচ্ছেন। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন ভিডিও ও ইউটিউবাররাও। ফলে এক সময়ের নির্জন স্থানটি এখন দিনের বেশিরভাগ সময়েই থাকছে সরগরম।

ঢিবিটির আনুষ্ঠানিক খনন কাজ করছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল। খনন দলে গবেষণা ও পরামর্শক সদস্য রয়েছেন আটজন। প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা।

জানতে চাইলে খনন দলের প্রধান এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিরাট রাজার এই ঢিবি খননে আমরা যা ধারণা করেছিলাম তার থেকেও অনেক বড় আকারের অবকাঠামো পাওয়া গেছে। গঠনশৈলী, নির্মাণ পদ্ধতিসহ সার্বিক বিবেচনায় যা প্রাচীনকালের নিদর্শন বলে আমাদের ধারণা হচ্ছে। খননের বর্তমান পর্যায় পর্যন্ত পোড়ামাটির ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির ফলক, ধর্মীয় উপাসনালয়ের সাজসজ্জায় ব্যবহৃত হয় এমন অলংকৃত ইট, ভিত্তিপ্রস্তর পিলার পাওয়া গেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ সুলতানা বলেন, বড় আকারে খনন সম্পন্ন হলে এসব ঠিক কোন সময়ের এবং কারা এখানে বাস করতেন বা কাদের রাজ্য ছিল এটি তা বলা যেতে পারে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এই প্রত্নতত্ত্ব স্থলটি বড় পরিসরে খনন কাজ শেষ করে স্থানটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া এবং এর সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

খনন দলের অন্য সদস্যরা হলেন ড. আহমেদ আবদুল্লাহ, রাজিয়া সুলতানা, হাবিবুর রহমান, এস এম হাসানাত বিন ইসলাম, মো. আবুল কালাম আজাদ, তারিকুল ইসলাম ও উম্মে সালমা ইসা। শুরু থেকেই ২০ জন শ্রমিক ঢিবিটির খনন কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

জনশ্রুতি আছে, এখানে প্রাচীন একটি দুর্গ নগরী ছিল। এর নিরাপত্তার জন্য ছিল সু-উচ্চ প্রাচীর এবং প্রাচীরের বাইরে প্রশস্ত ও সুগভীর পরিখা। এছাড়া স্থানীয় গবেষক এম এ কাইয়ুম বিরাট রাজার ঢিবি নিয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর গবেষণা করেছেন। তার গবেষণায় প্রকাশিত তথ্যানুসারে, বিরাট রাজা পুরো ভারতবর্ষে ‘মৎস্যরাজ’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মাছ চাষের জন্য এই অঞ্চলে তিনি প্রায় এক হাজার পুকুর খনন করেছিলেন।

এছাড়াও বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ১৯০৫ সালের দিকে এ স্থানটি ঘোর জঙ্গলে ঘেরা ছিল। দীর্ঘদিন পর কয়েক বছর আগে স্থানীয় সাঁওতালরা জায়গাটি পরিষ্কার করে সেখানে তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করেন চাষাবাদও শুরু করেছেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *