সারাদেশ

মিউনিখে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হবে জেলেনস্কির

ডেস্ক রিপোর্ট: বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহের মেলায় প্রতি বছর আকর্ষণ থাকতো বড় বড় বাঘাইড় মাছ। বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট বাঘাইড় মাছ বিক্রি ও প্রদর্শন বন্ধের নোটিশ দেওয়ায় এবার বাঘাইড় ওঠেনি মেলায়। তবে সেই স্থান দখল করেছে বিশাল আকারের পাখি মাছ। প্রায় ১মণ ওজনের পাখি মাছ উঠে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায়।

শুধু পাখি মাছই নয়, ২৫ কেজি ওজনের ব্লাক কার্প, ২০ কেজি ওজনের কাতলাসহ রুই, মৃগেল, চিতল, বোয়াল, আইড়, হাঙড়ি, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, বিগহেড, কালিবাউশ, শোল, ভেউস ও পাঙ্গাস মাছ উঠে এই মেলায়।

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ভোর হতে মেলায় কেনাকাটা শুরু হলেও মাছ উঠতে শুরু করে মঙ্গলবার রাত থেকে।

বগুড়া গাবতলী উপজেলার পোড়াদহ মেলা প্রায় দুইশ‘ বছরের ঐতিহ্যবাহী। ওই এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, প্রায় দুইশ‘ বছর আগে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নে ইছামতি নদীর শাখা (খাল) সংলগ্ন পোড়াদহ নামকস্থানে একটি বটবৃক্ষ তলে আয়োজন করা হতো সন্যাসী মেলা। প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার আয়োজিত এই মেলা কালের বিবর্তনে হয়ে ওঠে পূর্ব বগুড়ার বাসিন্দাদের মিলনমেলা। নদী তীরবর্তী স্থানে এই মেলায় দিনকে দিন নানা প্রজাতির মাছের আমদানি হতে শুরু করে। এক সময় তা এই অঞ্চলে বড় মাছের মেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ইছামতীর খালের পশ্চিমপাশে মাঠের আয়োজন করা হয় এই মেলার।

মেলা উপলক্ষে সেখানকার বাসিন্দাদের রেওয়াজ হয়ে উঠেছে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো। মেলায় শিশু-কিশোরদের জন্য নাগরদোলা, সার্কাস, মটরসাইকেল খেলা, বিভিন্ন প্রকার খেলনার দোকান বসে। মেলার একপাশে বসে গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিশেষ করে মসলাপাতির দোকানপাট। অপর পাশে বসে কাঠের আসবাবপত্রের দোকান।

প্রতিবারের ন্যায় এবারও মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিলো মাছপট্টিতে। প্রতিটি দোকানে বড়, মাঝারি ও ছোট বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সাজান দোকানীরা। মেলায় আকৃতি ভেদে প্রতিকেজি রুই বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতলা ৪৫০ থেকে ৮০০টাকা, মৃগেল ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চিতল ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, হাঙরি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, গ্রাসকার্প ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, সিলভার কার্প ও বিগহেড ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, কালিবাউশ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, শোল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা ও পাঙ্গাস ১৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি।

ক্রেতারা জানান, বিগত বছরের তুলনায় এবার মাছের দাম কিছুটা বেশি। মহিষাবান সার্বজনীন সন্যাসী পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি নিকুঞ্জ কুমার পাল জানান, এই মেলার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিলো সন্যাসী পূজা; সেটাই ছিলো মূলত ঐতিহ্য। কিন্তু বর্তামানে জায়গা নিয়ে জটিলতা ও মেলা উদযাপন কমিটির সমন্বয়হীনতার কারণে মেলার সেই ঐতিহ্য হারাতে বসছে। এখন মেলা কেন্দ্রিক কেনাকাটা মুখ্য হয়ে উঠেছে।

পোড়াদহ মেলার আয়োজক ও মহিষাবান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, মেলার যে ঐতিহ্য তা টিকিয়ে রাখতে সর্বত্মক চেষ্টা চালানো হয়েছে। মানুষ তাদের প্রাণের টানেই মেলায় আসে। আর আশপাশের গ্রামগুলো আত্মীয়-স্বজনে মিলন মেলায় পরিণত হয়।

তিনি বলেন, মেলা প্রাঙ্গণের পূর্বপ্রান্তে রাস্তা ঘেঁষে ১২টি বড় আড়ৎ বসেছে। ভোর থেকে মেলায় আসা বিভিন্ন এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী এসব আড়ৎ থেকে মাছ কিনে মেলায় বিক্রি করছেন।

গাবতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, মেলা সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। গ্রামীণ এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আগামীতেও প্রশাসন সহযোগিতা দিয়ে যাবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *