‘আল্লাহর ওয়াস্তে খাবার ব্যবস্থা করে দেন’
ডেস্ক রিপোর্ট: আল্লাহর ওয়াস্তে খাবার ব্যবস্থা করে দেন বাবা, আল্লাহ তোমার ভালো করবে। শরীর টা ভালো নাই বাবা, রাস্তায় মানুষ ও নাই। খাবার দেন, একটু খাবার ব্যবস্থা করি দেন।
এভাবে এক মুঠো খাবারের আকুতি জানাচ্ছিলেন গুলিস্তান এলাকার ভিক্ষুক সালাউদ্দিন। কয়েক দিনের হরতাল অবরোধে রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি কম থাকায় তেমন সাহায্য পান নি তিনি ৷ এছাড়া শরীর অসুস্থ থাকায় বেশি দূর গিয়ে অর্থ সংগ্রহ করতে না পারায় ৩ দিন ধরে অনাহারে কোন রকম পানি খেয়েই বেঁচে আছেন তিনি।
সালাউদ্দিনের মত একই এলাকার ভিক্ষুক শহিদুল ইসলাম। ২০ বছর আগে বিদ্যুতায়িত হয়ে দুই হাত কেটে ফেলতে হয়েছিল তাকে। জীবন যুদ্ধে হেরে যেতে যেতেও বেঁচে ফিরেছিলেন তিনি। তবে এ ফেরা যেন আরেক যুদ্ধের শুরু করেছিল তার জীবনে। শরীরের করুণ এই অবস্থায় পরিবার চালাতে ভিক্ষা বৃত্তি বেছে নিতে হয় তাকে। সারাদিনের মানুষের সহযোগিতায় যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তার সংসার। তবে গত কয়েক দিনের রাজনৈতিক অস্থিরতায় রাজধানীতে মানুষের উপস্থিতি কম থাকায় খুব কষ্টে দিন পার করছেন তিনি।
ছবি: বার্তা ২৪ শুধু সালাউদ্দিন ও শহিদুল নয় দেশের রাজনৈতিক সংকটে দারিদ্রসীমার নিচে বাস করা প্রায় সকল মানুষের অবস্থা একই রকম।
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের পর ৭২ ঘণ্টার কঠোর অবরোধ চলছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রাস্তায় নেই তেমন যানবাহন, প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেনা মানুষ ৷
ফলে রাজনৈতিক এমন সংকটে বিপাকে আছে অন্যের সাহায্যে বেঁচে থাকা দারিদ্রসীমার নিচে বাস করা এসব মানুষ। বিশেষ করে ভিক্ষুক ও ভাসমান মানুষরা। দেশের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে একপ্রকার কোণঠাসা হয়ে আছেন তারা।
শহিদুলের মত জীবনের গল্পটা এক না হলেও জীবন চলার যুদ্ধ টা একই রমনা পার্কে ফুল বিক্রি করে সংসার চালানো শুভার। গত কয়েক দিনের হরতাল অবরোধের কারণে বিক্রি হয়নি তার কিনে আনা ফুল। লস গুণে অসহায় হয়ে পরেছেন গৃহহীন শুভা।
ছবি: বার্তা ২৪ শুভা বার্তা২৪.কমকে বলেন, রাস্তা-ঘাটে মানুষ থাকলে আমাদের বিক্রি হয়, না হলে নাই। যা পুঁজি ফুল কিনে সেটাই উঠাতে পারি নাই এই হরতালে,খামু কি? আমাগো(আমাদের) চিন্তা তো কেউ করে না। রাজনীতির জন্য আমাদের কপালে দুঃখ বেশি হচ্ছে। আমরা এগুলা বন্ধ চাই।
বাসে ফেরি করে পান বিক্রি করা লোকমান হোসেন বলেন, আমাদের বিক্রির জায়গা টাই তো বন্ধ অবরোধে। আমরা দিনে ৩০০-৪০০ টাকা বিক্রি করি, আজ ১০০ টাকা বিক্রি করতে পারিনি। জিনিসপত্রের যে দাম। এই আয় দিয়ে কি খাওয়া সম্ভব চারিদিক থেকে আমরা গরিব মানুষ মরতেছি। দেখার কেউ নাই।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন রাজধানীর পল্টন, গুলিস্থান ও বাইতুল মোকারম এলাকায় থাকে প্রায় ৫’র বেশি ভিক্ষুকের আনাগোনা ৷ ভাসমান মানুষ রয়েছে এসব এলাকায় প্রায় ২০ হাজারের বেশি ৷ যাদের সকলের একবেলা ভাতের উৎস শহরের বাসিন্দাদের টাকায় ৷ তবে হরতাল অবরোধে মানুষ আতঙ্কে বের না হওয়ায় অন্যের উপর নির্ভরশীল এসব অসহায় মানুষের দিন কাটছে অনাহারে অনাদরে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা প্রভাব ফেলছে এসব নিম্ন আয়ের মানুষের উপর। তবে অসহায় এই মানুষদের অর্থনৈতিক মুক্তি ও স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো জরুরি।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।