সারাদেশ

অর্থ কোন সমস্যা নয়: নসরুল হামিদ

ডেস্ক রিপোর্ট: চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৪। গল্প, উপন্যাস, কাব্য, সায়েন্স ফিকশন, শিশুতোষ বইসহ নানা রকম বই নিয়ে লেখকগণ বিভিন্ন প্রকাশনীর মাধ্যমে তাদের বই নিয়ে হাজির হচ্ছেন। তবে বইমেলায় সকল স্টল শুধু বই বিক্রির জন্যেই স্থাপন করা হয়নি। কিছু স্টল রয়েছে যেগুলো বই চর্চার আবহ তৈরির পাশাপাশি সাংস্কৃতিকভাবে মানুষকে চিন্তাশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে। তেমনই একটি স্টল হল ‘উন্মুক্ত লাইব্রেরি’ স্টল। ময়লার ভাগাড় পরিষ্কার করে তৈরি করা এ লাইব্রেরির স্টলটি নিয়ে লক্ষ্য করা গেছে পাঠকদের ব্যাপক কৌতুহল।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, কৃত্তিম একটি গাছ তৈরি করা হয়েছে স্টলে এবং সেখানে ‘উন্মুক্ত লাইব্রেরি’ লেখা আছে। তবে সেখানে নেই কোন বই, সেখানে রয়েছে লাইব্রেরিটির সম্পর্কে জানান দেয়া নানা রকম ক্যাটালগ।

একদল তরুণ উন্মুক্ত লাইব্রেরির স্টলটিতে দায়িত্বে আছেন এবং তারা বইমেলায় আসা পাঠকদের এই স্টলটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিচ্ছেন। সেখানে পাঠকগণ কৌতুহলী হয়ে শুনছেন ‘উন্মুক্ত লাইব্রেরি’ এর প্রতিষ্ঠা ও প্রতিষ্ঠাতার গল্প। তারা শুনছেন এই উম্নুক্ত লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা তানভীর হাসান সৈকত এর এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার পেছনের ইতিহাস।

এ স্টলটি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্টলের দায়িত্বরত কর্মী আরিফ ইশতিয়াক রাহুল বার্তা ২৪.কমকে বলেন, উন্মুক্ত লাইব্রেরি একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ। যার কারণে দর্শনার্থীদের মধ্যে খুব আগ্রহ লক্ষ্য করছি। মানুষ আমাদের স্টলে আসছে, ঘুরে দেখছে, আমাদের জিজ্ঞাসা করছে উন্মুক্ত লাইব্রেরি সম্পর্কে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমাদের স্টল পরিদর্শন করেছেন। আমাদের এই আন্দোলনের প্রশংসা করেছেন এবং চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছেন। এ ধরনের আন্দোলন বাংলাদেশে এটাই প্রথম। উন্মুক্ত লাইব্রেরি আন্দোলন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াটা গৌরবের।

উন্মুক্ত লাইব্রেরি’র সাধারণ সম্পাদক মোছাদ্দেক বিল্লাহ বার্তা ২৪.কমকে বলেন, এ বছর অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ এ আমরা প্রথমবারের মতো উন্মুক্ত লাইব্রেরির পক্ষ থেকে স্টল দিয়েছি। আমরা মূলত উন্মুক্ত পরিসরে বই পড়া, জ্ঞান চর্চার ধারনাটিকে জনপরিসরে ছড়িয়ে দিতে চাই। একইসাথে আবদ্ধ পরিবেশ কিংবা চার দেয়ালের বাহিরেও যে বই পড়া যায়, জ্ঞান চর্চা করা যায় সেই বিষয়টিকে আমরা প্রমোট করতে চাই৷ আমরা বিশ্বাস করি কৃষকের ফসলের ক্ষেতের পাশে, প্রান্তিক গ্রাম্য পরিবেশে, খোলা মাঠে কিংবা গাছপালার মাঝেও উন্মুক্ত লাইব্রেরি গড়ে উঠতে পারে, যেখানে মানুষ বই পড়বে, সংস্কৃতি চর্চা করবে৷ সেই জায়গা থেকে উন্মুক্ত লাইব্রেরি ধারনাটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আমরা বইমেলায় স্টল দিয়েছি৷ ”

উন্মুক্ত লাইব্রেরি’র প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত এই লাইব্রেরির ব্যাপারে বলেন, ইট-পাথর আর দেয়ালের ভৌত উন্নয়ন হয়তো উন্নতি মাপার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। তবে একটি রাষ্ট্র বা সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন নির্ভর করে মানুষের আত্মিক উন্নয়দের ভেতর মানুষের চিন্তার উন্নয়ন না হলে সমাজ বা রাষ্ট্র, তার বিকাশের চরম পর্যায় পৌছাঁতে পারেনা। আর সে উন্নয়নের অন্যতম লিটমাস টেস্ট হতে পারে মানুষের বই পড়ার অভ্যাস। বই মানুষকে জাগিয়ে তোলে, চিন্তা ও চেতনার পথকে প্রশস্ত করে এক নতুন দুনিয়ার সন্ধান দেয়।

উন্নততর সমাজে বই পড়া মানুষের প্রাত্যহিক জীবনেরই অংশ। সকালের নাস্তার সাথে ক্যাফে-রেস্তোরাঁয় কিংবা পার্কের বেঞ্চিতে বসে, দৈনন্দিন যাতায়াতে, গণপরিবহনে, অবসর আড্ডায় নিয়মিত অনুষঙ্গ বই। আমি স্বপ্ন দেখি আমাদের সমাজেও মানুষের আটপৌরে জীবনের অংশ হবে বই পড়া।

প্রসঙ্গত, উন্মুক্ত পরিসরে বই পড়া, মানুষের মধ্যে বই চর্চার আবহ তৈরির পাশাপাশি সাংস্কৃতিকভাবে মানুষকে চিন্তাশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি উন্মুক্ত লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *