খেলার খবর

মাসুদ পারভেজ রূপাইয়ের বই ‘ফ্যাবুলাস ফুটবল’

ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্বকাপ জয়, তাও আবার আর্জেন্টিনার! এ তো পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য্যজনক ব্যাপার। তা হয় নাকি, আমার এখনও মনে হয় ঐটা শুধুই দিবাস্বপ্ন। কিন্তু সত্যি-সত্যি ব্যাপারটা ঘটে গেছে। অর্থাৎ আর্জেন্টিনা এবং মেসি কাতার বিশ্বকাপ জিতেছে। শুরুতেই তাদের অভিবাদন। একটা বিশ্বকাপ জিততে তাদের এবং সমর্থকদের পাখির চোখ অবিশ্বাস্য!

কাতার বিশ্বকাপ মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম বিশ্বকাপ। আর সেখানেই আর্জেন্টিনা রচনা করল বিশ্ব ফুটবলের স্তুতিগাঁথা। তাছাড়া মেসির শেষ বিশ্বকাপ হওয়াতে তার দিকে পাদপ্রদীপের আলো ছিল স্বাভাবিকভাবে। এমনকি আলোচনা অনেক সময় আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিততে পারবে কিনা তার চাইতে মেসি বিশ্বকাপ জিততে পারবে কিনা সেটা মুখ্য হয়ে গিয়েছিল। কারণ সবারই জানা। তর্কাতীতভাবে যাকে গ্রেটেস্ট এভার ফুটবলার বলা হচ্ছে তার বিশ্বকাপ থাকবে না! কিন্তু মহাকাব্য রচনা করে মেসি-আর্জেন্টিনা কাতার বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে। অবশ্য আজকের লেখার কারণ তা নয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোন বাংলাদেশেও আর্জেন্টিনার অগণিত সমর্থক আছে। বিশেষ করে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের যে অভাবনীয় সমর্থন দেখা গেছে তা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে। সেই অগণিত (পাগলা) সমর্থকদের একজন মাসুদ পারভেজ রূপাই। যিনি কিনা আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়কে উপলক্ষ করে একটা আস্ত বই লিখে ফেলেছেন! অবিশ্বাস্য নয় তো কী! লেখক আর্জেন্টিনা সমর্থক তা আগে থেকেই জানি। এবং রূপাই মূলত কবি। কিন্তু তার যে ফুটবল নিয়ে দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা তা জানতাম না।

‘ফ্যাবুলাস ফুটবল’ মূলত সমর্থক হিসেবে রোলারকোস্টার অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ, যা লেখক নিজেই বলেছে। বইটা পড়ে আমারও একই অভিমত। একজন সমর্থক হিসেবে তার যে বেদনা, হতাশা ও অপ্রাপ্তি…সেখান থেকে বিশ্বকাপ জয় দেখতে পারাটা নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যের। লেখক তার যথার্থ প্রকাশ করেছে বইয়ে।

শুরুটা হোয়ান রোমান রিকুয়েলম নিয়ে। যাকে বলা হয়েছে—জীবনানন্দ দাশের লেখা দিয়ে; এই পৃথিবী একবার পায় তারে…তারপর কোপা আমেরিকা জয়ের স্মৃতি (যা কিনা আবার দীর্ঘ ২৮ বছর পর শিরোপা জেতা), মেসি ও বার্সেলোনার মহাকাব্যিক ফুটবলযাত্রা নিয়ে অসাধারণ একটা লেখনী দ্য স্কেচ অফ ফুটবল এবং ট্রিবিউট টু বার্সেলোনা, তারপর স্বাভাবিকভাবেই কাতার বিশ্বকাপ জয়ের তারকা এমিলিয়ানো মার্টিনেজ, ডি মারিয়াকে নিয়ে অনুভূতি এসেছে বইয়ে।

অবাক করার বিষয় হলো, স্কালোনিকে নিয়ে লেখাটা। দ্য ম্যান হু বিকামস মিথ লেখাটা স্কালোনির প্রজ্ঞা হয়তোবা বুঝাবে না, কিন্তু লেখায় ফিরে ফিরে এসেছে স্কালোনির শুরুর দিককার কথা। কী পরিমাণ সমালোচনা ও অবজ্ঞা সয়ে কোচ দলকে নিয়ে গেছে জয়ের নিশানায় তার কিঞ্চিৎ এসেছে বৈকি। যে দলটা আবার দীর্ঘ তিন দশক কোন শিরোপা জিততে পারেনি, সেই দলকে টানা তিনটা শিরোপা জিতিয়ে আনাটা অবিশ্বাস্য। বরং লেখক যদি শুধু খেলোয়াড়দের নিয়ে লিখে কোচকে এড়িয়ে যেতেন তা খুব দৃষ্টিকটু লাগতো। কিন্তু দুর্দিনের সমর্থক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করে লেখক তা করেননি। স্কালোনিকে নিয়ে লেখাটার জন্য মাসুদ পারভেজ রূপাইকে আলাদা করে ধন্যবাদ জানাতে হয়।

পুরো বইয়ে লেখক সমর্থক হিসেবে যে অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা অভিনব এবং ফ্যাবুলাস। এ ধরণের প্রয়াস কি আমাদের দেশে প্রথম! কিন্তু লেখক বলেছে—সমর্থক হিসেবে আর্জেন্টিনার কাতার বিশ্বকাপ জয়ে নিজেও রয়ে যাবে। এটা অবশ্য অস্বীকার করা যায় না। আর্জেন্টিনার সমর্থকরা দীর্ঘ সময় না জিতেও যেভাবে দলকে সমর্থন দিয়ে গেছে তাও একটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। এরিক ক্যান্টেনা যতই বলুক, দল পালটানো যায় না। কিন্তু এখানকার অস্থিতিশীল সমর্থকেরা কোন জাদুবলে দল পাল্টায়নি তা অবিশ্বাস্য! কেউ কেউ হয়তোবা চুপ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু দল ছেড়ে যায়নি। সে জায়গা থেকে মাসুদ পারভেজ রূপাইয়ের কাজটা দারুণ। এবং এটা একটা দীর্ঘশ্বাস থেকে বেরিয়ে ফুরফুরে বাতাসে শ্বাস নেওয়ার মতো। তাই, লেখক মুহূর্তটাকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছে, প্রকাশ করতে চেয়েছে নিজের অপ্রকাশিত অনুভূতি। এবং সেই কাজে লেখক টেন অন টেন।

বই সম্পর্কিত তথ্য
বইয়ের নাম: ফ্যাবুলাস ফুটবল
লেখক: মাসুদ পারভেজ রূপাই
প্রকাশক: পেন্ডুলাম পাবলিশার্স
স্টল নং: ২৭৬-২৭৭
মূল্য: ২৪০ টাকা।

মাসুদ পারভেজ রূপাই এবং তার ফ্যাবুলাস ফুটবল, দুইয়ের জন্য শুভকামনা। আশা করি ফ্যাবুলাস ফুটবল পাঠকপ্রিয়তা পাবে।

বিমান ধর: কথাসাহিত্যিক।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪ ডট কম-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *