সারাদেশ

গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের ২ ধাপ অবনতি

ডেস্ক রিপোর্ট: সদরঘাট দেশের অভ্যন্তরে সব থেকে বড় নদীবন্দর। দেশের ২২ জেলায় যাতায়াতের প্রধান নৌবন্দর হিসেবে ব্যবহার করা হয় সদরঘাটকে। আর এই নৌবন্দর ঘিরেই বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে উঠেছে জনপদ।

সদরঘাটের নাম শুনলেই নোংরা পানি, চুরি-ছিনতাই, দালাল হকারদের আবাসস্থল ছাড়াও যানজট আর বিরক্তির এক চিত্র ভেসে ওঠে। অনেকে হামেশাই সদরঘাট শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন উপহাস হিসেবে। তবে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে চিরচেনা এই এলাকার। গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে আধুনিক নদীবন্দর হিসেবে।

সদরঘাট ঘিরে গড়ে উঠেছে মনোরম রেস্টুরেন্ট সরেজমিন ওই এলাকায় দেখা গেছে, নৌবন্দরে বাড়ানো হয়েছে লঞ্চঘাট, বেড়েছে পন্টুন ঘাটের পরিধি। ফিটফাট পরিবেশ তৈরিতে যাত্রী ছাউনি ও লঞ্চ দাঁড়ানোর স্থানেও এসেছে বড় পরিবর্তন। ইতিমধ্যে নদীর দুই পাশের পন্টুন ১৩ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০টি। নৌকাডুবি প্রতিরোধে নিরাপদ দূরত্বে পৃথক নৌঘাট গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া যাত্রীদের সুবিধা দিতে সুসজ্জিত টার্মিনাল ব্যবস্থা ছাড়াও প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকায় ওই এলাকায় কমেছে দালাল ও কুলিদের দৌরাত্ম্য।

পদ্মাসেতু চাল হওয়াতে নৌপথে কমেছে ৬০ শতাংশ যাত্রী। ফলে সদরঘাট এলাকায় কমেছে ফুটপাতের দোকানপাট। এতে ৩০ শতাংশ যানজটও কমেছে ওই এলাকায়। সিটি করপোরেশনের বিশেষ নজর থাকায় ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ও চোখে পড়ে না সদরঘাট এলাকায়। দিন দিন সদরঘাট গড়ে ওঠছে সুন্দর নৌবন্দর হিসেবে।

স্থানীয়রা বলছেন, সময়ের সঙ্গে সদরঘাটের সৌন্দর্য বাড়ছে। দিন দিন তারকা মানের হোটেলসহ নানা স্থাপনা গড়ে ওঠছে ওই এলাকায়। বাকি দোকানপাট উচ্ছেদ করে সদরঘাটকে মেগা বা ডেল্টা প্রজেক্টের আওতায় এনে নদীদূষণ রোধ করে সৌন্দর্যবর্ধন করা গেলে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব বুড়িগঙ্গার তীরঘেঁষা এই এলাকাকে।

ঐতিহ্যবাহী বুড়িগঙ্গা আশিক আহম্মেদ নামের একজন পথচারী বলেন, সদরঘাটের এখন যা পরিস্থিতি তা আগের থেকে শতগুণ ভালো। তবে আশেপাশে কিছু দোকানপাট আছে সেগুলো সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করলে আরও ভালো হবে। আগের থেকে সদরঘাট অনেকটা পরিপাটি। যদি পানি পরিষ্কার করে নদীটি ড্রেজিং করা যায়, তাহলে সত্যি সদরঘাট হবে ফিটফাট সদরঘাট।

মিনতি রানী নামের এক নারী বলেন, আগে তো হাঁটাই যেত না। নোংরা, ময়লা, ধুলা সাথে যানজট। মানুষেরও গ্যাদারিং ছিল। এখন এতটা নাই। বাচ্চাদের নিয়ে হাঁটতে পারছি।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সদরঘাট নাসির হোসেন নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, যতটা আছে আরও ফিটফাট করা সম্ভব। তবে আধুনিকায়ন করতে আরও কিছু গ্যাপ আছে। আগের থেকে অনেকটা আপডেট হয়েছে। এখানে ভালো রেস্টুরেন্ট হয়েছে। মানুষজন আসছেন, এই এলাকায় সাবলীলভাবে চলতে পারছেন।

সুমাইয়া সুইটি নামের আরেক নারী বলেন, সদরঘাট এখন অত্যন্ত ভালো একটি জায়গা হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। আধুনিকায়ন করা গেলে বা ডেল্টা বা মেগা প্রকল্পের আওতায় আনলে এই এলাকাকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।

এদিকে, ফুটপাতের দোকানপাট কিছু কমলেও এখনো বেপরোয়া পন্টুনের উপরের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা। যত্রতত্র দোকান বসানোয় নানা অসুবিধায় পড়ছেন নৌপথের যাত্রীরা। পাশাপাশি পচা ফলমূল নদীতে ফেলায় দূষিত হচ্ছে নদীর পানিও। কিছু এলাকার রাস্তাঘাট নিয়ন্ত্রিত থাকলেও সদরঘাটের প্রবেশমুখে এখনো রয়েছে রাস্তা ও ফুটপাত দখলের চিত্র।

সদর ঘাটের রাস্তায় রিকশার জট ফুটপাত দখল ও যত্রতত্র দোকান গড়ে তোলার বিষয়ে কথা হয় ফুটপাত ও নৌঘাটে পন্টুনের কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তারা বলছেন, সিটি করপোরেশন ও প্রশাসনের চাপ আছে। তবে জীবিকার তাগিদে তা না মেনেই সেখানে ব্যবসা করছেন তারা। কেউ কেউ স্থানীয় সিন্ডিকেটের প্রভাবে ওই এলাকায় গড়ে তুলছেন ভ্রাম্যমাণ দোকান।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, সিটি করপোরেশনের চাপ আছে। কিন্তু আমরা তা মানি না। এখানে আমরা দৈনিক কিছু টাকা দিই। দিনে দু-আড়াইশত টাকা। লাইনম্যান আছে তারাই সব ম্যানেজ করে।

সদরঘাট দেখতে আসছেন বিদেশি পর্যটকরাও সদরঘাটের ৯ নং পন্টুনের সামনের দোকানদার শরিফ হোসেন বলেন, পুলিশ, সিটি করপোরেশনের লোক আসে। আমরা পালিয়ে লঞ্চে উঠি, চলে গেলে আবার বসি। কিছু করার নাই। আমাদের তো পেট চালাতে হবে, বাঁচতে হবে।

ফুল ব্যবসায়ী জাবেদ উদ্দিন বলেন, এখানে যদি বেচতে না পারি তো কই বেচমু। দোকান ভাড়া নেওয়ার টাকা নাই। তাই এখানেই করি। মাঝে মাঝে ৫০-৬০ টাকা দেই ঝাড়ুদারদের, এভাবেই চলে।

সদরঘাটের রাস্তা, ফুটপাত ও পন্টুনে গড়ে ওঠা দোকানপাট উচ্ছেদে কোন ব্যবস্থা আছে কিনা ও সদরঘাটের সৌন্দর্য বাড়াতে কোন প্রকল্প নেওয়া হবে কিনা জানতে একাধিকবার মোবাইলে কল দিলেও রিসিভ করেননি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।

ফুটপাত দখল করে ফলের দোকান এ বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় কাউন্সিলর আব্দুর রহমান মিয়াজীর সাথে। তিনি জানান, সদরঘাট এলাকাসহ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় যে-সকল ফুটপাত আছে সেগুলোতে দখলমুক্ত করতে অভিযান অব্যাহত আছে। মেয়রের নেতৃত্বে সদরঘাটের সৌন্দর্যবর্ধনে ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সদরঘাট ফিটফাট রাখার ঘোষণা দিয়ে গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নদী রক্ষায় সমাজে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আমাদের ব্যস্ততার কারণে ঢাকা সদরঘাটে অনেকেই দোকানপাট বসিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে। আমরা ব্যবস্থা নেব। সদরঘাট ফিটফাট ছিল, তেমনি থাকবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *