আন্তর্জাতিক

সর্বাধুনিক রাডার যুগে প্রবেশ করছে দেশ

ডেস্ক রিপোর্ট: পুরনো ও জরাজীর্ণ রাডার ব্যবস্থা থেকে শিগগিরই আধুনিক রাডার সিস্টেমে প্রবেশ করছে, বাংলাদেশ। বর্তমান রাডার সিস্টেমটি ঠিকমতো কাজ করে না। এছাড়া এটি নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা দিতেও ব্যর্থ হয়।

ঢাকা ও চট্টগ্রামে স্থাপিত আধুনিক দুটি রাডার পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবে ফ্রান্সের প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান থ্যালেস, যাতে বাণিজ্যিকভাবে তৃতীয় টার্মিনাল চালুর সাথে সাথে এই রাডার সিস্টেমটিও চালু করা যায়।

দেশের বিদ্যমান রাডার ও এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমটি চার দশক পুরনো। এই রাডারের মাধ্যমে পুরো দেশের আকাশসীমা নজরদারি করা যায় না। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের বিশাল এলাকাকে নজরদারিতে আনা সম্ভব নয়। কারণ, দেশের বঙ্গোপসাগর এলাকার আয়তন ২০০ নটিক্যাল মাইল বৃদ্ধি পেয়েছে। রাডার ব্যবস্থার এই সীমাবদ্ধতায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, বাংলাদেশ।

নতুন এই রাডার সরবরাহ করছে, ফ্রান্সের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থ্যালেস। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিমানবন্দরে যে রাডারটি বসানো হয়েছিল, সেটিও থ্যালেস সরবরাহ করেছিল।

বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, পুরনো রাডার সিস্টেমটি ঠিকমতো কাজ করে না। সে কারণে এয়ারট্রাফিক সঠিকভাবে ম্যানেজ (নিয়ন্ত্রণ) করা যায় না। মাঝে মাঝে এটি নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা দিতে ব্যর্থ হয়। সে কারণে রাডারের সঠিক সহায়তা ছাড়াই আমাদের উড়োজাহাজ অবতরণ করাতে হয়। এতে একটি উড়োজাহাজের অবতরণে অনেক বেশি সময় ব্যয় করতে হয়, একজন বৈমানিককে।

তিনি বলেন, রাডারটি যেহেতু ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত আকাশসীমা নজরদারি করতে পারে, তাই বঙ্গোপসাগরের একটি বিশাল এলাকায় বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) মনিটরিং এড়িয়ে যেতে পারে। এতে প্রতিটি ফ্লাইটে বাংলাদেশ সরকার প্রায় ৫০০ ডলারের ফ্লাইং ওভার চার্জ হাতছাড়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, নতুন রাডারের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। এখন যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে উন্নত প্রযুক্তির রাডারের বিকল্প নেই। কারণ, বিগত ২০ বছরে আকাশপথে যাত্রী বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বর্তমানে প্রতিদিন ৩০০-এর বেশি ফ্লাইট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওঠানামা করে। থার্ড টার্মিনাল হলে যাত্রী আরো বাড়বে।

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, যেসব উড়োজাহাজ বাংলাদেশের উপর দিয়ে চলাচল করে, সেগুলো এখন নজরদারিতে আসবে। তাছাড়া বাংলাদেশ ‘হাব’ হওয়ার ক্ষেত্রে আধুনিক রাডার ব্যবস্থা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

আরেক বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, আধুনিক এই রাডার সিস্টেমটি কোন উড়োজাহাজ কত উচ্চতা দিয়ে যাচ্ছে এবং ওই উড়োজাহাজের কল-সেন্টারসহ অনেক ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে। তাই, কেউ ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কম পাবে।

নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, আধুনিক রাডারকে অতি সত্বর চালু করে বাণিজ্যিক এয়ারলাইন্সগুলোকে যাতে দ্রুত সেবা দেওয়া যায়, সে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। নতুন প্রযুক্তির রাডার না থাকায় কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। এই রাডারের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোসহ নজরদারি বাড়ানো যাবে।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, বেবিচককে ‘হাব’ বাস্তবায়ন করতে হলে উড্ডয়ন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। এরই অংশ হিসেবে আধুনিক রাডার সিস্টেমের আওতায় আসছে দেশ। শুধুমাত্র যাত্রী থাকলেই নতুন নতুন এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে আসবে না; এর জন্য প্রয়োজন নিরাপদ ফ্লাইট অপারেশন আর এক্ষেত্রে আধুনিক রাডার সব ধরনের সহায়তা দেবে।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে দেশে উত্তর ও পশ্চিমে আরও দুটি রাডার বসানো হবে। তখন পুরো দেশের ওপর উড়োজাহাজের গতিবিধি নজরদারি করা যাবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *