আন্তর্জাতিক

২০২৫ সালের মধ্যেই বার্ন ইউনিট পাচ্ছে চট্টগ্রামবাসী

ডেস্ক রিপোর্ট: আগামী ২০২৫ সালের মধ্যেই চট্টগ্রামের মানুষ পরির্পূণ বার্ন ইউনিট পাবেন-এমন আশার কথা শুনিয়েছেন সারাদেশে বার্ন চিকিৎসা সম্প্রসারণে সমন্বকের দায়িত্বে থাকা ডা. সামন্ত লাল সেন। প্রখ্যাত এই চিকিৎসক বলেছেন, ‘আশা করি ২০২৫ সালের মধ্যে একটি ভালো কিছু পেতে চলেছি। আমার জীবদ্দশায় এই প্রকল্পটি যেন দেখে যেতে পারি। চট্টগ্রামের জন্য এটি একটি বিরাট স্বপ্ন। আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীদের আর ঢাকা যেতে হবে না। তারা চট্টগ্রামেই আধুনিক বার্ন চিকিৎসা পাবেন।’

বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের জন্য প্রস্তাবিত গোঁয়াছিবাগান এলাকা পরিদর্শনের সময় এসব কথা বলেন ডা. সামন্ত লাল সেন। এই ইউনিটটি হবে চীনের অর্থায়নে। দেশটির ৫ সদস্যর প্রতিনিধি দল ও চমেক হাসপাতালের পরিচালসকসহ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রামের প্রতি আলাদা একটা ‘সফট কর্নার’ রয়েছে উল্লেখ করে ডা. সামন্ত লাল সেন আরও বলেন, ‘আমি এই মেডিকেল কলেজের (চমেক) ছাত্র। এখানে একটি বার্ন ইউনিট করতে প্রায় ১২ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অবশেষে স্বপ্ন সার্থক হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প এটি। তিনি কিছুদিন আগেও এই প্রকল্পের কাজ শুরু করার কথা বলেছেন। প্রকল্পটি নিয়ে আগামী সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জরুরি সভা আছে।’

চীনের প্রতিনিধি দলের এক সদস্যও এসময় বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বার্ন ইউনিটের জন্য প্রায় সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পূর্ণ। এই মাসের মধ্যে বার্ন ইউনিটের সরঞ্জাম, আসবাবপত্র আনা হবে।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চীনের প্রতিনিধি দলের এই সদস্য আরও বলেন, ‘খুব আন্তরিকতার সঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক বিষয়টি দেখছেন। শুরুতে এই জায়গায় অনেক স্থাপনা ছিল। কিন্ত তা এখন নেই। সমস্ত কিছু পরিষ্কার করে অবকাঠামোর নির্মাণের জন্য তৈরি করে রেখেছেন তিনি। সেজন্য আমরা দ্রত কাজ শুরু করতে পারছি।’

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, বার্ন ইউনিট হচ্ছে চীনা অর্থায়নে। অর্থাৎ তারা হাসপাপাতালটির ভবন নির্মাণ, মেশিনারি এবং ফার্নিচার দেবে। ওষুধ ও জনবল আমাদের দিতে হবে। তার জন্য ইতিমধ্যে জনবল কত লাগবে, ওষুধের নানান তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আশা করছি এটা দ্রত অনুমোদন হয়ে যাবে।

হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, চীনা প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন আগামী তিন মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে। এই প্রকল্পের জন্য তারা ১২০ কোটি টাকা অনুদান দিচ্ছে। তারা আগামী বছরের জানায়ারি অথবা ফেব্রুয়ারি নাগাদ কাজ শুরু করবে। আশা করি ২০২৫ সালের মধ্যে হাসপাতালটি আমরা পাবো।

গত ৭ বছর ধরে চমেক হাসপাতালে চীনের অর্থায়নে একটি বার্ন হাসপাতাল নির্মাণ করতে একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রকল্প স্থানও পরিদর্শন করা হয়। কিন্তু জায়গা বরাদ্দসহ নানা প্রতিকূলতায় সেই নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। ২০১৬ সালে চমেক হাসপাতাল এলাকায় সম্ভাব্য জায়গা পরিদর্শন করে চীন সরকারের একটি প্রতিনিধি দল। পরিদর্শনে তারা হাসপাতালের বর্তমান বার্ন ইউনিটের পেছনের খালি জায়গায় বিশেষায়িত এ ইউনিট নির্মাণ করার কথা জানালে তখন সম্মতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দিয়ে সম্মতির কথা জানানো হয়। পরে হাসপাতালের নকশাও তৈরি করে তারা। কিন্তু দ্বিতীয়বার এসে পরিমাপ করে জায়গা কম পাওয়ায় এ নিয়ে নানা জটিলতা দেখা দেয়। সর্বশেষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারিতে চমেক হাসপাতালে প্রকল্প স্থান পরিদর্শন করে ৫ সদস্যের চীনা প্রতিনিধি দল। তারা প্রকল্প এলাকায় পরিদর্শনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এতে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেন চীনা দল। এদিন বার্ন হাসপাতালের জন্য নির্ধারিত গোয়াছি বাগানের জায়গাটি পরিদর্শন করে প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করেন। বাকি শুধু চুড়ান্ত চুক্তি হওয়ার। চুক্তি হলেই অবকাঠোমো নির্মাণের কাজ শুরু হবে। 

চমেক হাসপাতালে পেছনে গোঁয়াছিবাগান এলাকায় প্রায় এক একর জায়গায় নির্মাণ হবে বার্ন ইউনিট। ইউনিটটিতে ১৫০টি শয্যা থাকবে। তার মধ্যে ২০টি আইসিইউ, শিশুদের জন্য ৫টি আইসিইউ, এইচডিইউ ২৫টি, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার করা হবে ২টি। রোগী আনা নেওয়ার সুবিধার জন্য তিনটি রাস্তা বানানো হবে। চট্টেশ্বরী রোডের দিক থেকে একটি রাস্তা হবে। সেটি হবে বার্ন হাসপাতালের প্রধান রাস্তা। চমেক হাসপাতালের পেছনে ছাত্র হোস্টেলের দিক থেকে আসবে আরও একটি রাস্তা। সর্বশেষ রাস্তাটি হবে মিজান হোস্টেলের দিক দিয়ে। সেখানে মাঝখানে পাহাড় থাকায় তা ঘুরিয়ে ওয়ার সিমেট্রি হয়ে আনা হবে।

হাসপাতালটি ৬তলা ভবনের করা হবে। প্রথম তলায় থাকবে জরুরি বিভাগ এবং ওপিডি (বহির্বিভাগ), দ্বিতীয় তলায় তিনটি ওটি (অপারেশন থিয়েটার) এবং তলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), তৃতীয় তলায় পুরোটা হাই ডিপেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), ৪র্থ এবং ৫ম ওর্য়াড, ৬ষ্ঠ তলায় ওয়ার্ড ও অফিস।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *