সারাদেশ

চট্টগ্রামে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ‘বিজনেস রিভিউ মিটিং’ অনুষ্ঠিত

ডেস্ক রিপোর্ট: রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে (ইআরএল) অর্থায়নের অভাবে দেশের তেল পরিশোধন সক্ষমতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। তবে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান ও দেশের বৃহৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের সাথে অংশীদারিত্বে দীর্ঘ-পরিকল্পিত দ্বিতীয় ইউনিট তেল শোধনাগার নির্মাণ শুরু হতে যাচ্ছে। ডিজেল আমদানির চাহিদা কমিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনেক সম্ভাবনা তৈরি করতে চলেছে সরকার। যাতে যৌথ অংশীদার হয়ে পাশে থাকছে এস আলম গ্রুপ।

চট্টগ্রামে অবস্থিত দেশের একমাত্র জ্বালানি পরিশোধনাগারটির বার্ষিক পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন। এটি পরিচালনা করে জ্বালানি বিভাগের অধীন থাকা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) প্রতিষ্ঠান ইআরএল। নতুন প্রকল্পে ৩০ লাখ টন সক্ষমতার আরেকটি ইউনিট করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। ২০১২ সালে ‘ইনস্টলেশন অব ইআরএল-২’ নামের প্রকল্পটি নেওয়া হয়। প্রায় এক যুগেও তা যখন বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয় তখন সরকারের পাশে দাঁড়ালো এস আলম গ্রুপ। গ্রুপটির সঙ্গে যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। সমঝোতা স্মারকের খসড়া পর্যালোচনা করতে কমিটি গঠন করে দিয়েছে বিপিসি। কমিটির প্রতিবেদনের পর বিপিসি সিদ্ধান্ত দেবে।

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামে ইআরএল-এর মালিকানাধীন জমিতে ৮০-২০ ইক্যুইটির ভিত্তিতে শোধনাগারটি নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। পরে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি গ্রুপটি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে একটি খসড়া চিঠি পাঠায়। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি, জ্বালানি বিভাগ ইআরএল-এর মূল কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে চিঠি দিয়ে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এজন্য সরকারি সংস্থাটিকে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করতে বলেছে।

অর্থনৈতিক পরাশক্তি হওয়ার দৌড়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখছে এস আলম গ্রুপ বেজা’য় ৫০ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থান করবে এস. আলম গ্রুপ বাজার স্থিতিশীল করতে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়াচ্ছে এস আলম গ্রুপ দেশকে বিশ্বমানের ইস্পাত ও সিমেন্ট উৎপাদনে গর্বিত করল এস আলম গ্রুপ সিদ্ধান্তটি এগিয়ে নিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিপিসির তিনজন কর্মকর্তা, তিনজন ইআরএল কর্মকর্তা এবং পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সমন্বয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান থাকবেন বিপিসির ডিরেক্টর ফর অপারেশনস মো. খালিদ আহমেদ। আলোচনা শেষ করতে কমিটির এক মাস সময় লাগবে বলে বিপিসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মন্ত্রনালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিগত ও আর্থিক বিশ্লেষণ, যৌথ উদ্যোগের রূপরেখা, ব্যবস্থাপনা কৌশল এবং ইক্যুইটি অংশ সম্পন্ন করার পরে আলোচনা সম্পন্ন করা হবে। বিপিসি চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিক বলেন, এস আলমের অনুমান অনুযায়ী, শোধনাগারটি নির্মাণের জন্য প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার (৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি) বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।

আমরা শোধনাগার স্থাপনের প্রস্তাব ও রোডম্যাপ জমা দিয়েছি। সরকারও সম্মত হয়েছে এবং একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, বলেন তিনি।

ইআরএলের প্রাথমিক প্রস্তাব অনুযায়ী, দ্বিতীয় ইউনিটটির ৩০ লাখ টন তেল পরিশোধন করার ক্ষমতা থাকার কথা ছিল। এস আলম জানাচ্ছে, শোধনাগারের ৫০ লাখ টন তেল পরিশোধনের ক্ষমতা থাকবে।

এর আগে ১৫ লাখ টনের বর্তমান পরিশোধনাগারটি ১৯৬৮ সালে নির্মাণ করেছিল ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান টেকনিপ। নতুন পরিশোধনাগারও তাদের মাধ্যমে করার নীতিগত অনুমোদন দেয় সরকার।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৭০ লাখ টন পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা রয়েছে, যার ৮০ শতাংশই অপর্যাপ্ত পরিশোধন সুবিধার কারণে পরিশোধিত আকারে আমদানি করা হয়। পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য যেমন ডিজেল, পেট্রোল এবং জেট ফুয়েলের দাম বেশি, যার অর্থ দেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে।

স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে দ্বিতীয় ইউনিট তৈরি করার জন্য ইআরএল-এর বিডটি ২০১২ সালে কল্পনা করা হয়েছিল। তখন প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় ছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু তহবিল সংক্রান্ত সমস্যার কারণে প্রকল্পটি তখন থেকে অচলাবস্থায় রয়েছে। সরকার এই প্রকল্পের জন্য বিদেশি ঋণ সুরক্ষিত করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তার প্রচেষ্টা সফল হয়নি।

এ ঘটনা সরকারকে নিজস্বভাবে শোধনাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিতে অনুপ্রাণিত করে। বর্তমানে মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প ব্যয়ের ৭০ শতাংশ ঋণ দেওয়া হবে বিপিসিকে। বাকি অংশ বিপিসি নিজে বহন করবে।

ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. লোকমান বলেন, তিনি সিদ্ধান্তের কথা শুনেছেন তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চিঠি পাননি। তিনি বলেন, আমরা আমাদের চূড়ান্ত প্রস্তাব অনেক আগেই জ্বালানি বিভাগে পাঠিয়েছিলাম, যাতে এটি একনেক-এর সামনে রাখা হয়। পরবর্তী সংশোধনের পর গত বছরে ব্যয় দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা।

সর্বশেষ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুযায়ী অর্থ বিভাগ ১৬ হাজার ১৪২ কোটি টাকা এবং বিপিসি ৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করতে সম্মত হয়েছে। বাকি ৪৯৩ কোটি টাকা কীভাবে জোগাড় করা হবে তা এখনও ঠিক হয়নি।

যদিও ইআরএল-এর মূল পরিকল্পনাটি এখনও পরিত্যাগ করা হয়নি, সরকার যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য এস আলমের প্রস্তাবকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। গত বছরের নভেম্বরে বেসরকারি খাতে জ্বালানি তেলের বাজার উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্তের পর সরকার সাম্প্রতিক অবস্থানে এসেছে। বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানিও প্রথম বেসরকারি শোধনাগারের মালিক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

উল্লেখ্য, দেশে জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়াতে না পারায় ডিজেল আমদানি করতে হচ্ছে বেশি। ইআরএল-২ বাস্তবায়নে প্রায় ১৯ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে শোধনাগার চালুর পর মাত্র ৪ বছর ৯ মাসের মধ্যে এ টাকা উঠে আসবে বলে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) জানানো হয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *