সারাদেশ

ভারতের কঠিন শর্তে কমেছে আমদানি, নিত্যপণ্যের চড়া দাম

ডেস্ক রিপোর্ট: রোজায় বাজার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ছোলা, পেঁয়াজ ও তেলসহ আট ধরনের খাদ্যপণ্যে শুল্কমুক্ত আমদানির সুযোগ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ অংশে কিছুটা জটিলতা ও ভারত অংশে খাদ্যদ্রব্যের উপর বিভিন্ন শর্ত ও নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘদিন ধরে বহাল থাকায় সরকারের এ সুযোগ সবক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারছেননা আমদানিকারকেরা।

এতে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছেনা দেশের নিত্যপণ্যের বাজার। ভারতের কঠিন শর্তে চলতি অর্থবছরের ৬ মাসের আমদানি, আগের অর্থবছরের একই সময়ের ৬ মাসের তুলনায় কমেছে ১ লাখ ৬১ হাজার ১০৪ মেট্রিক টন। তবে বাণিজ্যিক সংশিষ্টরা বলছেন আমদানি সহজ হলে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে নিত্যপণ্যের দাম অনেকটা কমে আসবে।

বাণিজ্যিক সংশিষ্টরা জানান, বৈশ্বিক মন্দা আর সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে প্রতিদিন লাগামহীনভাবে বাড়ছে নিত্য খাদ্যপণ্যের দাম। আর এ অবস্থার মধ্যে আগামী মাসেই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। তবে এসময় নিম্ন আয়ের মানুষ যাতে কম মূল্যে তাদের প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য ক্রয় করতে পারেন, তাই সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ীদেরকে বাকিতে নিত্য প্রয়োজনীয় ৮টি খাদ্যপণ্যে শুল্কমুক্ত আমদানির সুযোগ। পণ্যসমূহ হলো- খেজুর, চিনি, তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, ডাল, মটর ও মসলা জাতীয় খাদ্য।

এছাড়া চাল, পেঁয়াজ, চিনির উপর থেকেও আমদানি শুল্ক কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। খেজুর, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি, চাল ও ভোজ্যতেলের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। এতে খেজুরের আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। যা আগে ছিল ২৫ শতাংশ। অপরিশোধিত প্রতি টন চিনিতে এতদিন আমদানি শুল্ক ছিল ৩ হাজার টাকা। সেটি কমিয়ে এখন এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া চালের ওপর আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ শতাংশ; যা এতদিন ছিল ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে পাম অয়েলের আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ছিল ১৫ শতাংশ, সেটি কমিয়ে পাঁচ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে ইফতারের জন্য প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল, দুই লাখ মেট্রিক টন চিনি এবং ১ লাখ মেট্রিক টন ছোলার চাহিদা রয়েছে।

এদিকে এখন পর্যন্ত সব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সরকারি নির্দেশনা না আসায় অনেক আমদানিকারকেরা সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া ভারত অংশে খাদ্যদ্রব্যের উপর নানান শর্ত বছরেরও বেশি সময় ধরে বহাল রয়েছে। এতে এসব পণ্য আমদানি নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

খাদ্যদ্রব্য আমদানিকারক উজ্বল কুমার বিশ্বাস জানান, ‘আমরা চাহিদামত খাদ্যদ্রব্য আমদানি করতে না পারায় খাদ্য ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। আমদানি স্বাভাবিক হলে এ সংকট কাটবে।’

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, খাদ্যদ্রব্যের বাজার স্বাভাবিক করতে ও আমদানি বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা কাটাতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। 

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোনিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল জানান, ‘ভারতের সাথে বছরে ১৪ লাখ বিলিয়ন ডলারের আমদানি ও ২ লাখ বিলিয়ন ডলারের রফতানি বাণিজ্য হয়। ভারত পাশে থাকলে দেশে খাদ্যদ্রব্যের যেকোন সংকট মোকাবিলা সহজ হবে।’

বেনাপোল আমদানি রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, ‘২০২২ সালের  ২০ জুলায় দেশের বাইরে সিদ্ধ ও আতব চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। একই বছরের ১৩ মে থেকে দেশটি গমের এলসি নিচ্ছে না। গত বছরের ১৯ আগস্ট  পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং রফতানি মূল্য ১৫০ ডলার থেকে ৮৫০ ডলারে উন্নীত করায়-সেই থেকে পেঁয়াজের স্বাভাবিক আমদানি বন্ধ রয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারী মিলস এ্যাসোসিয়েশনের একটি অভিযোগ দায়েরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে চিনি আমদানি বন্ধ রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীরা আমদানির সুযোগ পেলে বাজারে পণ্যের দাম কমবে।’  

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ এ্যাসোনিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, বাণিজ্যিক সব ব্যাংকগুলোতে নিত্যপণ্য আমদানিতে সরকারের নির্দেশনা না পৌঁছানোয় ব্যবসায়ী সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে। 

বেনাপোল বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার জানান, অনেক দিন ধরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে চাল, চিনি, গত, রসুন ও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে। 

এদিকে আমদানিতে ভারতের কঠিন শর্ত আর নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬ মাসের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৬ মাসে বেনাপোল বন্দরে খাদ্য দ্রবের আমদানি কমেছে ১ লাখ ৬১ হাজার ১০৪ মেট্রিক টন। খাদ্য সংকট বেড়েছে ও মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে পেঁয়াজ দেশিয় খুচরা বাজারে কেজি প্রতি ৯০ টাকা হয়েছে। অন্যদিকে চিনি ১৫০ টাকা, গম ৫০ টাকা, রসুন ২৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি চালে দাম বেড়েছে ৫ টাকা পর্যন্ত।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *