আন্তর্জাতিক

শহীদ মিনার ছাড়াই শিক্ষার্থীরা স্মরণ করবে ভাষা শহীদদের!

ডেস্ক রিপোর্ট:  

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার ছাড়াই স্মরণ করবে ভাষা শহীদদের। স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪ যথাযথ ভাবে উদযাপনের জন্য মন্ত্রণালয় নির্দেশানা দিলেও উপজেলায় তিন চতুর্থাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার। ফলে বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই দিবসটি পালন করবে দায়সারা ভাবে।

উপজেলায় ১৪৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৪৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে শহীদ মিনার। ১০৬টিতেই নেই ভাষা শহীদদের স্মরণ করার শহীদ মিনার। তবে দিনটি যথাযথ পালনের লক্ষ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন উপজেলা প্রশাসন।

উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বালিয়াকান্দি উপজেলায় মোট ১৪৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৯৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে মাত্র ১৯টিতে, ৩২ টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ১৯ টি। অন্যদিকে ১২ টি মাদ্রাসার মধ্যে একটিতেও নেই শহীদ মিনার। নেই সরকারি টেকনিক্যাল স্কুলেও। তবে ৫টি কলেজের মধ্যে প্রতিটি কলেজেই রয়েছে শহীদ মিনার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানান, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) রূপক রায় ও ১৮ ফেব্রয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারি পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) মো: নজরুল ইসলাম একটি চিঠি ইস্যু করেছেন। তাতে নির্দেশ প্রদান করা হয় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্ব স্ব কর্মসূচি প্রণয়নপূর্বক দিবসটি উদযাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা জানান, তারা ইতোমধ্যে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে দিবসটি যথাযথ পালনের নির্দেশনা পেয়েছেন। কিন্তু শহীদ মিনার না থাকায় তারা কোন রকম দিবসটি পালন করবেন। আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে তাদের আয়োজন। তবে কেউ কেউ আবাার কলাগাছ দিয়ে অস্থায়ী ভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে স্মরণ করবে ভাষা শহীদদের।

সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, বেশির ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকলেও তারা প্রতি বছর নিজ উদ্যোগে দিবসটি পালন করে থাকেন। কোন কোন প্রতিষ্ঠান তাদের কাছের দূরত্বের কোন শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ বছরও প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্ব স্ব আয়োজনের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের স্মরণ করবে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পারমিস সুলতানা বার্তা২৪.কমকে জানান, বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকার বিষয়টি ইতোমধ্যে তার কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট ঊর্দ্ধত্বন কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে অবগত করেছেন। প্রতিটি বিদ্যালয়ই তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করবে শিক্ষার্থীরা।

বালিয়াকান্দি উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতে দ্রুত শহ্যীদ মিনার নির্মাণ হয় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, তিনি আশা করছেন খুব দ্রুতই প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ হবে।

সরকারি ভাবে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানিয়ে কবি ও গীতিকার সুজয় কুমার পাল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার এত বছর পরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকাটা দু:খজনক। একুশ বাঙালি জাতির অহংকার। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ভাষা আন্দোলন নিয়ে গর্ব করবে। সারা বিশ্ব যেখানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করবে সেখানে আমার দেশেই ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকবে না তা মেনে নেওয়া কষ্টের।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *