আন্তর্জাতিক

মিয়ানমার সীমান্তে আর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না: আশা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

ডেস্ক রিপোর্ট: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আশা প্রকাশ করেছেন, মিয়ানমার সীমান্তে ইতিপূর্বে যে ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেই ধরণের পরিস্থিতির আর উদ্ভব হবে না।

একইসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের পক্ষে আর কোনো রোহিঙ্গাকে গ্রহণ কিংবা আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের দেশে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। প্রতিবছর ৩৫ হাজার নতুন রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণ করে, অর্থাৎ প্রতিবছর এই সংখ্যাটা বাড়ছে।

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি শিরীষ তলায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত অমর একুশে বই মেলায় ‘মহান একুশে স্মারক সম্মাননা পদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যশেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এই আশাবাদের কথা জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেসব রোহিঙ্গাদের ইতিপূর্বে মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে কিভাবে ফেরত পাঠানো যায় আমরা সেটা নিয়েই কাজ করছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সমস্ত রাষ্ট্রসমূহের সহায়তা কামনা করেছি, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সরকারের ওপর যাতে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করা হয়। সেজন্য ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চায়নাসহ বিভিন্ন দেশের সাথে আমরা আলাপ আলোচনা করেছি।

মিয়ানমারের জান্তা সরকার সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে তারা আবারও অভিযান চালাবে, অনেক রোহিঙ্গা সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে, সরকার এই পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আপনারা জানেন ক’দিন আগে আমাদের প্রধানমন্ত্রী মিউনিখে সিকিউরিটি কনফারেন্সে গিয়েছিলেন, সেখানেও আমরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সাথে আলোচনা করেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের যে প্রতিনিধি দল আসছে, এটি আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও গভীরতর করার ক্ষেত্রে সহায়ক। সেখানে নিশ্চিতভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আমরা আলোচনা করব।

তিনি বলেন, রাখাইনে অভিযান পরিচালনা করাটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, কিন্তু সেটির কারণে আমাদের এখানে উত্তেজনা ইতিপূর্বে তৈরি হয়েছে এবং সেখানকার মর্টারশেল আমাদের দেশে এসে পড়েছে, দুইজন নিহতও হয়েছে। ৩৩০ জনের মতো তাদের সেনা ও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য আমাদের দেশে এসেছিল, তারা আবার তাদেরকে ফেরত নিয়ে গেছে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে সেটির প্রতিবাদ আমরা জানিয়েছি। সুতরাং আমরা আশা করব ইতিপূর্বে যে ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সেই ধরণের পরিস্থিতি আর উদ্ভব হবে না।

বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খাঁন বলেছেন গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে সরকার পরিবর্তন অবশ্যই হবে – এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার পরিবর্তন করতে হলে বিএনপিকে আগামী ২৯ সালের নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, তখন জনগণ যাদেরকে ভোট দিবে তারাই সরকার গঠন করবে। এতদিন ধরে বিএনপি যে আন্দোলন করেছে সব পরীক্ষায় তারা ফেল করেছে। এখন তারা আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুক, আরও বেশি করে পড়াশোনা করুক, তারপর আমরা দেখব তারা কি করে। অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করার ক্ষেত্রে সরকার কাউকে বাধা দেবে না। কিন্তু বিএনপি ইতিপূর্বে আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা নৈরাজ্য করেছে, সেগুলো আর করতে দেওয়া হবে না।

বই মেলার একুশে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করার পর ছাত্রলীগ প্রথম যে ১০ দফা দেয়, সেই ১০ দফার মধ্যে অন্যতম দফা ছিল বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে এবং সেই ১০ দফার ভিত্তিতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তরুণ নেতা শেখ মুজিবসহ ছাত্র নেতারা জেলায় জেলায় সফর করেছিলেন। এই ইতিহাসগুলো অনুম্মোচিত রয়ে গেছিল, আজকে সেগুলো ধীরে ধীরে উম্মোচিত হচ্ছে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করছিলেন পাকিস্তান রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে বাঙালি জাতির মুক্তি নিহিত নেই।

চট্টগ্রাম বইমেলাকে আন্তর্জাতিকীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ঢাকা এবং পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, আগরতলা, আসামসহ তাদের গুনীজন এবং প্রকাশকদের ডেকে আনতে হবে, তখন এই মেলার আন্তর্জাতিকীকরণ হবে। ইংল্যান্ডে ইংরেজি ভাষায় যখন কোন বই প্রকাশিত হয়, সেটি একইসাথে নিউইয়র্ক, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডেও হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সেটি হয় না। কলকাতায় একটি বই প্রকাশিত হলে সেটি একইসাথে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে একসাথে হয় না।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অমর একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। সম্মাননাপ্রাপ্তদের মধ্যে অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন নাট্যকলায় সম্মাননা পাওয়া শিশির দত্ত, কবিতায় সম্মাননা পাওয়া আবসার হাবীব।

এবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) একুশে স্মারক সম্মাননা পদক ও সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন: মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনে শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী (মরণোত্তর), শিল্প উন্নয়ন ও সমাজসেবায় মো. নাছির উদ্দিন (মরণোত্তর), চিকিৎসায় প্রফেসর ডা. মো. গোফরানুল হক, নাট্যকলায় শিশির দত্ত, সংস্কৃতিতে শ্রেয়সী রায়, শিক্ষায় প্রফেসর প্রদীপ ভট্টাচার্য, সংবাদপত্র শিল্পের বিকাশ ও মানোন্নয়নে সুপ্রভাত বাংলাদেশ সম্পাদক রুশো মাহমুদ, সাংবাদিকতায় জসীম চৌধুরী সবুজ, ক্রীড়ায় জাকির হোসেন লুলু, স্বল্পদের্ঘ্য চলচিত্র নির্মাণ ও গবেষণায় শৈবাল চৌধুরী, লোকসাহিত্য ও গবেষণায় শামসুল আরেফীন, প্রবন্ধে শামসুদ্দিন শিশির, কবিতায় আবসার হাবীব ও ভাগ্যধন বড়ুয়া, শিশু সাহিত্যে ছড়াকার অরুণ শীল ও শিবু কান্তি দাশ।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *