কুষ্টিয়ার নদী ভাঙন রক্ষা বাঁধ একনেকে পাশ
ডেস্ক রিপোর্ট: পদ্মা নদীর ভাঙনে ফসলী জমিসহ বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে গেছে অনেকের। বাপ-দাদার পৈত্রিক ভিটা হারিয়ে নি:স্ব হয়েছে অনেকেই। নদীর তীর ভাঙতে ভাঙতে মহাসড়কের ধারে চলে এসেছে। এতে অসহায় হয়ে পড়েছেন নদী পাড়ের মানুষেরা । অবশেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১৪’শ কোটি টাকার পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার্থে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়ীয়া বহলবাড়ীয়া ও বারুইপাড়া ইউনিয়নে ব্লক প্রতিরক্ষামূলক প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে।
এতে স্থানীয়দের যেন আনন্দের শেষ নেই। নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লসিত করে আনন্দ মিছিল করেছে তারা।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সকালে মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের মীর আব্দুল করিম কলেজে মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে কৃতজ্ঞতা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এছাড়াও পদ্মাপাড়ের হাজারো নদী ভাঙা পরিবার আনন্দ মিছিল-শোভাযাত্রা করেন। এ সময় তারা মিষ্টি বিতরণও করেন।
তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ’র প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এছাড়াও আনন্দ মিছিলের পাশাপাশি মসজিদে দোয়া-মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শুকরিয়া আদায় করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী।
মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামারুল আরেফিনের সার্বিক তত্বাবধানে, বারুইপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম মন্টুর সভাপতিত্বে এবং বারুইপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হক মোমিনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসানুল আসকর হাসু, জেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম, মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম, সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম, মিরপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জোয়ার্দার, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক, সাধারন সম্পাদক শেখ হাফিজুর রহমান চ্যালেঞ্জ ,তালবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হান্নান, বহলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম মানিক, তালবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌসিফ আহম্মেদ সোহান প্রমুখ।
ভাঙনের শিকার আব্দুল বারেক বলেন, আমি দুইবার ভাঙনে সব হারিয়ে ফেলেছি। মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলেছে অন্যের স্থানে। এই প্রকল্প পাশ হওয়ায় নতুন করে স্বপ্ন দেখছি বেঁচে থাকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমাদের এমপি উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপি হানিফসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
আনন্দ মিছিলে অংশ নেওয়া করিম মাঝি বলেন, আমাদের একটাই দাবি ছিল নদী ভাঙন রোধ করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ ও মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফীন মহোদয়ের সহযোগিতায় আজ প্রকল্প পাশ হয়েছে। আমর সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই। সবার জন্য মুনাজাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করব।
মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফীন বলেন, আমার উপজেলার বহলবাড়ীয়া, তালবাড়ীয়া ও বারুইপাড়া ইউনিয়নের মানুষের আনন্দের শেষ নেই। দীর্ঘ দিন পর নদী ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের স্বপ্নের দাবি পূরণ হয়েছে। যেহেতু আমার এই উপজেলার উপর দিয়েই উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের মহাসড়ক দিয়ে হাজারো যানবাহন চলাচল করে থাকে। পদ্মা নদী ভাঙ্গতে ভাঙতে এই মহাসড়কের কাছে চলে এসেছে। যার ফলে নদী ভাঙনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকেই। তিনি আরও বলেন, কাজ শুরুর পর স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হলে এলাকার মানুষ নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাবে।
আনন্দ মিছিল ও শোভাযাত্রায় মিরপুর উপজেলার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাশিদুর রহমান বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙ্গন হতে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলাধীন তালবাড়িয়া এবং কুমারখালী উপজেলাধীন শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দি এলাকা রক্ষা প্রকল্প; ব্যয় ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছে। ফলে প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত অবকাঠামোসহ বিস্তীর্ণ এলাকা নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে। পানিসম্পদ মন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে খুব দ্রুত দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে নদী ভাঙন রোধে কাজ করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।