সারাদেশ

বিমানের টিকিট নিয়ে ট্রাভেল এজেন্সির প্রতারণা, কানাডায় বিপাকে ব্যবসায়ী

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজধানীর তেজগাঁও থানার তেজকুনিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা রাফায়েল ব্যাপারীর ছেলে আলবার্ট প্রদীপ ব্যাপারী। পেশায় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী আলবার্ট ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর সপরিবারে কানাডা ভ্রমণে যান। আসা-যাওয়ার জন্য একই বছরের জুলাই মাসে ‘ট্রিপ টক’ নামের একটি ট্রাভেল এজেন্সি থেকে বাংলাদেশ বিমানের টিকিট কেনেন। এই টিকিট দিয়ে কানাডায় যেতে পারলেও ফেরার পথে বিমানবন্দরে এসে পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েন প্রদীপ।

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি কানাডার টরেন্টো বিমানবন্দরে এসে বোডিং পাস নেওয়ার সময় জানতে পারেন তার টিকিটটি আর তার নামে নেই। বরং টিকিট ফেরত দিয়ে ট্রাভেল এজেন্সি টাকা তুলে নিয়ে গেছে। এমতাবস্থায় বিদেশের মাটিতে বিপদে পড়ে যান এই ব্যবসায়ী। পরবর্তীতে দেশে থাকা স্বজনদের সহযোগিতায় দেশে ফিরে আসেন।

দেশে ফিরে দ্বারে-দ্বারে ঘুরেও নিজের টাকা কিংবা টিকিট কোনোটাই পাননি তিনি। অবশেষে থানায় ট্রাভেল এজেন্সি ‘ট্রিপ টক’-এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন প্রদীপ। যদিও ট্রাভেল এজেন্সিটির মালিক পক্ষ নিজেদের দায় এড়াতে গ্রাহকের ওপর দোষ চাপাতে মরিয়া।

জানা গেছে, দেশে ফেরার ১ মাস পর মামলা করলেও সমস্যা সমাধানে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছেন তিনি। ট্রাভেল এজেন্সির মালিক পক্ষকে সমাধানের কথা বারবার বললেও এর মালিক মাহের হাসান কোনো সমাধান দেননি। বরং তিনি নানাভাবে গোঁজামিল দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

প্রাথমিক তদন্ত শেষে শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে তেজগাঁও থানা আলবার্ট প্রদীপের অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে। মামলায় আসামি করা হয়েছে এজেন্সির মালিক মাহের হাসান, তার পার্টনার (ব্যবসার অংশীদার) মো. হাসিবুর রহমান ওরফে জীবন ও কর্মচারী শফিকুল শেখকে।

তেজগাঁও থানা দায়ের হওয়া মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী আলবার্ট প্রদীপ তার সন্তান, স্ত্রীকে নিয়ে কানাডা যাওয়ার জন্য টিকিট কাটার চেষ্টা করছিলেন। এই সময়ে তার এক স্বজনের পরামর্শে ট্রিপ টক ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কানাডায় যাওয়ার জন্য প্রতিটি টিকিটের দাম ধরা হয় এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসেবে তিনজনের আসা ও যাওয়ার জন্য ছয়টি টিকিটের দাম ধরা হয় পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এই টাকা ট্রাভেল এজেন্সির কর্মচারীদের কাছে কয়েক ধাপে পরিশোধ করেন প্রদীপ। টাকা পরিশোধ করার পরে টিকিট বুঝে পেয়ে গত বছরের ১০ অক্টোবর পরিবার নিয়ে কানাডায় চলে যান প্রদীপ। সেখানে প্রায় তিন মাস অবস্থান করার পর চলতি বছরের জানুয়ারির ২০ তারিখ কানাডার টরেন্টো বিমানবন্দরে এসে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন। কিন্তু টিকিট চেকিংয়ে গিয়ে জানা যায় তার নামে কাটা টিকিট বাতিল করা হয়েছে। বরং এই টিকিট জমা দিয়ে ট্রাভেল এজেন্সি টাকা তুলে নিয়েছে। এই সময়ে বিদেশে বসে এজেন্সির মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কেউই তার ফোন ধরেননি। এমনকি দেশে আসার পরে টিকিটের টাকা ফেরত চাইলেও এজেন্সিটি টাকা না দিয়ে বরং নানা ধরনের হুমকি ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এই ব্যবসায়ী।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আলবার্ট প্রদীপ বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার এক স্বজনের মাধ্যমে এই ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ হয়। পরবর্তীতে তারা আমার কাছ থেকে টিকিটের টাকা নিয়েছে। টিকিট দিলেও পরবর্তীতে আমি বিদেশে যাওয়ার পর তারা টিকিটের টাকা তুলে নিয়েছে। আমার কাছে তাদের টাকা দেওয়া এবং টিকিটের সকল তথ্য প্রমাণ রয়েছে। এখন তারা ভিন্ন কথা বলছে।

প্রদীপের কাটা টিকিটের একটি কপি বার্তা২৪.কমের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং-৭৮৭-৯ এয়ারক্রাফটের টিকিট কেনেন। ফ্লাইট নম্বর: বিজি ৩০৫। এর প্রায় তিন মাস পর একই বিমানে ফেরার টিকিট কেটেছেন তিনি। যার ফ্লাইট নম্বর ৩০৬। ই-টিকিট নম্বর যথাক্রমে: ৯৯৭৯৩৪২৩৯১০২২, ৯৯৭৯৩৪২৩৯১০২৩ ও ৯৯৭৯৩৪২৩৯১০২৪।

এদিকে, এ বিষয়ে ভুক্তভোগীকেই দায়ী করছেন এজেন্সির মালিক মাহের হাসান। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, তিনি আমাদের কাছ থেকে টিকিট কেনেননি। আমার প্রতিষ্ঠানের এক সময়ের পার্টনার জীবনের কাছ থেকে টিকিট কেটেছিলেন, কিন্তু জীবন সেই টিকিটের টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছে। এমনকি সে আমার প্রতিষ্ঠানের ৩৮ লাখ টাকা নিয়ে দুবাই গিয়ে আত্মগোপন করেছে। জীবনের বিরুদ্ধে আমরাও একাধিক মামলা ও জিডি করেছি। তার সঙ্গে আমাদের ২০২৩ সালের পহেলা আগস্ট থেকে কাগজেকলমে কোনো সম্পর্ক নেই। যদিও জুলাই থেকেই সে আমাদের সঙ্গে নেই। এই বিষয়টা নিয়ে একাধিকবার তেজগাঁও থানায় পুলিশ আমাদের ডেকেছিল। তখন আমরাই ভুক্তভোগীকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি। সে যার সঙ্গে লেনদেন করেছে তার কাছ থেকে টাকা নেবে, এতে আমাদের কোনো দায় নেই।

তিনি আরও বলেন, আমার তাকে (ভুক্তভোগী) জীবনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি। কিন্তু সে আমাদের বারবার ডিস্টার্ব করছে। জীবনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনেক ভুক্তভোগীই কিছু টাকা ফেরত পেয়েছে।

এদিকে ভুক্তভোগী প্রদীপ বলছেন, আমি যখন টিকিট কিনেছি তখন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন করেছি। না হলে কেউ একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর কাছে লাখ লাখ টাকা দেয়। তাদের প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আমাকে দেখিয়ে লাভ কী? তারা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায় এড়াতে পারে না। টাকা দাবি করায় তারা ‘আর কখনো বিদেশে যেতে পারব না’ বলে হুমকি দিচ্ছে।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। ভুক্তভোগী আমাদের কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর আমরা প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা যাচাই করেছি। সত্যতা পাওয়ার পর আমরা মামলা নিয়েছি। তদন্ত করা হচ্ছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *