সারাদেশ

যার ছোয়ায় বদলে গেলে দুই ফসলী জমি

ডেস্ক রিপোর্ট: ক্রমবর্ধনমান জনসংখ্যার বিপরিতে খাদ্য চাহিদা বাড়ছে প্রতি বছরই। তবে কমে যাচ্ছে আবাদি জমি। অল্প জমিতে অধিক খাদ্য উৎপাদন তাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। আর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একই জমিতে অধিক ফসল আবাদের দ্বার খুলে দিয়েছে স্বল্প জীবনকালীন সরিষার আবাদ। ফলে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি চলতি মৌসূমে মেহেরপুর জেলায় সাত হাজার হেক্টর জমি দুই ফসল থেকে তিন ফসলী জমিতে রুপান্তরিত হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের তরফ থেকে চাষীদেরকে সরিষা আবাদে আগ্রহী করার চেষ্টা বেশ আগে থেকেই। তবে গেল দুই বছর আমদানীকৃত ভোজ্যতেলের দর বৃদ্ধির কারণে সেই চেষ্টায় অনেকটাই সফল হয়েছে কৃষি বিভাগ। গেল দুই বছর ধরে মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন মাঠে দেখা মিলছে সরিষা আবাদ। বিশেষ করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকালীন ধানের জাত এবং বিনা ও বারি উদ্ভাবিত স্বল্পজীবনকালীন সরিষার জাত একই জমিতে তিন ফসল আবাদের পথ তৈরী করেছে। নভেম্বর মাসে আমন ধান কাটার পর প্রায় সাড়ে তিন মাস বেশিরভাগ জমি থাকতো পতিত।

এসব জমিতে ফেব্রুযালী মাসে বোরো ধান রোপণ করা হতো। জেলার বিভিন্ন মাঠের সেই জমি দীর্ঘদিন ধরে শুধুমাত্রা আমন আর বোরো ধান আবাদের ক্রপিং প্যাটার্নের মধ্যেই আবদ্ধ ছিল। স্বল্পজীবনকালীন জাতের সরিষা আবাদ করায় এখন আর পতিত থাকছে না এসব জমি। আমন ধান কাটার আগ মুর্হূতে বিনা চাষে সরিষা বপণ করায় কমে যাচ্ছে সরিষা আবাদ খরচ। এ সরিষা তোলার পর একই জমিতে রোপণ করা হচ্ছে বোরো ধান। যার মধ্য দিয়ে দুই ফসলী জমি রুপান্তরিত হচ্ছে তিন ফসলী জমিতে। অন্যদিকে বিনা চাষে সরিষা আবাদ তাই চাষীরা লাভবান হচ্ছেন অনেক বেশি। তিন ফসল আবাদের এই ক্রপিং প্যাটার্ন দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য চাল উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোজ্য তেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছেন কৃষকরা।

পূর্বমালসাদহ গ্রামের কৃষক বকুল হোসেন বলেন, গেল বছর থেকে তিনি দুই ফসলী ধানের জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। যার মাধ্যমে তার পরিবারের সারা বছরের ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। অন্যদিকে দুই মৌসুমে ধান আবাদ ঠিক থাকায় বেশ খুশি তিনি।

পূর্ব মালসাদহ গ্রামের আরেক চাষী আলী হোসেন। তিনি দুই বিঘা জমিতে বারি সরিষয়া ১৪ আবাদ করেন। মাত্র ৭৫ দিন জীবনকালের এই সরিষা তুলে বোরো ধান

আবাদ করেছেন আলী হোসনে। আলী হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমিতে সরিষা পেয়েছেন প্রায় ছয় মণ। যা পরিবারের তেলের চাহিদা মিটিয়ে কিছু বিক্রি করবেন করবেন বলে জানান আলী হোসেন।

চাষীরা জানান, ৫ সদস্যর একটি পরিবারে বছরে ভোজ্যতেলের প্রয়োজন প্রায় ১২ হাজার টাকার। সরিষা আবাদের মধ্য দিয়ে চাষী পরিবারগুলো সেই অর্থ সাশ্রয় করতে পারায় অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন সরিষা আবাদে।

জানা গেছে, আমনে স্বল্পজীবনকালীন ধানের জাত ব্রি ধান ৭১, ব্রি ধান ৮৭, ব্রি ধান ৯৪ এবং ব্রি ধান ১০৩ আবাদে বেশ আগ্রহী মেহেরপেুরের কৃষকরা। এর সাথে স্বল্পজীবনকালীন সরিষার কয়েকটি জাত এবং বোরো মৌসূমের ব্রি ধান ব্রি ধান ৬৩, ব্রি ধান ৯৬, ব্রি ধান ১০১ সহ আরও কয়েকটি জাত চাষীদের কাছে বেশ আস্থা অর্জন করেছে। যার মাধ্যমে ধান উৎপাদন ঠিক রেখে বাড়তি ফলস হিসেবে সরিষা পাওয়ায় চাষীরা এই ক্রপিং প্যার্টানে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, গেল বছরের চেয়ে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পেয়ে মেহেরপুর জেলায় এবার সরিষা আবাদী জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত হাজার হেক্টরে। যার পুরোটাই দুই ফসল থেকে তিন ফসলী জমিতে রুপান্তরিত হচ্ছে বলে আশার কথা জানালেন এই কৃষি কর্মকর্তা। এ ধারা অব্যহত থাকলে ধানের পাশাপাশি ভোজ্যতেলে বেশ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *