আন্তর্জাতিক

সংঘাত মোকাবিলার প্রস্তুতিতে চীন, বৈশ্বিক হুমকি কতটুকু?

ডেস্ক রিপোর্ট: চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বিরোধ অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। এই দুই পরাশক্তির মধ্যে যে শীতল স্নায়ুযুদ্ধ চলছে তা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিকে ক্রমেই উদ্বেগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমনকি করোনা মহামারির চেয়েও এই দুই শক্তির মতভেদকে অধিক উদ্বেগজনক মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একটি লক্ষ্য হলো, চীনের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক বিকাশের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া। কেননা, চীন এখন অর্থনীতির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এবং এ কারণেই প্রধান শত্রুও।

এদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হলো যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। তবে দুইটি দেশই এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করে, যেখানে কাজের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রসংখ্যক নিয়োগদাতা বৃহৎ-সংখ্যক কর্মজীবীর ওপর আধিপত্য করে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কাজের ক্ষেত্রের বেশির ভাগই ব্যক্তিমালিকানাধীন। অন্যদিকে চীনের আবার একটি হাইব্রিড ব্যবস্থা চালু রয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিমালিকানাধীন দুটিই চলছে।

সম্প্রতি চীনে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে সিএনএন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ, সামাজিক অস্থিরতা ও মহামারি মোকাবিলায় চীনা কোম্পানিগুলো এমন এক অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করেছে যা পুরো পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে এসব কোম্পানীগুলো তাদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তুলেছে। যা চীনকে যুক্তরাষ্ট্র তথা বহিবিশ্বের জন্য বড় সামরিক হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতির দেশ হিসেবে চীনের সামরিক শক্তি যথেষ্ট শক্তিশালী। এমন সময়ে বেসরকারিভাবে গঠিত এ ধরনের মিলিশিয়া বাহিনীর প্রত্যাবর্তন দেশটির সামরিক শক্তিকে আরও বেশি জোরদার করে তুলবে। যার ফলশ্রুতিতে চীন সামরিক শক্তিতে বিশ্বের কাছে এক মহাপরাক্রম শক্তি হিসেবে প্রতীয়মান হবে। যা আগামী দিনগুলোতে বহিবিশ্বের জন্য ভয়ংকর হুমকির কারণ হয়ে দাড়াবে।

সিএনএন’র ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের বেসরকারি মালিকানাধীন দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিসহ অন্তত ১৬ টি বড় বড় প্রতিষ্ঠান গত এক বছরে তাদের নিজস্ব ফাইটিং ফোর্স গঠন করেছে।

পিপলস আর্মড ফোর্সেস ডিপার্টমেন্ট নামে পরিচিত এসব ফাইটিং ইউনিটগুলো ওই কোম্পানিগুলোতে চাকরীরত বেসামরিক ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয়। তারা বিশ্বের বৃহত্তম দেশ চীনের সামরিক বাহিনীর জন্য একটি রিজার্ভ এবং সহায়ক বাহিনী হিসেবে কাজ করে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাড়া দেওয়া থেকে শুরু করে যুদ্ধের সময় সহায়তা প্রদান করে থাকে। তবে এই ফোর্সটি কেবল চীনের ভেতরেই কাজ করে ।

বেসামরিক এই বাহিনীটির সাথে আমেরিকার ন্যাশনাল গার্ডের সাথে বেশ মিল রয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের কর্পোরেট ব্রিগেড (বাহিনী) প্রতিষ্ঠা বহিঃবিশ্বের সাথে সম্ভাব্য সংঘাতের পাশাপাশি চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকবে।

এটিকে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের চীনকে সামরিক শক্তিতে বিশ্বের আধিপত্যশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার বহুদিনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেও দেখছেন অনেকে।

এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর চায়না অ্যানালাইসিসের চীনা রাজনীতি বিষয়ক ফেলো নিল থমাস বলেন, কর্পোরেট মিলিশিয়াদের প্রত্যাবর্তন জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও ভালোভাবে সংহত করতে শি জিন পিংয়ের এর প্রচেষ্টাকেই প্রতিফলিত করে। কারণ দেশটির ধীর প্রবৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার আরও কঠিন ভবিষ্যতের মুখোমুখি হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে সামরিক নেতৃত্বের অধীনে এসব কর্পোরেট মিলিশিয়ারা কমিউনিস্ট পার্টিকে ভোক্তা বিক্ষোভ এবং কর্মচারী ধর্মঘটের মতো সামাজিক অস্থিরতার ঘটনাগুলো আরও কার্যকরভাবে দমন করতে সহায়তা করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালে চীনের অর্থনীতি ৫ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বেইজিংয়ের নির্ধারিত আনুষ্ঠানিক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সামান্য বেশি। তবে দেশটি সম্পত্তির রেকর্ড পরিমাণ মন্দা, ক্রমবর্ধমান যুব বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতির চাপ, ক্রমবর্ধমান কর্পোরেট খেলাপি এবং স্থানীয় সরকারগুলোর আর্থিক চাপসহ অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

ছবি: সংগৃহীত

এ পরিস্থিতিতে হতাশা যত বাড়ছে ততই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। শ্রমিকদের বিক্ষোভ পর্যবেক্ষণকারী হংকংভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা চায়না লেবার বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে শ্রমিক ধর্মঘট ও বিক্ষোভের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৯৪টিতে, যা ২০২২ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।

মাত্র এক বছর আগেও, ঝেংঝুতে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম আইফোন তৈরির কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছিল। এছাড়াও ফক্সকনের মতো বড় কোম্পানীতেও করোনা মহামারী পরবর্তী সময়ে কর্মীদের ফিরিয়ে আনতে বেতন ও সুবিধা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি প্রত্যাখ্যান করায় শ্রমিক আন্দোলন হয়েছিল।

তবে শুধু কর্পোরেট সেক্টরই না, এর বাইরেও মিলিশিয়া ইউনিটগুলো স্থানীয় সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও গঠিত হয়। তবে পূর্ববর্তী দশকগুলোর মতো এত বড় পরিসরে না হলেও এই ইউনিটগুলো এখনো বেশিরভাগ জায়গায় বিদ্যমান রয়েছে।

কর্পোরেট মিলিশিয়া গঠনকারী বিভিন্ন ধরনের ফার্ম

এখন পর্যন্ত যেসব কোম্পানি মিলিশিয়া গঠনের ঘোষণা দিয়েছে তাদের বেশিরভাগই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান (এসওই), যাদের নিয়ন্ত্রণ সরাসরি কেন্দ্রীয় বা আঞ্চলিক সরকারের মালিকানাধীন।

কিন্তু গত ডিসেম্বরে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘ইলি গ্রুপ’ ইতিহাসের প্রথম বড় বেসরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত চীনা কোম্পানি হিসেবে পিপলস আর্মড ফোর্সেস ডিপার্টমেন্ট ইউনিট স্থাপন করে।

‘ইলি’ কোম্পানীটির মালিকানায় রাষ্ট্রীয় অংশীদারিত্ব নেই। তবে হোহোটের স্থানীয় সরকার, যেখানে এটি অবস্থিত, তার সাম্প্রতিকতম এক্সচেঞ্জ ফাইলিং অনুসারে এতে ৮.৫% শেয়ার রয়েছে।

এছাড়া এখানে, ইলির মিলিশিয়া বাহিনীর শক্তি বা যোগদানকারী কর্মীদের জনসংখ্যার পরিসংখ্যান সম্পর্কে কোনও বিবরণ দেয়া হয়নি। চীনের মিলিটারি সার্ভিস আইন অনুযায়ী, মিলিশিয়া বাহিনীর পুরুষ সদস্যদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছর হতে হবে। বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য এ আইনে কিছুটা নমনীয়তা রয়েছে। মহিলারাও যোগদানের যোগ্য, যদিও আইনে বয়সের প্রয়োজনীয়তা নির্দিষ্ট করা হয়নি।

তবে ইলির এই ইউনিটটি পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এবং আঞ্চলিক সরকারের কমিউনিস্ট পার্টি কমিটির সরাসরি পরিচালনায় থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইলির মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান হুয়াং ঝিকিয়াং বলেন, ইলি ভিত্তিক একটি জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তোলার জন্য এই ইউনিটটি গঠন করা হয়েছে। যেটি শান্তির সময় সেবা করতে পারে, জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করতে পারে এবং যুদ্ধকালীন সময়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।

উল্লেখ্য, গত বছর চীনা সংস্থাগুলোর প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি মিলিশিয়ার মধ্যে এটিই ছিল সর্বশেষ বড় মিলিশিয়া ইউনিট।

গত বছর সেপ্টেম্বরে, সাংহাই এর একটি সরকারি মালিকানাধীন নির্মাণ সংস্থা একটি পিপলস আর্মড ফোর্সেস ডিপার্টমেন্ট ইউনিট স্থাপন করেছে। শহরটির কমিউনিস্ট পার্টির অফিসিয়াল সংবাদপত্র জিফাং ডেইলি অনুসারে, এটি পিএলএ’র অধীনে নিয়ন্ত্রিত হবে।

এটি চাকরিচ্যুত প্রবীণদের চাকরি দেওয়া বা সামরিক বাহিনীর জন্য সৈন্য নিয়োগের মতো দায়িত্বে সেনাবাহিনীকে সহায়তার লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে সিএনএন জানিয়েছে, গত বছর আরও অন্তত ১৪টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান একই কাজ করেছে।

এর মধ্যে রয়েছে চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম দুগ্ধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেংনিউ ডেইরি; জিয়াংসু প্রদেশের নানটং শহরে হাইয়ান আরবান কনস্ট্রাকশন ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট; গুয়াংডং প্রদেশের হুইঝো শহরে তিনটি সম্পত্তি নির্মাণ, পরিবহন ও জলসেবা সংস্থা এবং হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানের নয়টি সংস্থা রয়েছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোতে মিলিশিয়া গঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা উন্নয়নকে আরও জোরদার করা।’ 

মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের ইতিহাস

চীনের মিলিশিয়ারা ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠারও পূর্বে গঠিত হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, তারা ১৯২০ এর দশকে উদ্ভূত হয়েছিল এবং কমিউনিস্ট পার্টিকে তাদের অসংখ্য যুদ্ধে সমর্থন করেছিল। ১৯৪৯ সালের পর যখন পার্টি চীনের মূল ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল, তখন এই ইউনিটগুলোকে সরকার, স্কুল এবং সংস্থাগুলোয় সম্প্রসারণ করা হয়েছিল।

সরকারি নথি অনুযায়ী, ১৯৪৯ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত মাওবাদী যুগে এই বাহিনী প্রচলিত ছিল। তবে ১৯৫০-এর দশকের শেষ দিকে যখন তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক উত্তেজনা তুঙ্গে ছিল তখন ২২ কোটি সদস্য নিয়ে বাহিনীটি তার ইতিহাসের শীর্ষে অবস্থান করছিল ।

মিলিশিয়ারা চীনের সামরিক বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা দুটি পূর্ণকালীন পেশাদার বাহিনী : পিএলএ এবং পিপলস আর্মড পুলিশ নিয়ে গঠিত। এটি অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত। এছাড়া চীনের প্রতিরক্ষা আইন অনুযায়ী, মিলিশিয়ারা পিএলএ’র সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে।

ছবি: সংগৃহীত 

এদিকে কর্পোরেট ব্রিগেডে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিককে তালিকাভুক্ত করে চীনের বিপ্লবী নেতা মাও সেতুং বলেছিলেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে দেশের প্রতিরক্ষা জোরদার করছেন।

কিন্তু ঐতিহাসিকরা বলেন, মাও তার ব্যক্তিগত এজেন্ডা প্রচার এবং তার ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য এই বাহিনীকে ব্যবহার করেছিলেন।

তিনি ব্রিগেডগুলোকে কমিউন (প্রজাসভার) অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এই কমিউনগুলো ১৯৫৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশাল জনগোষ্ঠী নিয়ে গ্রামীণ চীনের প্রায় সমস্ত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা করেছিল। কমিউনগুলো মাওয়ের ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড’ প্রচারাভিযানের একটি কেন্দ্রীয় অংশ ছিল।

মাও তার কট্টর নীতির বিরোধিতাকারীদের দমন ও ভয় দেখানোর জন্য মিলিশিয়া ব্যবস্থাকে প্রসারিত করেছিলেন।

১৯৭৬ সালে মাওয়ের মৃত্যুর পর, দেশটি রাজনৈতিক সংগ্রামের পরিবর্তে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৮০ লাখে নেমে আসে।

যদিও কিছু এসওই তাদের মিলিশিয়া ধরে রেখেছিল, কিন্তু তখন কোন বেসরকারি উদ্যোগ ছিল না। কারণ ১৯৭৮ সালের পর যখন চীন মুক্ত-বাজার সংস্কার বাস্তবায়ন করেছিল তখন থেকেই কেবল বেসরকারি খাত পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু করেছিল।

কর্পোরেট মিলিশিয়াদের পুনরুত্থান: এখনই কেন?

র্যান্ড কর্পোরেশনের সিনিয়র আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা গবেষক টিমোথি হিথের মতে, কর্পোরেট মিলিশিয়াদের পুনরুত্থান সম্ভবত কোভিড -১৯ মহামারি এবং সাম্প্রতিক সময়ে রিয়েল এস্টেট খাতের সংকটের কারণে হয়েছে।

চীনে বছরের পর বছর ধরে রিয়েল এস্টেট বাজারে চলা মন্দা ব্যাপক আকারে ধর্মঘটের সূত্রপাত করেছিল। এ কারণে ২০২২ সাল থেকে চীনের বিভিন্ন শহরে নগদ অর্থের সংকটে থাকা ডেভেলপাররা নির্মাণে বিলম্ব বা পরিত্যক্ত হওয়ায় ক্ষুব্ধ বাড়ির ক্রেতারা অসমাপ্ত অ্যাপার্টমেন্টের জন্য তাদের বন্ধক দিতে অস্বীকার জানায়।

রিয়েল এস্টেটের এই মন্দার পরিণতি আর্থিক খাতে ছড়িয়ে পড়েছে । যার ফলে কিছু ব্যাংক তাদের বিনিয়োগ পণ্যগুলোতে ঋণ খেলাপি হয়েছে। এটি জামানত হারানো মানুষদের বিক্ষোভকে আরও আলোড়িত করেছে।

এ পরিস্থিতে কর্পোরেট মিলিশিয়ার আবারও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে দেশটি। যার ফলশ্রুতিতে বেসরকারি মালিকানায় কর্পোরেট মিলিশিয়াকে সুসংগঠিত করা হচ্ছে।

ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে টিমোথি বলেন, পিপলস আর্মড ফোর্সেস ডিপার্টমেন্টের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চীনা সামরিক বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর জন্য শি’র বৃহত্তর প্রচেষ্টারই একটি অংশ। চীনা প্রেসিডেন্ট সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণ এবং এটিকে একটি বিশ্বমানের লড়াকু বাহিনীতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানান তিনি। এ পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রতিরক্ষা খাত পরিচালনায় সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো।

জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো উইলি লাম দেজা ভু বলেন, ‘গণযুদ্ধ’ এবং ‘বেসামরিক ও সামরিক খাতের জৈব সহাবস্থানের মাধ্যমে আমরা মাওয়ের মূল শ্লোগানগুলোর পুনরুজ্জীবন দেখতে পাচ্ছি ।

দেজা ভু’র এ মন্তব্য এটাই ইঙ্গিত করে যে, সমাজের ওপর বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করা এবং চীনকে যুদ্ধকালীন পর্যায়ে দাঁড় করানোর যে আকাঙ্ক্ষা শি জিন পিংয়ের তা এবার প্রতিফলিত হতে যাচ্ছে। যেমনটি ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে মাও করেছিলেন।

দেজা ভু আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই প্রেসিডেন্ট শি তাইওয়ানে আগ্রাসনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এজন্য শি এসব কর্পোরেট মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের মাধ্যমে পুরো চীনকে সামরিকীকরণ করতে চায়। কারণ বহুকাল ধরে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি তাইওয়ানকে তাদের ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দেখে । যদিও তারা কখনো এর নিয়ন্ত্রণ পায়নি।

তিনি বলেন, ‘যদি আরও বেশি সংখ্যক নাগরিক চীনের মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্য হয়ে ওঠে, তাহলে তাইওয়ানসহ বহিঃবিশ্বের জন্য চীন এক বৈশ্বিক হুমকিতে পরিণত হতে পারে।’ 

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *