খেলার খবর

হাথুরুও তো তাহলে এই সার্কাসের ‘জোকার’!

ডেস্ক রিপোর্ট: ফেব্রুয়ারি, ২০২৩।

জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দায়িত্ব নিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তার এই নিয়োগে পুরো ক্রিকেট বোর্ড উচ্ছ্বসিত। প্রথম মেয়াদের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে হাথুরুসিংহে তার চাকরি শুরু করেন। এশিয়া কাপ এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপের মিশনে তাকে পেয়ে বিসিবি বড় স্বপ্ন দেখে। নিজের মতো সবকিছু সাজিয়ে নেন কোচ হাথুরুসিংহে। পুরো ক্রিকেট মহল তাকে স্বাগত জানায়।

ফেব্রুয়ারি, ২০২৪।

কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বিসিবি শো’কজ করতে পারে-এমন একটা কথা শোনা যাচ্ছে। বিপিএল নিয়ে বেশ অমর্যাদাকর মন্তব্য করেছিলেন হাথুরুসিংহে। যা বিসিবির কলজেতে আঘাত করেছে। কারণ বিপিএল তো বিসিবিরই প্রডাক্ট। বিসিবির চাকরিতে থেকে বাংলাদেশের কোচের পদে থেকে এমন কোনো মন্তব্য তিনি করতে পারেন কি না- সেই প্রশ্নও উঠেছে। সর্বশেষ তথ্য হলো কোচের এমনতর মন্তব্য ও আচরণের জন্য বিসিবির বেশ কয়েকজন পরিচালক ছাড় দিতে নারাজ!

এই প্রসঙ্গে বিসিবির এক পরিচালকের সাফ কথা- ‘কোচের এই মন্তব্যটা আমাদের নজরে এসেছে। আমরা তাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করবো। কেন তিনি এমন কথা বললেন সেটা তার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হবে। তার কাছে আমাদের আরো অনেক ইস্যু আছে। আমরা তার কাছ থেকে সেগুলোর উত্তর খুঁজবো।’ বিপিএল নিয়ে তার এহেন সমালোচনার কারণ কি সেটাও এখন সেই এজেন্ডায় যুক্ত হলো।

কি বুঝলেন?

বছরখানেক আগে কোচ হিসেবে যাকে পেয়ে বিসিবি আনন্দের ঢোলে আওয়াজ তুলেছিল। সেই তাকেই এখন শো কজের চিন্তা করছে। এ প্রসঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রী ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন -‘আমরা দেখব সে বিসিবির নিয়ম ভঙ্গ করেছে কি না। আর সেটা হলে সে যেই হোক আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আরেকটা জিনিষ দেখতে হবে সে এমন কিছু বলেছে কি না যেটা কিনা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আর সেটা যেই লেভেলেই হোক ঘরোয়া ক্রিকেট হোক, আমাদের খেলোয়ার হোক কিংবা বিসিবি হোক তা নিয়ে সে এমন কোনো মন্তব্য করেছে কি না যা কি-না নেতিবাচক বার্তা বহন করে। আর সেটা হলে অবশ্যই তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। আর তাকে অবশ্যই শো কজ করা হবে।’

কি এমন কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যে বিসিবি এমন কড়া প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে?

এবার তা শুনি- ‘আমাদের যথাযথ কোনো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট নেই। শুনতে হয়তো কিছুটা আজব লাগছে কিন্তু আমি বিপিএল দেখার সময় কখনো কখনো টিভির সুইচ বন্ধ করে দেই! এই টুর্নামেন্টে খেলা কিছু খেলোয়াড় মোটেও কোনো মানের নয়। এমন অকার্যকর টি-টোয়েন্টি পদ্ধতির বিষয় আমার অনেক কিছু বলার আছে। আমার মনে হয় এই টুর্নামেন্ট নিয়ে আমাদের জন্য আমাদের বোর্ডের কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে। এমনকি আইসিসির কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে। কিছু বিধিবিধান অবশ্যই থাকা প্রয়োজন। একজন খেলোয়াড় একটা টুর্নামেন্ট খেলছে, দেখা গেল সে সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা টুর্নামেন্ট খেলছে। এটা তো সার্কাসের মতো হয়ে গেল! খেলোয়াড়রা হয়তো সুযোগের কথা বলবে, কিন্তু সেটা ঠিক নয়। এমনভাবে চলতে থাকলে লোকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। আমি তো আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।’

ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর সঙ্গে লম্বা সাক্ষাতকারে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বিপিএল নিয়ে তার বিস্তারিত ব্যাখায় বেশ কিছু ইতিবাচক কথাবার্তাও বলেছেন। বিপিএলের সেই শুরুর দিন থেকে অমন কিছুর দাবির কথা ক্রিকেট সচেতন প্রায় সবাই জানিয়ে আসছিলেন। চন্ডিকাও সেই দাবিগুলো পুর্নব্যক্ত করেন। তার সেই হুবুহ মন্তব্যটা এখানে পড়ুন- ‘আমাদের এমন টুর্নামেন্ট প্রয়োজন যেখানে ব্যাটিং অর্ডারের শীর্ষ তিনে বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা সুযোগ পায়। একই ভাবে ডেথ ওভারেও বাংলাদেশের বোলাররা বোলিংয়ের সুযোগ যেন পায়। যদি সেটা না হয় তাহলে এ বিষয়গুলো আমরা আর কোথায় শিখবো। টি-টোয়েন্টিতে আমাদের মাত্র একটা টুর্নামেন্ট আছে। আমার আদর্শ উপদেশ হলো বিপিএলের আগে আরেকটি টি- টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট করা। মানতেই হবে যে ফ্র্যাঞ্চাইজি তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী যা কিছু করতে পারে। আমার কিছু সেরা খেলোয়াড় তো বিপিএলে খেলছে না। সেক্ষেত্রে কিভাবে আপনি আশা করেন অন্য দলের সঙ্গে বাংলাদেশ দল পেরে উঠবে? আমি তো পুরো খাঁড়া ঢাল বেয়ে উঠার যুদ্ধ করছি!’

বিপিএল নিয়ে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যা বলেছেন তার অনেককিছুই বাস্তবসম্মত। কিন্তু প্রশ্ন হলো বোর্ডের কাছ থেকে বেতন নিয়ে তিনি এমন কড়া সমালোচনামূলক তীর্যক মন্তব্য করতে পারেন কি না? তিনি তো বিসিবির সিস্টেমের সঙ্গে আগেও পরিচিত ছিলেন। বিপিএল তো তিনি আগেও দেখেছেন। সিস্টেমের কোনো গলদ নিয়ে কি কখনো তিনি বোর্ডের কাছে নিজের কোনো প্রস্তাবনা দিয়েছেন?

উত্তর হলো- দেননি।

হয়তো অনেকে বলবেন তিনি তো জাতীয় দলের কোচ। বোর্ডের সিস্টেম শুদ্ধ করার দায়িত্ব তো তার না। সেটা যদি তার দায়িত্ব না হয়ে থাকে তাহলে বিপিএল নিয়ে বিসিবির বেতনভুক্ত কোচ হিসেবে তিনি এমন খোলামেলা সমালোচনা করতে পারেন কি না- সেই প্রশ্নও উঠতে পারে।

কেরি প্যাকার আশির দশকে যখন রঙিন জামায় ওয়ানডে ক্রিকেট লিগের প্রচলন করেছিলেন তখন কট্টরবাদিরা সেটাকে ‘পাজামা ক্রিকেট’ বলে ঠাট্টা করতো। কিন্তু কালের আবহে সেই রঙিন ক্রিকেটই আয় রোজগার দিয়ে ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি টি- টোয়েন্টিকে এই যে এখন হাথুরুসিংহে সার্কাস বলছেন সেই সার্কাসের একজন কিন্তু তিনিও!

-কিভাবে?

প্রথম মেয়াদে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার আগে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে অস্ট্রেলিয়ার বিগব্যাশ টি- টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগে সিডনি থান্ডার্স দলের হেড কোচ ছিলেন।
তাহলে হাথুরুসিংহে এই যে এখন ফ্র্যাঞ্চাইজি টি- টোয়েন্টি লিগকে সার্কাস বলছেন সেই সার্কাসের জোকার যে তিনিও ছিলেন!

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪ ডট কম-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *