সারাদেশ

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু সংখ্যা ১০, আক্রান্ত ১৩৫৭

ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্ব জেলিফিশ দিবস আজ। প্রতিবছর ৩ নভেম্বর বিশ্বব্যাপী এই দিনটি উদযাপন করা হয়।

মূলত মানুষের চেয়ে আদিম, প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বছর পূর্বেরও পৃথিবীতে আগত এই প্রাণীটিকে গুরুত্ব অনুধাবনে এই দিবসটি পালন করা হয়। যদিও কবে থেকে এই দিবসটির উৎপত্তি তা অস্পষ্ট, তবে বিভিন্ন সূত্রমতে ২০১৪ সাল হতে এই দিবসটি নিয়মিত পালিত হয়ে আসছে। দক্ষিণ গোলার্ধে যখন বসন্ত কাল তখন বিশ্ব জেলিফিশ দিবসটি পালন করা হয় কারণ, এই মৌসুম থেকেই তারা উত্তর গোলার্ধের দিকে অভিবাসন শুরু করে।

নাম জেলিফিশ হলেও তারা আসলে মাছ নয় এবং বাহ্যিক গঠনে তাদের সাথে মাছের কোনরূপ মিল পাওয়া যায় না। এরা মূলত নিডারিয়া পর্বের অমেরুদণ্ডী প্রাণী এবং এরা এতই বৈচিত্র্যময় যে অনেক বিজ্ঞানী তাদের কেবল ‘জেলাটিনাস জুপ্ল্যাঙ্কটন’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। জেলিফিশের মাছের মতো আঁশ, ফুলকা বা পাখনা থাকে না। এর পরিবর্তে, এরা গোলাকৃতি ‘বেল’ খোলা এবং বন্ধ করার মাধ্যমে সাঁতার কাটে। এদের শরীর ৯৮ ভাগ পানি দ্বারা গঠিত। তারা মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে, তাদের দেহ অবিলম্বে বাতাসে বাষ্প হয়ে যায়। তাদের কোনো মস্তিষ্ক নেই, শুধুমাত্র একটি প্রাথমিক স্নায়ুতন্ত্র রয়েছে।

এছাড়া এদের যথেষ্ট অভিযোজন ক্ষমতা রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে এদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা হুমকীস্বরূপ। এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি জেলিফিশ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে।

জেলিফিশের কিছু কিছু প্রজাতি দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের বেশ কিছু অঞ্চলে মানুষের খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চায়না, জাপান এবং কোরিয়ার মতো বেশ কিছু জায়গায় এটি খুব মজার খাবার হিসেবে বিবেচিত। প্রকৃতপক্ষে, জাপানিরা জেলিফিশকে ক্যান্ডিতে রূপান্তরিত করেছে, এক ধরনের মিষ্টি এবং নোনতা ক্যারামেল, চিনি, স্টার্চ সিরাপ এবং জেলিফিশ পাউডার দিয়ে তৈরী করা হয় যা ব্যয়বহুল ও সুস্বাদুও বটে। এছাড়াও সালাদে, নুডলসে এবং সয়া সস দিয়ে প্রায়শই এদের খাওয়া হয়। থাইল্যান্ড প্রতি বছর জেলিফিশ রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এ ছাড়াও জেলিফিশ কোলাজেনের, সেলেনিয়াম এবং কোলিনের উৎস হিসেবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায়, প্রসাধনীশিল্পে, ঔষধ শিল্পে ব্যবহার করা হয় এবং সারা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পাবলিক একুরিয়ামেও প্রদর্শিত হয়।

বিশ্ব জেলিফিশ দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউট (বিওআরআই)-এ একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সেমিনারটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘সুনীল অর্থনীতিতে জেলিফিশের অবদান: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’। উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অত্র প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ মহোদয় এবং সেমিনারটি সভাপতিত্ব করেছেন বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফি বিভাগের সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন সিদ্দিকী। সেমিনারটিতে মোট ৩টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবু সাঈদ মুহাম্মদ শরীফ, সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার, বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফি বিভাগ এবং ২টি বিশেষ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উক্ত বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিমুল ভূঁইয়া এবং সৌমিত্র চৌধুরী।

প্রবন্ধসমুহে সুনীল অর্থনীতিতে জেলিফিশের গুরুত্ব এবং সম্যক অবদান, গত বছরে ঘটে যাওয়া ৩ ও ৪ আগষ্ট জেলিফিশ ব্লুম নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম ও তার ফলাফল এবং চলমান অর্থবছরে জেলিফিশ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম ও ভবিষ্যতে জেলিফিশ গবেষণা নিয়ে বিওআরআই-এর পরিকল্পনা এবং সুনীল অর্থনীতিতে এই প্রাণীটির বিশেষ অবদান নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়।

সেমিনারটি থেকে আরও জানা যায়, এই বছর বিওআরআই-এর ৬ জন গবেষক বাংলাদেশের দক্ষিন-পূর্ব উপকূলে জেলিফিশের বৈচিত্র্যতা, কোন কোন স্থানে এবং কোন কোন সময়ে বিচরণ, জেলিফিশ ব্লুমে প্রাইমারী প্রোডাকটিভিটির প্রভাব, জেলিফিশে মাইক্রোপ্লাষ্টিক দূষণের মাত্রা নিরুপন এবং প্রাপ্ত জেলিফিশ সমূহের ফুড ইন্ডাস্ট্রি, ফার্মাসিটিক্যাল এবং বায়োমেডিক্যাল শিল্পে যে অবদান তা নিয়ে নিবিড়ভাবে গবেষণা করা হচ্ছে।

এছাড়া সেমিনারে সমাপনী বক্তব্যে প্রধান অতিথি বিওআরআই-এর মহাপরিচালক মহোদয় আগামীতে সুনীল অর্থনীতিকে গতিশীল করার নিমিত্তে আরো গভীরভাবে এবং বড় পরিসরে জেলিফিশ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *