সারাদেশ

‘তহশিল অফিস জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখার পাশাপাশি দালালমুক্ত করতে হবে’

ডেস্ক রিপোর্ট: ঢাকা থেকে জাপানের টোকিওতে প্রথম বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালু হয়েছিল ১৯৮০ সালে। যাত্রী না পাওয়ায় অল্পদিনের মধ্যেই সেই ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয় দফায় নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে আবারও এই রুটের ফ্লাইট চালু করা হয়।

ক্রমাগত লোকসানের কারণে ২০০৬ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-নারিতা ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এর ১৭ বছর পর ফের চালু হয়েছে ঢাকা-নারিতা ফ্লাইট। শুরুতেই কম ভাড়ার প্যাকেজ ঘোষণা যাত্রী আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশ।

বিষয়টি নিয়ে সাধারণ যাত্রী ও বিমানের এক শ্রেণির কর্মকর্তা বেজায় খুশি। ঢাকা থেকে নারিতা রুটের সর্বনিম্ন একমুখী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ হাজার ৮২৮ টাকা এবং ফিরতি টিকিটসহ সর্বনিম্ন মূল্য জনপ্রতি এক লাখ ১১ হাজার ৬৫৬ টাকা। টিকিটের মূল্য কম হওয়ায় এক শ্রেণির যাত্রী এরই মধ্যে বিমানকে তাদের আকাশপথের বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বিশেষ করে জাপান প্রবাসী নেপালের নাগরিকেরা।

এক লাখের বেশি নেপালি জাপানে কাজ করছেন। এর বাইরে ভারতীয়রাও রয়েছেন বড় সংখ্যায়। সরাসরি এই দুই দেশের কোনো ফ্লাইট না থাকায় এবং ভাড়া কম হওয়ায় এই দুই দেশের নাগরিকদের পছন্দের এয়ারলাইন্সের তালিকায় এখন বিমান।

ঢাকার সাংবাদিক রাকিব হাসনাতের সাম্প্রতিক এক ফেসবুক স্ট্যাটাসেও এই রুটে বিমানের ভালো সাড়া পাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি নারিতা থেকে সরাসরি ফ্লাইটের প্রশংসা করে একে ‘দারুণ সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করে বলেন, উড়োজাহাজ ভর্তি যাত্রীদের বেশিরভাগই নেপাল ও কলকাতার। এই রুট হওয়ায় ঢাকাকে তারা ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা-নারিতা রুটের ফ্লাইট চালু হয়। এরপর এই রুটে যাত্রীদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছে বিমান। তবে উড়োজাহাজ ভর্তি যাত্রী সত্ত্বেও বিমান এই রুটে এখনো লোকসান দিচ্ছে।

বিশ্বের সর্বাধুনিক ড্রিমলাইলনার উড়োজাহাজ দিয়ে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে।

যাত্রী পূর্ণ থাকা সত্ত্বেও কেন বিমান লোকসানে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের এক বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাম না-প্রকাশের শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, কম ভাড়া প্যাকেজের কারণে যাত্রী আকর্ষণের মাধ্যমে প্রাথমিক ধাপে বিমান সফল হয়েছে। তবে এই ভাড়া দিয়ে উড়োজাহাজ যদি পূর্ণও থাকে, তাতে বিমানে কখনোই লাভে যেতে পারবে না।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপে এসে বিমানকে টিকে থাকতে হলে ভাড়া বাড়াতেই হবে। তখন যদি দেখা যায়, যাত্রীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন না, তখন দ্বিতীয় ধাপে বিমান সফল হবে। তবে এই অবস্থাও দীর্ঘদিন চললে বিমান লাভের মুখ দেখবে না। তৃতীয় ধাপে এসে লাভের বিষয়টি মাথায় রেখে ভাড়ার হার ফের নির্ধারণ করতে হবে। তখন হবে বিমানের চূড়ান্ত পরীক্ষা।

বিমানের এই কর্মকর্তা বলেন, ৫০ শতাংশ যাত্রী হয়েও একটি রুটের ফ্লাইট লাভে থাকতে পারে যদি ভাড়ার হার যৌক্তিক হয়। আর ফ্লাইট পূর্ণ হলো কিন্তু ভাড়ার হার কম, তাহলেও ফ্লাইট লাভে রাখা কঠিন হবে। বিমানের ভাড়ার হার কম আছে বলেই এখন আগ্রহী যাত্রীরা।

এই কর্মকর্তা বলেন, বিমান যে ভাড়া নিচ্ছে, অন্যান্য এয়ারলাইন্স এই রুটে ভাড়া নিচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণেই এক শ্রেণির যাত্রী বিমানে চড়ছেন। ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হলে তখন এরা বিমান ভ্রমণ করবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে তার।

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারিতার মতো ফ্লাইট লাভজনক করতে হলে নেপাল ও ভারতীয় যাত্রীদের টার্গেট করতে হবে। সেক্ষেত্রে ট্রানজিট ভিসা প্রত্যাহার করা উচিত। তাহলে এই দুই দেশ থেকে যাত্রীদের আরো ভালো সাড়া পাওয়া যাবে।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, নারিতা ফ্লাইটে খুব ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। কাঠমাণ্ডু ছাড়াও দিল্লি, কলকাতা থেকে যাত্রী আসছেন। তাছাড়া এই রুটে যদি আমরা কোড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে যাত্রীদের কানাডার ভ্যাঙ্কুভার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ করে দিতে পারি, তাহলে আরো ভালো সাড়া পাওয়া যাবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *