সারাদেশ

বাবার লাশ যখন দাফন করা হচ্ছে হুসনা তখন পরীক্ষার হলে

ডেস্ক রিপোর্ট: বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির ভয়াবহ সংকট। পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। এদিকে, চাষের কাজে কৃষকের জমিতে অনেক পানির অপচয় হয়। পানির অপচয় রোধ করতে হাতে নেওয়া হচ্ছে আধুনিক পদ্ধতি। নির্দিষ্ট পরিমাণের পানিতে ভিজবে কৃষকের ফসলের মাঠ। বিলও নেওয়া হবে স্মার্টকার্ডে।

বরেন্দ্র অঞ্চল বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পানি সংকটাপন্ন একটি এলাকা।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) প্রতিষ্ঠার পর থেকে এলাকার কৃষি, সেচ ও মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ মাটির গঠন প্রকৃতি ও বালির স্তর অন্যান্য সাধারণ অঞ্চলের চেয়ে ভিন্নতর হওয়ায় সাধারণ সেচযন্ত্রের (সাধারণ ডিপ টিউবওয়েল) সাহায্যে এ এলাকায় সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, বরেন্দ্র এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভূউপরিস্থ পানির উৎস নেই। সে প্রেক্ষিতে বরেন্দ্র এলাকায় সেচ ব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যে ইনভার্টেড ডিপ টিউবওয়েল (গভীর নলকূপ) স্থাপন করে স্মার্টকার্ড বেইজড প্রি-পেইড মিটারের সাহায্যে বিদ্যুতায়িত সেচযন্ত্র দিয়ে খরা মৌসুমে চাষাবাদ করা হচ্ছে। বরেন্দ্র এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে আর এই উদ্যোগটি নেওয়া হচ্ছে ‘বরেন্দ্র এলাকায় সামঞ্জস্যপূর্ণ উদ্ভাবনী উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায়।
ইতোমধ্যে, প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিএমডিএ।

পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভায় বিএমডিএ-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশীদ বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি অর্থায়ন ২২ দশমিক ৫০ মিলিয়ন প্রকল্প অনুদান, প্রকল্প সাহায্য ২২ দশমিক ৫০ মিলিয়ন, প্রকল্প ঋণ ১৩৫ মিলিয়ন মোট ১৮০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় ধরা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর-২০৩০ সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে। নবায়নযোগ্য শক্তি সম্প্রসারণ; ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি করে ভূ-গর্ভস্থ পানির চাপ হ্রাসকরণ এবং পানি সরবরাহের এলাকা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বিএমডিএ।

বিএমডি কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে অনলাইনে মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিএমডি’র বিভিন্ন কার্যক্রম উপস্থাপন করা হয় এবং বিশদ আলোচনা হয়। আলোচনাকালে বরেন্দ্র এলাকায় সৌরশক্তি এবং ভূ-উপরিস্থ সেচ কার্যক্রমের ওপর সহযোগিতা চাওয়া হলে এডিবি কর্তৃপক্ষ বিএমডিএ-এর প্রস্তাবনা লিখিত আকারে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে। সেই প্রেক্ষিতে বিএমডিএ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে একটি প্রস্তাবনা পাঠায়।

প্রকল্পের আওতায় সেচ এলাকা বৃদ্ধি করার কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে বিধায় বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হবে কি না, পরিকল্পনা কমিশনের এমন মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে বিএমডিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিবির আহমেদ জানান, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিদ্যমান নদী, খাল, বিল, পুকুর অতীতে পর্যাপ্ত গভীরতা ছিল।
কালের বিবর্তনে খাল, বিল, পুকুরগুলো ভরাট হয়ে পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। এছাড়া অনেকক্ষেত্রে এ সমস্ত জলাশয় ভরাট হয়ে শুকিয়ে গেছে। খাল ও পুকুরে পানি না-থাকায় তা কোনো কাজে আসছে না। সংস্কারের অভাবে নদী, খাল, বিল ও অন্যান্য জলাশয়ের পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষিকাজ মূলত ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিএমডিএ বর্তমানে সেচকাজে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের ওপর কার্যক্রম গ্রহণ করেছে এবং এই এলাকায় আরো বেশি ভূ-উপরিস্থ কার্যক্রম গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলার ওপর দিয়ে আত্রাই, মহানন্দা, পুনর্ভবা, শিব, বারনই, ছোট যমুনা, ঘাগট, যমুনেশ্বরী, করতোয়া, টাঙ্গন, আলাইকুড়ি, ইছামতি নদী প্রবাহিত হয়েছে।

বিএমডিএ জানায়, এ সব নদীর সঙ্গে সংযুক্ত এবং অন্যান্য খাস খাল রয়েছে, যেগুলো কালের বিবর্তনে ভরাট হয়ে গেছে। এ সব খাস খাল পুনঃখনন করে পানি সংরক্ষণ করে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি করা সম্ভব। সে লক্ষ্যে ৩০০ কিমি খাস খাল, ৫০০টি খাস পুকুর, ১০টি বিল পুনঃখনন করে খননকৃত খালে পানি সংরক্ষণের জন্য ২০টি ক্রসড্যাম এবং বিদ্যমান নদীতে ২টি রাবার ড্যাম, ১টি এলিভেটেড ড্যাম নির্মাণ করে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার ৯ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

এই সেচ কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য ১০০টি লো-লিট পাম্প নির্মাণ করে পানিসাশ্রয়ী সেচ ব্যবস্থার জন্য ১০০ কিমি ভূ-গর্ভস্থ নালা নির্মাণ করা হবে এবং ২ হাজার ৫০০ সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে।

ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি, টেকসই সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণে সুনির্দিষ্ট ডিজাইন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নই প্রস্তাবিত প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। বর্তমানে কাঙ্ক্ষিত প্রয়োজন অনুযায়ী, সেচ দেওয়া যায় না। সৌরশক্তির সেচযন্ত্র চালু হওয়ার ফলে ফসলের চাহিদা মোতাবেক যতটুকু সেচ দরকার, ততটুকুই সেচ দেওয়া হবে। অতিরিক্ত সেচের প্রয়োজন হবে না।

বরেন্দ্র অঞ্চলের ফসল বরেন্দ্র এলাকার ভূ-গর্ভস্থ পানির চাপ কমে যাওয়ায় শস্যবিন্যাস পরিবর্তন হয়েছে। বোরো মৌসুমে ধানচাষের পরিবর্তে কম পানি গ্রহণকারী ফসল যেমন গম, সরিষা, ডাল জাতীয় ফসল, শীতকালীন লাউ, টমেটো, আলু চাষ এবং বর্ষা মৌসুমে আউশ ও আমন ধান চাষের ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং উন্নত জাতের বীজ সরবরাহের মাধ্যমে বিএমডিএ’র কার্যক্রম চলমান আছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পে উল্লিখিত কার্যক্রমগুলো আরো সম্প্রসারিত হবে। আউশ ও আমন ধানে পানিসাশ্রয়ী পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ানো হবে।

তবে বিএমএডি’র প্রস্তাবিত প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়েও তোলা হয়েছে, প্রশ্ন।

বিএমডি’র প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্প বিবরণী এবং যৌক্তিকতা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে প্রকল্পের প্রাসঙ্গিকতা, প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যাশিত আর্থ-সামাজিক উপকারিতা ও ফলাফল বিস্তারিত প্রতিফলনপূর্বক প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

প্রকল্পের কার্যক্রমগুলো দীর্ঘমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী, স্বল্পমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা, নীতি ও কৌশলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে এবং প্রকল্পের উদ্দেশ্য অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য ও প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করে কার্যক্রমগুলো প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

প্রকল্পে সেচ এলাকা বৃদ্ধি করার কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে বিধায় ভূগর্ভের পানির স্তরে কী রূপ প্রভাব সৃষ্টি হবে, তা প্রকল্পে উল্লেখ করতে হবে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) আওতাধীন মোট কমান্ড এলাকায় কত শতাংশ বারিড পাইপের আওতায় এসেছে এবং এ প্রকল্পের মাধ্যমে কত শতাংশ এরিয়া বারিড পাইপের আওতাভুক্ত হবে, সে পরিসংখ্যান প্রকল্পে উল্লেখ করতে হবে।

প্রকল্পের আওতায় ৩০০ কিমি খাস খাল, ৫০০টি খাস পুকুর, ১০টি বিল পুনঃখনন করে খননকৃত খালে পানি সংরক্ষণের জন্য ২০টি ক্রসড্যাম এবং বিদ্যমান নদীতে ২টি রাবার ড্যাম, ১টি এলিভেটেড ড্যাম নির্মাণ করতে হবে। এই সেচ কার্যক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য ১০০টি এলএলপি নির্মাণ করে পানিসাশ্রয়ী সেচ ব্যবস্থার জন্য ১০০ কিমি ভূ-গর্ভস্থ ইউপিভিসি নালা নির্মাণ এবং ২৫০০ সোলার প্যানেল স্থাপনসহ অন্যান্য অঙ্গভিত্তিক ব্যয় বিভাজন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লীপ্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম-প্রধান (সেচ উইং) এনামূল হক বলেন, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য এবং এর আওতায় কী কী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে, তার বর্ণনা ও অঙ্গভিত্তিক ব্যয় বিভাজন নেই বিধায় প্রকল্পের উদ্দেশ্য অর্জিত হবে কি না তাও বোধগম্য নয়।

প্রকল্পের বিবরণী এবং যৌক্তিকতা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে প্রকল্পের প্রাসঙ্গিকতা, প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যাশিত আর্থ-সামাজিক উপকারিতা ও ফলাফল এবং সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অংশ বিস্তারিত ও যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি বলে জানান তিনি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *