আন্তর্জাতিক

দ্বিতীয়বারের মতো পুলিশের সর্বোচ্চ পদক পেলেন রাজবাড়ীর মেয়ে হামিদা

ডেস্ক রিপোর্ট: দ্বিতীয় বারের মতো পুলিশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক পিপিএম পেলেন রাজবাড়ীর মেয়ে হামিদা পারভীন। ২০২৪ সালের পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে তিনি এই পুরস্কর অর্জন করেন। এর আগে হামিদা পারভীন ২০১৭ সালেও একই পদক পান।

বর্তমান হামিদা পারভীন ঢাকা মহানগর পুলিশ (DMP) এর যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, প্রোটেকশন অ্যান্ড ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটিতে দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে এমফিলে অধ‍্যয়নকালে বাবার অন্তিম ইচ্ছা পূরণে ২০০৩ সালে ২১ তম বিসিএস এর মাধ‍্যমে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন তিনি।

২০ বছরের চাকরি জীবনে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে (আইভোরিকোস্টে) অংশগ্রহণ করে ২০০৯ সালে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা পদকে ভূষিত হন।

২০১৬ সালে তিনি পুলিশ সুপার হিসাবে পদোন্নতি পেয়ে DMP ‘র Protection বিভাগে প্রথম নারী কর্মকর্তা হিসাবে ৩ বছরের বেশি সময় নিয়োজিত থেকে মহামান‍্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশী – বিদেশী সকল VVIP/VIP দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। তিনি ঢাকা মহানগরের সকল KPI এর নিরাপত্তা দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অগনিত আন্তর্জাতিক ইভেন্ট, সম্মেলন এবং টুর্নামেন্টে সকল প্রকার নিরাপত্তা দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। দীর্ঘ সময়ে এ বিভাগের দায়িত্ব পালনে তার পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, বিচক্ষণতার স্বীকৃতি স্বরূপ দুইবার (২০১৬, ২০১৮)তাকে IGP’s Examplary Good Services Badge এবং ২০১৭ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক পিপিএম প্রদান করা হয়েছে।

২০১৯ সালে হামিদা পারভীন পিপিএম উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেই ডিভিশনের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, তদন্ত ইউনিট এবং কুইক রেসপন্স টিমের কার্যক্রমে আধুনিক ও মানবিক পুলিশিং এর সমন্বয় ঘটিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানকে নির্যাতিতদের ভরসাস্থল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

তিনি স্কুল-কলেজ, গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনার মাধ্যমে সাইবার ক্রাইম, মাদক, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং এবং নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যাপক পরিসরে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। শিশু ও বয়স্ক ভিকটিমদের জন্য Victim Support Center কে তিনি আনন্দ আশ্রমে রূপান্তরিত করেছিলেন।

উক্ত ডিভিশনে প্রশংসনীয় এসব ভূমিকা রাখার পুরস্কার স্বরূপ তাকে ২০২২ সালে তৃতীয়বারের জন‍্য “IGP’s Examplary Good Services Badge” প্রদান করা হয়।

পেশাগত দায়িত্বের বাইরে সমাজসেবা, ছাদবাগান, বৃক্ষরোপণ, প্রকাশনা ইত‍্যাদি কাজে নিরবিচ্ছন্নভাবে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। তিনি উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার থাকাকালীন অফিস ভবনের ছাদে বৈচিত্র্যময় ছাদ বাগান সৃজন করেন। ছাদ বাগানের বিভিন্ন গাছে পাখির আশ্রয়স্থল স্থাপন, কৃত্রিম ঝর্ণা স্থাপন, ছোট্ট একটা চৌবাচ্চায় পদ্ম পাতা দিয়ে শোভিত করে মাছ চাষ, দৃষ্টিনন্দন মাচায় দেশীয় সব্জি চাষ তার সৃজিত ছাদ বাগানকে বৈচিত্র্যময় এবং দৃষ্টিনন্দন করেছে। বৃক্ষরোপণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরষ্কার -২০২১” এর ঙ- শ্রেণিতে বাড়ীর ছাদে বাগান সৃজন(ব‍্যক্তি/প্রতিষ্ঠান) ক‍্যাটাগরিতে হামিদা পারভীন পিপিএম এর সৃজিত “উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন” এর ছাদ বাগান প্রথম স্থান অধিকার করে। তিনি রাজবাড়ীর সবচেয়ে বড় জনপ্রিয় সামাজিক সংগঠন রাজবাড়ী হেল্পলাইন ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে মানবিক ও সামাজিক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।

রাজবাড়ীর সদরের একটি মধ‍্যবিত্ত যৌথ পরিবার থেকে উঠে আসা হামিদা পারভীনের জীবনের গল্পে চ‍্যালেঞ্জ আর প্রতিকুলতা নিত্য সঙ্গী। ১৪ ভাইবোনের বিশাল সংসারে মামা, চাচা, খালাসহ বহু আত্মীয়- স্বজনেরা তাদের বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করায় কখনোই বাড়তি মনোযোগ পাননি। তার শিক্ষানুরাগী বাবা তার জীবনের মূল চালিকাশক্তি হলেও তার মা-এর নিরঙ্কুশ অনুপ্রেরণা তাকে এই অবস্থানে আসতে মূখ‍্য ভূমিকা পালন করেছে।

আত্মবিশ্বাস, স্বপ্ন আর সাধনা-তার সাফল্যের মূল নিয়ামক। কোন কাজকে তিনি কখনো ছোট করে দেখেন না। পেশাগত জীবনে তিনি কঠোর পরিশ্রমী একজন কর্মকর্তা হিসাবে সুবিদিত। মা-বাবার দোয়া তার জীবনে সাফল্য এনে দিয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *