আন্তর্জাতিক

সজনে ফুলের শুভ্রতায় বসন্তের প্রতিচ্ছবি

ডেস্ক রিপোর্ট: শ্বেতশুভ্র পাপড়ির মাঝে যেন গ্রামীণ নববধূর মূল্যবান অলংকারের মতো স্বর্ণালি মহামূল্যবান শোভা বিস্তার করে সজনে ফুল। এই ফুলের অপার সৌন্দর্য ও মাদকতায় মুগ্ধ হলেও, বাংলা সাহিত্যে এর উপস্থিতি বিরল। তবে, প্রকৃতির কবি হিসেবে পরিচিত জীবনানন্দ দাশের কলমে এই ফুলের সৌন্দর্য অমরত্ব পেয়েছে।

সজনে ফুল শুধু গ্রামীণ বাংলার সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং এর মধ্যে নিহিত আছে বাঙালির জীবনধারা ও পুষ্টির এক অনন্য মাত্রা। যেখানে আধুনিক নগরায়ণের ব্যস্ততায় এই ফুলের মোহ অনেকটাই অবহেলিত হয়ে পড়েছে, সেখানে জীবনানন্দ দাশের কবিতা ‘বাতাসে ধানের শব্দ শুনিয়াছি’ এই ফুলের প্রতি এক অনন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করে। তিনি লিখেছেন, ‘…আনারস বন; ঘাস আমি দেখিয়াছি; দেখেছি সজনে ফুল চুপে চুপে পড়িতেছে ঝরে’। এই লাইনগুলো প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের মধ্যে সজনে ফুলের বিশেষ স্থান তুলে ধরে।

ফুলে ফুলে ভরে গেছে সজনে গাছ

সজনে ফুলের মোহনীয় সৌরভ ও সৌন্দর্য যেমন কবিদের কলমে বিরল, তেমনি এর মূল্যবান উপাদান কৃষিতে এবং পুষ্টি বিজ্ঞানে গুরুত্ব পায়। এর প্রতি আকর্ষণ শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর অন্তর্নিহিত গুণাবলি মানুষের জীবনে অপরিসীম উপকার বয়ে আনে।

জীবনানন্দ দাশের কবিতার মাধ্যমে সজনে ফুলের প্রতি আমাদের আকর্ষণ ও শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। তার কবিতা প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যের প্রতি নতুন করে মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং ভবিষ্যতের কবিদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হতে পারে।

সজনে ফুল কেবল তার সৌন্দর্যের জন্য নয়, পুষ্টির জন্যও বিখ্যাত। এই ফুল ও গাছ দেশের পুষ্টি ও সৌন্দর্যের এক অপরিহার্য অনুসঙ্গ। তাই সজনে ফুলের এই মুগ্ধতা ও মায়াবী সৌন্দর্যের বন্দনায় আমাদের আরও বেশি করে মনোনিবেশ করা উচিত। একদিন হয়তো আমাদের কবি ও সাহিত্যিকরা এই ফুলের মুগ্ধতা ও সৌন্দর্যের বন্দনায় নতুন কবিতার মালা গাঁথবেন।

বসন্তের শুরুতেই রাজশাহী নগরীর সজনে গাছে-গাছে ফুলে-ফুলে ভরে গেছে। থোকায়-থোকায় ঝুলছে শত-শত, লাখ-কোটি ফুল। গাছে-গাছে ফুলের পরিমাণ এতটাই বেশি যে গাছের পাতা পর্যন্ত দেখার উপায় নেই। অনেক গাছ ফুলের ভারে নুয়ে পড়েছে। কোনো কোনো গাছের ডাল ফুলের ভারে ভেঙেও পড়েছে। কেউ কেউ অতিরিক্ত ফুলের ভারে যেন গাছটিই না পড়ে যায়; এ শঙ্কায় কিছু ডাল ছেঁটে দিয়েছেন। কেউ দিয়েছেন বাঁশের ঠেকা (সাপোর্ট)।

আর এ অতিভারে বিপর্যস্ত গাছের ফুলে ফুলে যেন আর্শীবাদ হয়ে ভ্রমরের আগমন। সঙ্গে উপকারী অন্য পোকারাও রয়েছে। ভ্রমর ও মৌমাছি সংগ্রহ করছে মধু। তাদের যখন মধু সংগ্রহে ব্যস্ততা, তখন পরাগায়ণ করে ফুল থেকে পরিপূর্ণ সজনে ডাটায় পরিণত হওয়ার সংগ্রাম চলছে ফুলেদের মাঝে। কারণ প্রতি মুহূর্তেই ঝরছে ফুল। ঝরেপড়া এ ফুলগুলোর মূল্যহীন গন্তব্য। অপরদিকে, টিকে থেকে যে ফুলগুলো আনবে ফল; দিনশেষে তা আনবে চাষীর মনে তুষ্টি। কারণ ফুল নিয়ে সৌন্দর্য পিপাসু, বিশেষজ্ঞ ও কবির আগ্রহ থাকলেও, চাষীর আগ্রহ ফল ও পাতা।

ফুলের ভারে নুয়িয়ে পড়েছে গাছের ডাল

সজনে ফুল গবেষকদের কাছে মহামূল্যবান। এটি নিয়ে দেশীয় পর্যায়ে গবেষণা চলমান। কৃষি খাতের অপ্রচলিত সবজি নিয়ে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) এর সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা চলমান। গবেষণার প্রথম পর্যায়ে সজনে পাতা ও বীজ নিয়ে বিস্ময়কর সফলতা এসেছে। এখন অপেক্ষা ফুল নিয়ে। গবেষকরা সজনে পাতাকে ‘নিউট্রিশন্স সুপার ফুড’ এবং সজিনা গাছকে ‘মিরাকেল ট্রি’ হিসেবে উল্লেখ করছেন।

রাজশাহীতে কয়েক দশকে সজনে আবাদ বেড়েছে। রাস্তার পাশে সজনের সাদা ফুল পথচারীদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করছে। নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকায় রাস্তার পাশে সারি সারি বেশকিছু সজনে গাছের সৌন্দর্য যাত্রী ও পথচারীদের চোখ এড়াতে পারছে না। এখানকার প্রতিটি গাছ ফুলের ভারে নুয়ে পড়েছে।

এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন মো. ইয়াসিন আলী। তিনি বলেন, “শহরের মধ্যে এতো ফুলসহ সজিনা গাছ অন্য কোথাও দেখি নি। গত বছরও প্রচুর ফুল ছিলো। এবার আরও বেশি ফুল। নব-নির্মিত রাস্তার পাশে এই সৌন্দর্য আরও চমৎকার হয়ে উঠেছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *