সারাদেশ

৫ বারের এমপি ও সিটি মেয়র গ্রেফতার

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজধানীর চকবাজার থানার মোঘলটুলী এলাকায় দিনে দুপুরে অস্ত্র ঠেকিয়ে ব্যবসায়ীর কর্মচারীর কাছ থেকে ৩৩ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বলছেন, ছিনতাইয়ের সময়ে বাঁচার জন্য সহযোগিতা চাইলে ছিনতাইকারীরা স্থানীদের কাছে নিজেদের ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয়।

এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বাদী হয়ে রাজধানীর চকবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ইতোমধ্যে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত বাকিদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে থানা পুলিশ।    

গ্রেফতারকৃতরা হলো, চকবাজার থানা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি শুভ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিরাজ ও সদস্য সায়েম।

গত বুধবার (১ নভেম্বর) বেলা সোয়া ১১ টার দিকে রাজধানীর চকবাজারের মোগলটুলি সড়কে এই ঘটনা ঘটে। ছিনতাইয়ের শিকার যুবকের নাম আনিসুল ইসলাম। চকবাজারের হাজী সেলিম টাওয়ারের সুবাহান স্টোর নামের একটি দোকানের কর্মচারী আনিস। দোকান মালিক আবদুস সোবাহান বিশ্বস্ত এই কর্মচারীর মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার জন্য কাছে ৩৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।

কসমেটিক্স পণ্য আমদানি কারক ব্যবসায়ী আবদুল সুবাহান বলেন, আমি যাদের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করি। ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে চেক নিয়ে সেটি সংশ্লিষ্ট আমদানিকারককে দিতে হয়। গত বুধবার আমি আমার দোকানের কর্মচারী আনিসকে টাকা নিয়ে ব্যাংকে পাঠাই। কিন্তু প্রায় দু’ঘন্টা হয়ে গেলেও কর্মচারীর কোনো হদিস পাচ্ছিলাম না। ফোন দিলেও ধরছে না। এতে টেনশন বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে দুপুর ১টার দিকে আমার কর্মচারী আনিস রক্তাক্ত অবস্থায় কাঁতরাতে কাঁতরাতে অফিসে আসে। তখন সে জানায় তাকে কয়েকজন যুবক জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে টাকার ব্যাগ ছিনতাই করেছে। এসময় ব্যাগ না দেওয়ায় তার মাথায় পিস্তল (অস্ত্র) ঠেকায় কয়েকজন। এসময় তাকে খুন করার হুমকি দেয় এবং সাথে থাকা কয়েকজন একটি নির্মানাধীণ ভবনে নিয়ে ব্যাপক মারধর করে। এক পর্যায়ে সহ্য করতে না পেরে টাকার ব্যাগ ছেড়ে দেয় আনিস। পরে তাকে চোখ বেঁধে অন্য জায়গায় ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যায়।

ছাত্রলীগ পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ভুক্তভোগী আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দোকান থেকে কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ পেছন থেকে ৪-৫ জন লোক আমাকে কিলঘুষি মারতে থাকে। এসময় আমি ডাকাত-ডাকাত বলে চিৎকার দিলে লোকজন ছুটে আসে, তখন ছিনতাইকারীরা নিজেদের চকবাজার ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে জানায়- ‘এই ছেলে (আনিস) জামায়াত-বিএনপির লোক। তাকে থানায় নিতেছি।’ এসময় তারা সবাই জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে আমাকে অটোরিকশায় তুলে নেয়। ছাত্রলীগ পরিচয় দেওয়ায় ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।’

আনিস বলেন, তারা আমার চোখ বেঁধে একটা নির্মানাধীণ ভবনে নিয়ে যায়। সেখানে এলোপাথাড়ি পেটাতে। তবুও আমি ব্যাগ ছাড়িনি। এক পর্যায়ে একজন আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং আমার কানে আঘাত করে। এতে আমি অনেক জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে টাকার ব্যাগ কেড়ে নেয়। এরপর তারা আমাকে ভবন থেকে বের করে অজ্ঞাত একটি স্থানে নিয়ে চোখ খুলে দেয়।

পরবর্তীতে দোকান মালিক সোবাহান থানায় মামলা করে। পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। আর ওই সিসিটিভি ফুটেজে যাদেরকে দেখা যায় তারা প্রকৃতপক্ষে চকবাজার থানা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়। এরপর গুরুত্বের সঙ্গে এই ঘটনায় টাকা উদ্ধারে অভিযানে নামে পুলিশের একাধিক টিম। 

পুলিশের একটি সূত্র জানায়- অভিযান শুরুর পর প্রযুক্তির সহায়তায় তারা দেখতে পান অভিযুক্তরা টাকার ব্যাগ নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করে ট্রেন যোগে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় চট্টগ্রামের পুলিশ এবং রেলওয়ে পুলিশের সহায়তায় টাকা ছিনতাইকারী দুজনকে আটক করা হয়। এসময় চকবাজার থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য বিমান যোগে ওই আসামিরা চট্টগ্রামে পৌঁছার আগেই সেখানে পৌঁছে যায় এবং আটক মিরাজ ও সায়েম নামের ওই দুই ছাত্রলীগ নেতাকে নিয়ে অভিযান শুরু করে। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা নগদ উদ্ধার করে পুলিশ।

এরপর তাদেরকে ঢাকায় এনে আবারও অভিযান শুরু করে পুলিশ। অভিযানে আরেক নেতা শুভ ধরা পড়ে। পুলিশ জানায় এই ঘটনায় ৭ থেকে ১০ জনের একটি চক্র কাজ করেছে। বাকিদের গ্রেফতারে এখনো অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

চকবাজার থানা পুলিশের একটি সূত্র বলছে-  ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম জিসান, চকবাজার থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রুবেল হোসেন জয়, সোলায়মান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক রাব্বিও এই ঘটনায় জড়িত থাকার তথ্য পাচ্ছেন তারা। তবে এসব তথ্য নিয়ে তদন্ত করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এই বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে যদি কেউ অপরাধ করে সে দায় আমরা নিবো না। অপরাধীর পরিচয় যাই হোক তাকে শাস্তি পেতেই হবে। আমরা এই ঘটনায় তদন্ত করে যদি তাদের জড়িত থাকার প্রমান পাই তাহলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নিবো। 

ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে ছিনতাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মো. জাফর হোসেন বলেন, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি টাকা এবং অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তবে ছিনতাইকারীরা ছাত্রলীগ কিনা তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। তিনি বলেন, অপরাধীর অন্য কোনো পরিচয় আমাদের কাছে মুখ্য নয়। আমাদের কাছে অপরাধীর একমাত্র পরিচয় সে অপরাধী। সে হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *