সারাদেশ

মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় চিকিৎসকের মৃত্যু

ডেস্ক রিপোর্ট: নারীর ক্ষমতায়নে ৫২ বছর আগে সংসদে সংরক্ষিত আসন চালু হয়। সে ধারাবাহিকতায় এবারও ৫০ জন নারী সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তবে নির্দিষ্ট সংসদীয় আসন না থাকায় কাজের ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতায় থাকতে হচ্ছে সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের।

সংবিধান অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসন ও সাধারণ আসনের সংসদ সদস্যরা সমান ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধার অধিকারী। তবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। সংসদের ৩০০ সাধারণ আসনে সরাসরি জনগণের ভোটের মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত হন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ভোটে। তবে এই আসনগুলোর মনোনয়ন যেহেতু দলীয়ভাবে দেওয়া হয় তাই অন্য কোন প্রার্থী না থাকায় সংরক্ষিত আসনে বাংলাদেশে কখনোই কোন নির্বাচন হয়নি।

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যদের কার্যপরিধির ব্যাপ্তি বা দায়িত্বের বিষয়ে সংবিধানে আলাদা করে কিছু বলা হয়নি। সংরক্ষিত আসন থাকতে হবে শুধু এই কথাটুকুই উল্লেখ আছে সংবিধানে। ফলে বার বার পরিবর্তন হয়েছে সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা। সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের নির্দিষ্ট কোন সংসদীয় আসন না থাকায় তাদের একটি বা দুটি জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়। যেখান থেকে সে এলাকার মানুষের সমস্যা সংসদের উত্থাপনের সুযোগ পান তারা।

তবে সেখানেও আছে সীমাবদ্ধতা। সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যরা তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে চাইলেই যে কোন উন্নয়ন কাজ করতে পারেন না। উন্নয়ন কাজ করার ক্ষেত্রে পরামর্শ নিতে হবে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের। আবার সুযোগ সুবিধা সমান পেলেও সংরক্ষিত নারী সদস্যরা বরাদ্দ পান কম। তাই সেদিক থেকেও কাজ করার সুযোগ কম থাকে তাদের। তবে সংসদে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে সংরক্ষিত ও সাধারণ আসন সবার ভূমিকায় থাকে সমান।

বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে সংরক্ষিত নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন কতটা প্রাসঙ্গিক সেটা ভেবে দেখার সময় এসেছে জানিয়ে রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, যখন এই বিধান প্রণয়ন করা হয় তখন নারীরা সরাসরি প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়াই করবে সে প্রেক্ষাপট ছিল না। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংরক্ষিত আসন সেভাবে প্রাসঙ্গিক না।

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে রাজনৈতিক বিবেচনায়, যদি সেটা না হয়ে মেধাভিত্তিক বা অভিজ্ঞতা ভিত্তিক নির্ধারণ করা হতো তাহলেও তারা সংসদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। কিন্তু সেটা না হওয়ায় সেখান থেকেও আমরা আশানুরূপ ফলাফল পাচ্ছি না। এছাড়াও যেহেতু প্রতিটি আসনের জন্য একজন জনগণের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত সংসদ সদস্য থাকেন ফলে সেখানে নারী সদস্যদের ভূমিকা রাখার স্থান গৌণ হয়ে যায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শাসসুল আলম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নারীদের ওপর এখনো সেভাবে আস্থা স্থাপন করতে পারছে না। রাজনীতিতে যারা আছে তাদেরও সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। সেজন্য নারীরা রাজনীতির প্রতি আগ্রহী হচ্ছে না। আবার পারিবারিক ধারায় মেয়েদের সংযুক্ত করা হচ্ছে বেশি করে এই সব কারণে যারা পরিশীলিত রাজনীতি করতে চায় তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। অনেক সময় স্থানীয় পর্যায়ের ইউনিয়ন, উপজেলা বা মেয়র নির্বাচনে যারা দাঁড়ায় তারা হিউমিলিয়েট হয় ফলে তারাও নিরুৎসাহিত হয়।

তিনি আরও বলেন, নারীদেরকে সংরক্ষিত আসনে বিশেষভাবে নেওয়া হচ্ছে ফলে তাদেরও সক্ষমতা থাকছে না। আমাদের নেতাকেন্দ্রিক যে ধারা চলছে সেখানে নেতার কথার বাহিরে তো তারা যেতে পারবে না। দলের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে দেওয়া হবে সেটা হচ্ছে না, একজন ব্যক্তি-একজন নেত্রী তাদেরকে (মনোনয়ন) দিচ্ছেন। যার ফলে তাদের সেভাবে স্বাধীনতাও থাকে না। সেক্ষেত্রে কাজের সক্ষমতাও থাকে না। তবে কয়েকজন আছেন যারা সরাসরি নির্বাচিত হয়েছেন তাদের কথা আলাদা।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলে নারীদের অংশগ্রহণ ৩৩ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে সে কোটা পূরণ করার কথা থাকলেও পূরণ করতে পারেনি কেউ। এখন সে সময় বর্ধিত করে ২০৩০ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে সেখানেও দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম দলগুলোর মধ্যে লক্ষ্য করা যায়নি। যার সরাসরি প্রভাব আমরা দেখতে পাই জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতেও। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে নারীরা জিতেছে মাত্র ২০টিতে। এর আগে একাদশ সংসদে এই সংখ্যা ছিলো ২২ জন। এমনকি বিগত আরও ৪টি নির্বাচন বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায় এই সংখ্যা ১৮ থেকে ২২ জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তীতে সমাজে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল কম। ফলে শিক্ষা থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি স্তরেই পিছিয়ে ছিলেন নারীরা। সেই ভাবনা থেকেই ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের মাধ্যমে সংসদে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে যখন সমাজের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকে তখন ২০০৮ সালে ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে ২০২০ সালের মধ্যে সকল রাজনৈতিক দলকে প্রত্যেক স্তরের কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ নারী রাখার বিধান করা হয়। তবে সেটি পূরণ না হলেও ১৯৭২ সালের সংরক্ষিত আসন ১৫টি থেকে বেড়ে এখন ৫০টিতে উন্নীত হয়েছে।

সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের কাজ করার ক্ষেত্রে কোন সীমাবদ্ধতায় পড়তে হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এবং সংরক্ষিত আসনের সদস্য শামসুন নাহার চাঁপা বার্তা২৪.কমকে বলেন, এমন সীমাবদ্ধতা তো সকল কাজেই আছে। এর ভিতর থেকেই আমরা কাজ করে যাবো ইনশাআল্লাহ।

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বার্তা২৪.কম বলেন, আমি মনে করি কাজ করার সীমাবদ্ধতা প্রত্যেক সংসদ সদস্যের নিজ নিজ কর্মদক্ষতার ওপর নির্ভর করে। যেখানে সরকার আপনাকে একটি নির্দিষ্ট এলাকা থেকে মনোনীত করেছেন, সে এলাকার নির্দিষ্ট জায়গাটি হয়তো বলেননি তবে আমরা নিজ নিজ পছন্দের জায়গা থেকে কাজ করব। সেখানে নির্বাচিত সংসদ সদস্যও কাজ করবেন আবার মনোনীত যারা হয়েছেন তারাও কাজ করবেন। একটা এলাকায় যদি দুজন মিলেমিশে কাজ করেন তাহলে তো সে এলাকায় আরও উন্নতি হবে। আমি এই (কাজের সীমাবদ্ধতা) জিনিসটাকে পজিটিভলি দেখতে চাই।

সংরক্ষিত আসন থেকে কাজ করার সীমাবদ্ধতার বিষয়ে যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাজমা আক্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, সব কিছুর একটা নিয়ম আছে। সংবিধানে আমাদের যে নিয়ম আছে এবং আমাদের সংসদ নেতা, স্পিকার যেভাবে দায়িত্ব বণ্টন করে দেবেন আমরা সেভাবেই দায়িত্ব পালন করব। এতে সীমাবদ্ধতার কোন বিষয় নেই।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *