সারাদেশ

বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠ ছিলো শোষিতদের শক্তি

ডেস্ক রিপোর্ট: বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠ ছিলো শোষিতদের শক্তি

বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠ ছিলো শোষিতদের শক্তি

একটি নিপীড়িত, নিষ্পেষিত, শোষিত শৃঙ্খলার শিকলে আবদ্ধ বাঙালিকে শোষণের কারাগার থেকে স্বাধীন জাতিতে রূপান্তরের যে অবিস্মরণীয় অধ্যায়ের সর্বাপেক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ পটভূমি ৭ ই মার্চের রেসকোর্স ময়দান। বঙ্গবন্ধু এদিন বাঙালির স্বাধীনতার চেতনা বোধকে উজ্জীবিত করেনি বরং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাঙালির স্নাইপার হিসেবে কাজ করেছে ভাষনটি। ফলস্বরূপ বাঙালি পেয়েছে স্বাধীনতা, লাল সবুজের নিজস্ব পতাকা ও একক অস্তিত্ব। পরবর্তীতে ইউনেস্কো ভাষণটিকে দিছে ঐতিহাসিক মর্যাদা।

টুঙ্গিপাড়ার খোকা থেকে বাঙালির বঙ্গবন্ধু জীবনের সবটা সময়েই ভেবেছেন বাঙালির মুক্তি, অসাম্প্রদায়িকতা ও জাতীয়তাবাদ। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর সেই ১৮ মিনিটের অগ্নিঝড়া ভাষণ বাঙালিকে যতটা পেরেছে সঙ্গবদ্ধ করতে তারচেয়ে বেশী শৃঙ্খলার শিকল ভাঙার দৃঢ় মনোভাব তৈরি করেছে।

শোষকের সম্মুখে মাথানত বাঙালিকে কারার ওই লৌহকপাট ভেঙে বীরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার যে মানসিকতা তার সিংহভাগই এসেছিলো বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান শোনা ও অন্তরে ধারণা করার পর থেকেই।

বল বীর
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল বীর
নজরুলের এই বিদ্রোহী কবিতার এই পঙক্তিগুলো ও বঙ্গবন্ধুর আগুন ঝড়া আঠারো মিনিটের যুগান্তকারী ভাষণ একই সূত্রে গাঁথা। যা বাঙালিকে করেছে ক্রমাগত সঙ্গবদ্ধ, শির উঁচু করে চলার মানসিকতা ও স্বাধীনচেতা মনোভাব। নিঃসন্দেহে রেসকোর্স ময়দানের ভাষণটি মুক্তিকামী মানুষের পথের পাথেয়।

বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে ধ্বনিত জয়বাংলা স্লোগানের পরপরই শোষণের ভাটা সরে যেয়ে স্বাধীনতার জোয়ার আসে বাংলাদেশের মানচিত্রে।
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হদৃয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি।

নির্মলেন্দু গুণ এর ‘স্বাধীনতা, এ শব্দটি আমাদের কিভাবে হলো’ কবিতার লাইনগুলো বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সীমিত প্রতিচ্ছবি। তবে উভয়ের কণ্ঠেই ছিলো স্বাধীনতার গান।

৭ মার্চ এর সকালে শেখ মুজিব তাঁর শরীরে জ্বর অনুভব করেন। কিন্তু এই কিংবদন্তী, বজ্রকন্ঠী, ইস্পাতদেহীকে জ্বর কেন কোনো কিছুতেই কাবু করতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষণা মুক্তিকামী মানুষের কাছে লাল-সবুজ পতাকাকে মূর্তিমান করে তোলে। আর এরই মাধ্যমে বাঙালির ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হয়। বাঙালির অধিকার, অস্তিত্ব ফিরে পাওয়ার এই ভাষণ আজও বাঙালি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।

১৯৭১ সাল, কেমন কেটেছিল মার্চের প্রথম সপ্তাহ

১ মার্চের জনসমাবেশ

সময়টা ১৯৭১। একটা গোটা দেশে উত্তপ্ত হয়ে আছে। আন্দোলন, মিটিং, মিছিল, ভাষণ লেগেই রয়েছে। দেশের নেতা, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র থেকে শুরু করে সারাদেশের সাধারণ জনগণ বুঝে গেছে তাদের লড়তে হবে। বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তান সরকার যে বৈষম্য করছে তার প্রতিবাদে সকলেও একত্রিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই।

ছাত্রদের আন্দোলন  ১৯৪৮ সালের দেশভাগ হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ঘটনা পর পর ঘটতে থাকে। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালের নির্বাচন, ৫৬ সালের সংবিধান, ৫৮ সালের সামরিক অভ্যুত্থান, ৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯’এর গনঅভ্যুত্থান এবং ১১ দফা আন্দোলন, ৭০ এর নির্বাচন- প্রায় দু’দশক ধরে পর্যায়ক্রমে চলে আসা বিরোধিতা অন্তরের আগুনকে আরও দীপ্তিমান করতে শুরু করে।
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর থেকেই দেশ উত্তপ্ত থাকে। কারণ, স্পষ্টত নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল সেসময়ের পূর্ব পাকিস্তানের দল আওয়ামী লীগ। তবে, পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে। তারা নানাভাবে ব্যাপারটি এড়িয়ে যেতে থাকে।

পাকিস্তানের পতাকায় আগুন দেয় বাঙালিরা নানারকম রাজনৈতিক চড়াই-উতরাই’-এর মধ্যেই চলে আসে মার্চ মাস। এই মাস ছিল বাঙালির জন্মলগ্নের সূচনা। মার্চের ১ তারিখ দুপুরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান রেডিও-তে ঘোষণা দেন জাতীয় অধিবেশন স্থগিত করার। সাথে সাথেই পূর্ব বাংলায় মিছি শুরু হয়ে যায়। খণ্ড খণ্ড জন সমাবেশসহ মিটিং মিছিল চলতে থাকে অনবরত। ইয়াহিয়ার ছবি এবং পাকিস্তানের পতাকা পোড়ানো হয়।
হোটেল পূর্বাণীতে সেদিন সকাল থেকেই পার্লামেন্টারি বৈঠকে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। ইয়াহিয়ার ঘোষণার পরপরই সেখানেই প্রেস কনফারেন্স ডাকেন তিনি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সেখানে হাজার হাজার ঢাকাবাসী জড়ো হয়। কনফারেন্সে মুজিব ঘোষণা দেন, পরের ২ দিন হরতালের এবং পরবর্তী ৭ মার্চ রেসকোর্সে মিটিংয়ের।

লাটি ও রড হাতে সাধারণ বাঙালির আন্দোলন  পরদিন ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে প্রথম উন্মোচিত হয়ে স্বাধীন বাংলার মানচিত্রখচিত লাল-সবুজ পতাকা। মুজিবের আদেশ মেনে দিনরাত হরতাল চলতে থাকে। প্রথমে শুধু ঢাকাতে এরপর দেশব্যাপী তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
হরতাল এবং মিছিলের কারণে কারফিউ দেয় পাকিস্তান সরকার। কারফিউ লঙ্ঘন করে জনগণ অনরবত আন্দোলন করতে থাকে। লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় জনগণ বিক্ষোভে নেমে পড়ে। কারফিউ অমান্য করে ব্যারিকেড বানায়। পুলিশ বাঁধা দিয়েও সেই বিক্ষোভ দমাতে পারেনি। গুলি চালানো হলে মানুষ আরও গর্জে ওঠে। স্লোগানে কেঁপে ওঠে বাংলার আকাশ। এভাবেই আন্দোলন চলতে থাকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ।

অবশেষে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। সেই ভাষণ ছিল বাঙালির মুক্তির সোপান। বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ সমাবেত হয় এবং মুক্তির আবেগে মনস্থির করে। পরবর্তীতে এই প্রেরণা হৃদয়ে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল সাহসী বাঙালিরা।  

;

ওরা সৈকতে ঝিনুক কুড়ায় জীবনের তাগিদে!

ওরা সৈকতে ঝিনুক কুড়ায় জীবনের তাগিদে!

;

ইতিহাসের পাতায় ৭ মার্চ

৭ই মার্চের ভাষণ

দিন পেরিয়ে সপ্তাহ হয়, সপ্তাহ পেরিয়ে মাস, মাস পেরিয়ে বছর। নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ সময়, অবিরত তার গতিতে চলতে থাকে। তবে বছর শেষে নতুন বছরের সঙ্গে ফিরে আসে ইতিহাস হয়ে যাওয়া পুরনো তিথিগুলো। সঙ্গে বয়ে নিয়ে আসে ঐতিহাসিক স্মৃতি।

আজ ৭ মার্চ, ২০২৪। ইতিহাসের পাতায় আজকে কী হয়েছিল, তা জেনে নিই-  

– ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ মানুষ সমাবেত হয়েছিলেন ভাষণ শুনতে। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য সাধারণ বাঙালির মনকে স্বাধীন করার স্পৃহার দরকার ছিল। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশে পরিণত হতে সেই প্রেরণাই যুগিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ।  

– ১৯৬৫ সালে দক্ষিণ আমেরিকার অ্যালাবামায় কৃষ্ণাঙ্গদের ভোটাধিকার অধিকার চেয়ে বিক্ষোভ হয়। সেই বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ এসময় টিয়ার গ্যাস, চাবুক এবং লাঠিচার্জ করে। এতে কমপক্ষে ৫০ জন আহত হন।

– ১৯৮৮ সালে জিব্রাল্টারেপুলিশের গুলিতে আইআরএ’র ৩ জন সদস্য নিহত হন। স্পেনের সীমান্তে একটি পেট্রোল পাম্পের হেঁটে যাওয়ার সময় তাদের গুলি করা হয়। ব্রিটিশ গর্ভনরের বাসভবনের কাছে ৫০০ পাউন্ডের বোমা পুঁতে রাখার অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে।    

– ১৮৭৬ সালের ৭ মার্চ আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টেলিফোনের পেটেন্ট পান। 

– ১৯৬৯ সালে ইসরায়েল তাদের প্রথম নারী নেত্রীকে বাছাই করেন। ১০ বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর ৭০ বছরের গোল্ডা মেইর আজকের দিনে নির্বাচনে জয় লাভ করেছিলেন।   

;

ইতিহাসের পাতায় ৬ মার্চ

অ্যাঙ্গোলার গৃহযুদ্ধ

সময়ের সাথে সাথে ক্যালেন্ডার পাল্টায়, সবকিছু পুরনো হতে থাকে। জিনিস যত পুরনো হয় তার মূল্য কমে, কিন্তু স্মৃতি যত পুরনো হয় তার মূল্য তত বাড়ে। 

আজ ৬ মার্চ, ২০২৪। কেটে যাওয়া বছরগুলোতে আজকের দিনে ঘটেছিল অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা। সেসব জেনে নেওয়া যাক!  

পর্তুগালের হুয়াম্বো যুদ্ধে সাড়ে ৩ শ মানুষের মৃত্যু হয় ১৯৯৩ সালের ৬ মার্চ। অ্যাঙ্গোলা সামরিক বাহিনীর মতে, ইউনিটা বিদ্রোহী এবং সরকার বাহিনীর মধ্যের সেই যুদ্ধে আহত হয় ১৫০০-র বেশি অ্যাঙ্গোলিয়ানরা। সরকার পক্ষের সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রাণভয়ে হুয়াম্বোতে পালাতে থাকে।

স্বাধীন ঘানার প্রথম নেতা ড.কোয়ামে এনক্রমাহ  বিশ্বের বুকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘানা জায়গা করে নেয় ১৯৫৭ সালে। ব্রিটেন থেকে মুক্তিলাভের পর আফ্রিকার এই দেশে স্বাধীন কৃষ্ণাঙ্গরা নতুন দেশের সূর্য উদয় হওয়ার সাথেই আনন্দ উদযাপন শুরু করে। নতুন দেশের প্রথম পথপ্রদর্শক ছিলেন ডক্টর কোয়ামে এনক্রুমাহ।

ইউকুলেলে বাদক জর্জ ফ্রম্ববি বিখ্যাত ইউকুলেলে বাদক জর্জ ফ্রম্ববি দেহত্যাগ করেন ১৯৬১ সালে। মাত্র ৫৬ বছর বয়সে হৃদকার্য বন্ধ হয়ে যায় এই ব্রিটিশ ইউকুলেলে সম্রাটের।

ব্রিটিশ কয়লা খনির শ্রমিক ১৯৮৭ সালে বেলজিয়ামের জিব্রুগে গাড়ি-ফেরি ডুবে আটকা পরে অনেক মানুষ। আজকের দিনে ৪৯জন নিহত হন। ৪০০ জনকে জীবিত উদ্ধার করার পরও অনেক মানুষের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে সর্বমোট ১৯৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে ব্রিটেনের কয়লা খনি শ্রমিকরা ৩৫% বেতন বৃদ্ধির দাবী জানিয়ে ধর্মঘট শেষ করেন আজকের তারিখে।

আফ্রিকানরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারবে না, ১৮৫৭ সালে ড্রেড স্কট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আজকের তারিখে।      

;

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *