সারাদেশ

বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের নারীদের সাফল্য অনুকরণীয় : রাষ্ট্রপতি

ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের নারীদের সাফল্য অনুকরণীয় : রাষ্ট্রপতি

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের নারীদের সাফল্য আজ অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) দেওয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্ব, সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও যথার্থ নীতি বাস্তবায়নের ফলে অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন খাতে অভাবনীয় সমৃদ্ধি, উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের নারীদের সাফল্যও আজ অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়।

রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে নারীর সার্বিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে এবং নারী-পুরুষের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীর অগ্রগতি এবং উন্নয়নে বলিষ্ঠ অবস্থান তৈরি করেছেন।

তিনি বলেন, নারীর উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানসমূহকেও নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য-‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’ যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশে নারীদের সমঅধিকার, সমসুযোগ ও সুষ্ঠু বিকাশের লক্ষ্যে সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনার নীতি, কর্মকৌশল হিসাবে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করেছে। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা বিধিমালা ২০১৩, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭, যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮, ডিএনএ আইন ২০১৪ এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে যা বাংলাদেশে নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে মাইলফলক হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশি নারীদের জয়রথ এগিয়ে যাক দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে, এটাই আমার প্রত্যাশা।

সূত্র-বাসস

সংগ্রামী নারী বিথী সেনের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গল্প

বিথী সেন

বিথী সেন। ৪০তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের একজন সদস্য। বর্তমানে ফরিদপুরের বোয়ালমারি সরকারি কলেজে দর্শন বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু বিথী সেনের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পিছনের গল্পটা অন্যরকম। কষ্ট আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জীবন কাটিয়েছে বিথী সেন। বিথী সেনের চলার পথ খুব একটা সহজ ছিল না। কখনও খেয়ে কখনও না খেয়ে জীবনের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেছেন তিনি। জীবন সংগ্রামের যুদ্ধে আজ বিথী সেন একজন সফল নারী।

বিথী সেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল গ্রামের মনোরঞ্জন সেন ও নাগরি সেনের মেয়ে। তার বাবা খেটে খাওয়া একজন দিনমজুর। আর মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে বিথী সেন সবার বড়। পাঁচ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ জোগাড় করতে যেখানে দরিদ্র বাবার ঘাম ছুঁটে যায় সেখানে সন্তানদের লেখাপড়ার করানোটা তাদের কাছে বিলাসিতা ছিল।

কিন্তু অদম্য ইচ্ছা আর সৃষ্টিকর্তার রহমতে বিভিন্ন লোকের সাহায্যে নিয়ে লেখাপড়া করা বিথী সেন আজ জীবনের সফল একজন নারী। ২০২৩ সালে বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদফতর আয়োজিত জয়িতা পুরস্কার হিসেবে বিথী সেন শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে জয়িতা পুরস্কারে ভূষিত হন। তার এই সফলতা ও পুরস্কার অর্জনে পুরো পরিবার গর্বিত।

নিজের জীবনের কষ্ট, সংগ্রাম আর সফলতার গল্প শোনান বিথী সেন। তিনি জানান, তার বাবা একজন দিনমজুর। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাদের লেখাপড়া ও খাবারের জোগান দিতেন। এমনও দিন গেছে তাদের ঘরে কোন খাবার ছিলনা। মা অন্যের বাড়ি থেকে যে খাবার পেতেন সেই খাবারই তারা ভাগ করে খেতেন। তার বাবা-মা দুজনই অক্ষর জ্ঞানহীন। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হওয়া মানুষ। তবুও তার মা-বাবার চাওয়া ছিল ছেলেমেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার। তারই ফলশ্রুতিতে শত কষ্ট আর বাঁধা উপেক্ষা করে আজ তার এ পর্যন্ত আসা।

সন্তান কোলে মায়ের সঙ্গে বিথী সেন বিথী সেন ২০০৬ সালে জঙ্গল সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০০৮ সালে মাগুরা আদর্শ কলেজ থেকে এইচএসসি ও যশোর এমএম কলেজ থেকে দর্শন বিষয়ের ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

বিথী সেন তার গল্প শোনাতে গিয়ে জানান, আত্মীয় স্বজন, শিক্ষক ও সহপাঠিদের সহযোগিতায় কোন রকম দিন পার করেছে সে। কখনও স্বজনদের টাকা কখনও নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে লেখাপড়া ও নিজের খরচ চালিয়েছে সে। স্বজনরাও মাঝে মাঝে টাকা দিতে গড়িমসি করতো। কিন্তু কখনও হাল ছাড়েননি সে। হতাশ হয়ে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে আসত তার বাবা-মার জীর্ণশীর্ণ দেহ ও শুকনো মলিন মুখখানা। তখনই আবার নতুন উদ্দামে পথচলা শুরু করতেন। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বাড়ির সকল সদস্যদের পুরাতন কাপড় কিনে ব্যবহার করেছেন সে। নতুন পোশাক বলতে সে স্কুল ড্রেসকেই বুঝত।

সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে বিথী সেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, তার কষ্টের কথা জানতে পেরে মাগুরা আদর্শ কলেজের তখনকার অধ্যক্ষ তাকে নতুন একসেট বই কিনে দেন এবং কলেজের বেতন মওকুফ করে দেন। এরপর থেকেই তার শিক্ষা জীবনের চলার পথ অনেকটা সহজ হয়ে যায়। এখান থেকে এইচএসসি পাস করার পর সে ভর্তি হন যশোর মাইকেল মদুসূদন মহাবিদ্যালয়ে।

টাকার অভাবে বাইর থাকার সামর্থ না থাকায় একবুক আশা নিয়ে ওঠেন পিসাতো বোনের বাসায়। কিন্তু তার পিসাতো বোন চাকরি করায় তাদের বাসার সকল কাজ ও বাচ্চাকে দেখাশুনা করতে হত তাকে। ফলে সে নিয়মিত ক্লাস করতে পারত না। তাকে কাজের লোক হিসেবে রেখেছিল। নিয়মিত ক্লাস করতে না পারায় তার প্রথম বর্ষের ফলাফর খারাপ হয়। পিসাতো বোনের কথা অমান্য করে সে দ্বিতীয় বর্ষে নিয়মিত ক্লাস করতে থাকে। বাসার কাজ করতে না পারায় পিসাতো বোন তাকে বাসা থেকে চলে যেতে বলেন। এরপর সে তার এক বান্ধবীর সহযোগিতা নিয়ে হোস্টেলে ওঠেন এবং টিউশনি করতে থাকেন। এভাবেই চলতে থাকে তার লেখাপড়া।

লেখাপড়া শেষে বিথী সেন নেমে পড়েন কর্মসংস্থানের। যেখানেই চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখেন সেখানেই আবেদন করতে থাকেন। ২০১৯ সালে তার প্রথম চাকরি হয় সহকারী স্টেশন মাস্টার হিসেবে। কিন্তু বিথী সেনের স্বপ্ন ক্যাডার হওয়ার। স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন বিসিএস এর জন্য। অবশেষে তার সেই স্বপ্ন ধরা দেয় ৪০তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে। ২০২২ সালে ফরিদপুরের বোয়ালমারি সরকারি কলেজে সে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এখনও সেখানেই কর্মরত রয়েছেন।

২০২২ সালে সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্বামী একজন ব্যাংকার। তাদের ঘবে এক বছর বয়সের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। তার উপার্জিত টাকা দিয়ে সে তার বাবা-মা ও ভাইবোনকে সহযোগিতা করেন।

বিথী তার জীবনের গল্প শোনাতে গিয়ে সমাজের অবহেলিত দরিদ্র ও অসহায় নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোন বাধায় থেমে যাওয়া উচিত নয়। ধৈর্য্য ও সাহসের সাথে সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হবে। তিনি চান- তাকে দেখে সমাজের অন্য নারীরা যেন অনুপ্রাণিত হন, নারীরা যেন নিজের পরিচয়ে পরিচিত হতে পারেন। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারলেই সমাজ থেকে নারীর ওপর সকল নির্যাতন ও অবহেলা বন্ধ হবে।

জঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কল্লোল বসু বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিথী সেন একজন সংগ্রামী সফল নারী। সে সরকারি চাকরি পাওয়ার পর তার পরিবার এখন অনেক সুখে আছে। তার ভাই কুয়েট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পড়াশোনা শেষ করেছেন। গ্রামের সবাই এখন তাকে অনুসরণ করে।

মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আফরোজা জেসমিন বার্তা২৪.কমকে জানান, তার দফতর থেকে বিথী সেনকে সংগ্রামী সফল নারী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বিথী সেনের জীবনের গল্প যদি সবাই জানতে পারে তাহলে দেশের হাজারো অবহেলিত অসহায় নারী জেগে ওঠতে পারবে, হতে পারবে স্বাবলম্বী।

;

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নারীসমাজ এগিয়ে যাবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের নারীসমাজ এগিয়ে যাবে প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গৃহকর্মে নারীর শ্রম ও অবদানকে জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

শুক্রবার (৮ মার্চ) ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ পালন করা হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। দিবসটি উপলক্ষে তিনি বিশ্বের সকল নারীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ; এগিয়ে নিতে হবে বিনিয়োগ’ যা অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে প্রতিটি কাজে নারী-পুরুষের সম-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নারী-পুরুষ সমতা অর্জন ও নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিনিয়োগ এবং জেন্ডার-রেসপনসিভ অর্থায়নকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নারীদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য এবং ২০৪১ সালের উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিভিন্ন উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ ও নারীদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শুধুমাত্র চাকরি নির্ভর না হয়ে প্রতিটি নারী যেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে এ লক্ষ্যে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গৃহকর্মে নারীর শ্রম ও অবদানকে জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

নারী আন্দোলনের ইতিহাসে দিবসটি এক গৌরবময় দিন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ কর্মঘন্টা আর মজুরি বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে নারী আদায় করেছিল তার অধিকার। নারী তার মেধা ও শ্রম দিয়ে যুগে যুগে সভ্যতার সকল অগ্রগতি এবং উন্নয়নে করেছে সমঅংশীদারীত্ব।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ‘নারী পুনর্বাসন বোর্ড’ গঠন করেন। তিনি জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর সমানাধিকারের বিষয়টি সংবিধানে নিশ্চিত করেন।

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই শিশুর অকাল মৃত্যুরোধ, খর্বকায় শিশুর সংখ্যা হ্রাস করে শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ, মনোসামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ সাধনের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুর কল্যাণ ও কর্মজীবী নারীদের সুবিধার্থে তৈরি হয়েছে শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র। বাল্যবিবাহ, যৌতুক, মাদকসহ নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থাপন করা হয়েছে কিশোর-কিশোরী ক্লাব। জিসিএ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের উপকূলীয় এলাকায় নারীর জন্য জলবায়ু সহিষ্ণু বিকল্প জীবিকা এবং সুপেয় পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন সেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের হাতের মুঠোয় এনে দেওয়ার জন্য কাজ করছে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্প। এ সবই সম্ভব হচ্ছে সরকারের নারী বিনিয়োগবান্ধব নীতি ও নারীবান্ধব বাজেট প্রণয়নের কারণে।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে আমাদের নারীসমাজ প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, দেশের নারী-পুরুষ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলবো, ইনশাআল্লাহ ’৷

প্রধানমন্ত্রী ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৪’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

;

চট্টগ্রামে এক রাতে তিন জায়গায় আগুন

ছবি: বার্তা২৪.কম

চট্টগ্রাম নগরীতে মালবাহী রেলের দুইটি পরিত্যক্ত বগিতে ও ময়লার স্তূপে আগুনের ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাত ১১টার কিছু আগে সদরঘাট থানার এসআরবি রেল স্টেশনে রাখা দুটি বগিতে আগুন লাগে। এর আধাঘণ্টা পর নগরীর আগ্রাবাদের সিডিএ এলাকায় ময়লার স্তূপে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

রাত পৌনে ১২টার দিকে বিষয়টি বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপসহকারী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, বারেক বিল্ডিং মোড়ে দুইটি মালবাহী পরিত্যক্ত রেলের বগিতে আগুনের খবর পাওয়া গেছে। সেখানে দুটি ইউনিট পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে ময়লার স্তূপে আগুনের খবর পেয়ে আগ্রাবাদ থেকে দুটি ইউনিট যায়। আগুন কিভাবে লেগেছে সেটা জানা যায়নি।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাত আটটায় নগরের ওয়াসা এলাকায় জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ সংলগ্ন ম্যাক্স কনস্ট্রাকশনের সাইটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নির্বাপণ করেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এম ডি আবদুল মালেক।

তিনি জানান, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের মাঠে ম্যাক্স কনস্ট্রাকশনের সাইটে রাত সাড়ে সাতটার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। রাত আটটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নির্বাপণের কাজ শুরু করে। অল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

;

নরসিংদীর এক সংগ্রামী নারী আনোয়ারা খানম ডলি

ছবি: বার্তা২৪.কম

আজ জাতীয় নারী দিবস। এদেশে অনেক নারী রয়েছেন যারা স্ব-মহিমায় আত্মকর্মী হয়ে বীরত্বের পরিচয় দিয়ে সমাজের চোখে হয়েছেন সংগ্রামী নারী। তাদের খবর আমরা কজনইবা রাখি। তারা পায়না কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মাননা, আর না পেলেও হাল ছাড়েন না তারা। এরকমই একজন সংগ্রামী নারী নরসিংদীর পলাশ উপজেলার আনোয়ারা খানম ডলি। যিনি এক জোড়া কোয়েল পাখি দিয়ে আজ লাখো পাখির মালিক।

পলাশ উপজেলার পলাশের চর গ্রামে তার বসবাস। স্বামী দিদার আলম ছিলেন একজন পল্লী চিকিৎসক। তিনিও আজ প্রায় ৬ বছর হয় দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন।

ভোরে ঘুম থেকে উঠেই খামারের দেখাশোনা, পাখির খাবার, পানি, ঔষধ, রোগ নির্ণয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খামারিদের সাথে মোবাইলে সমস্যার সমাধান, পাখি, ডিম ও বাচ্চার অর্ডার নেওয়া। প্রতিদিন এসকলই করতে হয় আনোয়ারা খানম ডলিকে। তবে কারখানা থেকে খাবার আনা ও পাখি সরবরাহসহ কিছু কিছু কাজে সহায়তা করে থাকেন তার ছেলে ও কয়েকজন কর্মী।

২০০২ সালে ছেলের জন্য কৌতুহলবশত বাবার বাড়ি থেকে একজোড়া কোয়েল পাখি সংগ্রহ করেন আনোয়ারা খানম ডলি। পাখি দুটির লালন পালনের মাধ্যমে ডিম পাওয়ার আনন্দ থেকেই শুরু হয় তার কোয়েল পাখির খামার করা। শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘরেই শুরু হয় খামারটি। এভাবে কোয়েল পাখি পালন নিয়ে শুরু হয় ডলি খানমের সংগ্রাম। কোয়েল পাখির বাচ্চা সারা দেশে সরবরাহ করছেন তিনি। শুধু তাই নয়, এর আয়ের অংশ দিয়ে এক ছেলেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার পড়িয়েছেন স্বামীহারা এই নারী। আরেক ছেলেকে পড়াচ্ছেন। কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে তৈরি করেছেন দুটি বহুতল বাড়ি। কিনেছেন ডজন খানেক বাচ্চা তৈরির মেশিন, জেনারেটর ও বেশ কিছু জায়গা জমি।

হৃদয় কোয়েল হ্যাচারির মালিক আনোয়ারা থানম ডলি জানান, বিয়ের পর থেকেই তিনি তার জীবনকে সংগ্রামের পথে পরিচালিত করা শুরু করেন। তার দাবি সরকারের পক্ষ থেকে সম্মননা দিলে কাজের উৎসাহ-প্রেরণা বাড়বে আর না দিলেও কোন আপত্তি নেই।

আনোয়ারা থানম ডলির ছেলে মেহেদী হাসান হৃদয় জানান, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছেন পাখিদের পিছনে তার মা খুবই পরিশ্রম করে আসছে। সন্তানের মতো লালন-পালন করে বড় করে তুলছে পাখিদের। পাখি বিক্রির আয় দিয়ে তাদের দুই ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাতেন মা। গত ছয় বছর আগে বাবা মারা গেলে পুরো খামারটি পরিচালনায় মাকে সাহায্য করে আসছেন তিনি।

নাসিব নারী উদ্যোক্তা কাউন্সিলের নরসিংদী জেলা শাখার সাবেক সভানেত্রী কামরুন নেছা বলেন, তৃণমূল থেকে সংগ্রামী নারীদের উঠিয়ে এনে যদি সম্মাননা দেওয়া হয় তবে নতুনরা উৎসাহী হওয়ার পাশাপাশি দেশ সমৃদ্ধি হবে।

মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের নরসিংদীর উপপরিচালক সেলিনা আক্তার জানান, মহিলা বিষয়ক অধিদফতর মূলত মহিলাদের নিয়েই কাজ করে থাকে। তাই এই নারীকেও আগামী দিনে সম্মাননা দেওয়া যায় কিনা বিষয়টি দেখা হবে। সম্মাননা দিলে নারীরা কাজে উৎসাহ পায় বলেও জানান তিনি।

নারীদের শুধুমাত্র নারী দিবসে স্মরণ নয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সংগ্রামী নারীদের খোঁজে বের করে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তাদের অংশগ্রহণ আশা করেন সচেতন মহল।

;

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *