সারাদেশ

নির্বাচনে অনিয়ম ও সংঘর্ষের ঘটনায় আটক ৪৫

ডেস্ক রিপোর্ট: নিজের জমির ওপর ভবন তৈরির লক্ষে ‘ডোম ইনো’ নামের রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে প্রতারণার শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন জমি মালিকেরা। পথে বসার অবস্থা তৈরি হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

শনিবার (৯ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তারা।

লিখিত বক্তব্য তুলে ধরে ভুক্তভোগী আদনান সোবহান বলেন, তিল তিল করে কষ্টের উপার্জনে রাজধানীর বুকে একখণ্ড জমির মালিকানা লাভ করেছি আমরা। অথচ এ জমি নিয়েই আমাদের প্রত্যেকে আজ এক ভয়াবহ সংকটে বিপর্যস্ত। নিজের জমির ওপর ভবন তৈরির লক্ষ্যে ‘ডোম ইনো’ নামের রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আমাদের প্রায় পথে বসার মত অবস্থা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকায় একটি আবাসিক বহুতল ভবন নির্মাণে সাধারণভাবে তিন বছরের মত সময় লাগলেও কোম্পানিটির চরম অব্যবস্থাপনা, উদাসীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ১২ থেকে ১৬ বছরেও তা সম্পন্ন হয়নি। এমনকি চুক্তিপত্র অনুযায়ী সাইনিং মানি প্রদানের শর্ত থাকলেও সে অর্থের বড় অংশ অনেক জমির মালিক এখনও বুঝে পাননি।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, কোম্পানিটির বাস্তবায়নাধীন এমন প্রকল্পও আছে, যেখানে চুক্তি সইয়ের এক দশক পরও ভূমি উন্নয়নের প্রাথমিক কাজই শুরু হয়নি। এ দীর্ঘ সময়েও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতি সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ১০ শতাংশ। অথচ ডোম-ইনো এরই মধ্যে তাদের প্রাপ্য অংশের নির্মাণাধীন প্রায় সব ফ্ল্যাটই বিক্রি করে ফেলেছে। বিক্রয়লব্ধ অর্থ কোনো খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে, কিংবা অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে কি না তা একেবারেই অস্পষ্ট। এদিকে জমির মালিকদের পাশাপাশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ফ্ল্যাট মালিকরাও। অর্থ পরিশোধ করেও তারা নিজেদের প্রাপ্য ফ্ল্যাট বুঝে পাচ্ছেন না।

ভুক্তভোগী আদনান সোবহান বলেন, কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানিটি দিনের পর দিন, বছরের পর বছর নানা প্রতিশ্রুতি আর আশ্বাস দিয়ে চলেছে। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ভবন হস্তান্তর করতে না পারলে প্রতি মাসে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এ পর্যন্ত প্রায় কোনো জমির মালিককেই অর্থ পরিশোধ করেনি ডোম-ইনো কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে বেশ কিছু জমির মালিক কোম্পানিটির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছেন। জানা মতে, ডোম-ইনোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালামের বিরুদ্ধে ১৩৬টি মামলা হয়েছে। যদিও মামলার গতি হতাশাজনক।

তিনি বলেন, রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলির সংগঠন রিহ্যাবের কাছেও মৌখিক ও লিখিতভাবে ডোম ইনোর বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। রিহাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোনো রিয়েল এস্টেট কোম্পানির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা হিসেবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সদস্যপদ বাতিল করতে পারে সংগঠনটি। তবে এখন পর্যন্ত সে ব্যবস্থাও নেয়নি রিহ্যাব। বরং বিস্ময়করভাবে লক্ষ্য করা গেছে, গত বছর রিহ্যাব মেলার গোল্ড স্পন্সর ছিল ডোম ইনো। প্রতারণা ও অসততার মূর্ত প্রতীক এই ডোম ইনোকে রিহ্যাব কীভাবে এমন অনুমোদন দেয়, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অত্যন্ত স্বাভাবিক।

এছাড়া রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে জমির ভুয়া নকশা তৈরির মত ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আছে ডোম ইনোর বিরুদ্ধে। রাজধানীর বনানীতে এ প্রক্রিয়ায় নির্মিত একটি ভবনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ডোম ইনোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালামের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, যা বর্তমানে চলমান।

ফ্ল্যাটের ক্রেতাদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে হুমকি দিয়ে নিয়মিত টাকা আদায় করছে ডোম ইনো। টাকা প্রদানে অসম্মতি জানালে ক্রেতার নামে বরাদ্দকৃত ফ্ল্যাট বাতিলের নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির পাশাপাশি ফ্ল্যাট হস্তান্তরে অপারগতার পেছনে আর্থিক সংকটকে কারণ হিসেবে দেখানো হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। কোম্পানিটির মালিকানায় ঢাকা, মাওনা, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে বিপুল স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সংকট সমাধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

তিনি বলেন, আমরা অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণে উপলব্ধি করেছি, বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট আইনও জমি বা ফ্ল্যাটমালিক বান্ধব নয়। সেই সুযোগ লুফে নিয়ে এই কোম্পানিটি নিজেরদের খেয়াল খুশীমত ব্যবসা পরিচালনা করছে। এতে সময়ক্ষেপন হচ্ছে, কালের অমোঘ নিয়মে অনেক প্রকল্পের মূল মালিকরা নিজ ভবনে বাস করার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে এরই মধ্যে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। এখনতাদের ওয়ারিশরা এই প্রতারণার যাতাকলে প্রতিনিয়ত পিষ্ট হচ্ছেন। আমরা এই অচলাবস্থার অবসান চাই।

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার জিরো টলারেন্স অবস্থান, অসহায় মানুষদের প্রতি তার অকুন্ঠ মমত্ববোধ আমাদের আশান্বিত করে। তার আন্তরিক অভিভাবকত্বে, সহযোগিতায় আমরা হাজারো মানুষ এই ভয়াবহ দুর্বিপাকের কবল থেকে চিরতরে মুক্তি পাবো।

এ সময় ৬ দফা দাবি জানান প্রতারিত ভুক্তভোগী জমি মালিকেরা। দাবিগুলো হলো, ডোম ইনো সংক্রান্ত সংকট মোকাবিলায় একটি ‘সেল’ বা কমিশন গঠন।

প্রকল্প হস্তান্তরের সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে জমির মালিক ও ডোম ইনোর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিপত্রটি বাতিল বলে গণ্য করতে হবে। একই সাথে ডোম ইনোকে দেওয়া জমির মালিকের রেজিস্ট্রিকৃত আম মোক্তারনামাটিও বাতিল ঘোষণা করতে হবে, যাতে এর কোনো কার্যকারিতা না থাকে।

ডোম ইনো কর্তৃক জমির মালিককে প্রদানকৃত যে সব চেক ব্যাংকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটির বিপরীতে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ ধার্য করতে হবে।

জমি ও ফ্ল্যাটমালিকদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব সরকারি-বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সহযোগিতা কামনা।

বর্তমান সংকট নিরসনে প্রধান বিচারপতিকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ডোম ইনোর বিরুদ্ধে একটি রুল জারি করার বিনীত আহবান জানান তারা।

আইন, গণপূর্ত ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে শক্ত হাতে এ সংকট সমাধানের অনুরোধ জানানো হয়।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *