সারাদেশ

প্রতিটি রাস্তার আইডি নম্বর থাকতে হবে: তাজুল ইসলাম

ডেস্ক রিপোর্ট: স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রতিটি রাস্তার আইডি নম্বর থাকতে হবে। তাহলে আমার অফিস আপডেট থাকবে যে, এই রাস্তা কতদিন আগে নির্মাণ করা হয়েছে এবং আবার কতদিন পরে নির্মাণ করতে হবে। তাহলে এ সুবিধাটা হবে যে, বাজেটের ব্যবস্থাটা রাখতে পারবেন, একই রাস্তা বারবার নির্মাণ করার সুযোগ থাকবে না, কোনোভাবে ডিমলিউশনের সুযোগ থাকবে না এবং মেল প্র্যাকটিস বন্ধ হবে।

শনিবার (৯ মার্চ) দুপুরে নগরীর পাঁচলাইশের কিংস অব চিটাগং ক্লাবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ষষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর একটি উন্নয়নের যাত্রা শুরু। সারা বাংলাদশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। চট্টগ্রামের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এটাকে দ্বিতীয় রাজধানী মনে করা হয়। এজন্য বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমরা ২০৩০ সালে মধ্য আয়ের দেশ হব। এই জন্য একটি পঞ্চবার্ষিকী নকশা করা হয়েছে, সেটির আকার অনুযায়ী পরিকল্পনা করা হয়। আমরা স্বপ্ন দেখছি উন্নত বাংলাদেশের। এই উন্নত বাংলাদেশ হতে হলে চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়। বিভিন্নভাবে চট্টগ্রামের গুরুত্ব আছে। চট্টগ্রামকে ইকনোমি অব বাংলাদেশ হিসেবে কনসিডার করা হত। কারণ একমাত্র সমুদ্রবন্দর। যদিও বর্তমানে আমাদের আরও কিছু নতুন সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু চট্টগ্রামের গুরুত্ব এরপরেও কমে যায়নি এবং যাবে না। চট্টগ্রামের উন্নয়নে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে।

তিনি স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশাশী করার পথ বাতলে দিয়ে বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রকৃত অর্থে শক্তিশালী হতে হলে তাদের আয়বর্ধন করতে হবে এবং সেখান থেকে নিজস্ব ব্যয় তাদের নিজেদেরই বহন করতে হবে। স্থানীয় উৎস থেকে অর্থ আহরণ করতে হবে। প্রকল্প অনুমোদন এবং অর্থ বরাদ্দ সরকার দেবে, ঠিক আছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এসে সেটা বাস্তবায়ন করে দেব না। সেটা বাস্তবায়ন ও সুফল ভোগের উপযোগী করার দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে নিতে হবে।

‘চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য ৪ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প আমি প্রস্তাব দিয়েছি। চট্টগ্রামকে বিভিন্ন ক্লাইমেটিক থ্রেড থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প আগেও দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। তারা তাদের আয়বর্ধন করতে হবে। তাদের নিজস্ব ব্যয় বহন করতে হবে ও উন্নয়ন করতে হবে। এটা করতে হলে স্থানীয় উৎস থেকে অর্থ আয় করতে হবে। কিন্তু মানুষের কাছে তো আয় নাই। সেবা দিয়ে আয় নিবেন।’

মশার কথা ‍উল্লেখ করে তিনি মন্ত্রী বলেন, হাজার মশা আছে পৃথিবীতে। মশা আমাদের দেশে তিন ধরণের মশা আছে। এনাফোলিক্স, থিউলিস, এডিস। আগে ছিল না। ২০১৯ সালে মন্ত্রী হওয়ার পর এডিসের প্রাদুর্ভাব দেখেছি। এটা ডেঙ্গু রোগের বাহক। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মরে গেছে। সারা পৃথিবীর অনেক দেশে আমি গিয়েছি। আমি প্রথম এটার প্রাদুর্ভাব দেখেছি এটা ঢাকাতে। গত বছর এটা লক্ষ্য করা গেছে। এডিস মশা হয় পরিষ্কার পানিতে। এটাকে এলিট মশাও বলা হয়। সিটি করপোরেশন ফগিং করে, স্প্রে করে। এত কিছু করেও সেটা মোকাবেলা করা যবে না। তিনদিনের জমা পানি যদি ফেলে দেন তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করবে বলে আশা রাখি। অন্য মশাগুলো স্প্রে করে মারতে পারবেন।

চসিক মেয়রের দাবির প্রেক্ষিতে নগরীর নিউমার্কেট, ইপিজেড ও বহদ্দারহাটে আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য প্রিলিমিনারি স্টাডি করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনসহ প্রকল্প প্রস্তাবনা দাখিলের নির্দেশ দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বিগত সময়ে চেয়ে আমরা ২৫ কোটি টাকা বেশি হোল্ডিং ট্যাক্স এবার আদায় করেছি। আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আমরা পেয়েছি, এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আপনি (মন্ত্রী) বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন বলেই পেয়েছি। চট্টগ্রামের কোনো সমস্যা নিয়ে আমরা গেলে আপনি নিরাশ করেন না। চট্টগ্রামের সব সমস্যা আপনি অবগত আছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নিজের অর্থায়নে ৮২টা স্কুল পরিচালনা করছে। চিকিৎসা কেন্দ্র, কম্পিউটার ট্রেনিং, নার্সিং ইনস্টিটিউট আছে। আপনার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এগিয়ে যাবে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, আপনি আমাদের পাশে থাকবেন। চট্টলবাসী আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।

সমাবেশে চসিকের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে। একটা সময় সিটি করপোরেশনে অফিশিয়াল কাউন্সিলর ছিল। এ অফিশিয়াল কাউন্সিলর হতো বন্দরের চেয়ারম্যান, ওয়াসার চেয়ারম্যান, সিডিএর চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রধান কর্মকর্তারা। তাদের সিটি করপোরেশনের কাছে জবাবদিহি করতে হত। বিএনপি সরকার ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে সেটা বিলুপ্ত করে দেয়। আমার দাবি, আবারও সে অফিশিয়াল কাউন্সিলর ব্যবস্থা চালু করা হোক। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, ঢাকার সব মার্কেট চালায় সিটি করপোরেশন। আর চট্টগ্রামে চালায় সিডিএ। আমি অবিলম্বে দাবি জানাই, সব মার্কেট সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা হোক।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফ, আবদুচ ছালাম ও মহিউদ্দিন বাচ্চু, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শের আলী, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রাজীব রঞ্জন, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. তৌহিদুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র আফরোজা কালাম, মো. গিয়াস উদ্দিন ও আবদুস সবুর লিটন এবং নগর পরিকল্পনাবিদ দেলোয়ার মজুমদার।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *