সারাদেশ

নামাজে মনোযোগ বাড়ানোর ৫ উপায়

ডেস্ক রিপোর্ট: নামাজে মনোযোগ বাড়ানোর ৫ উপায়

মুমিন জীবনের অন্যতম ইবাদত নামাজ

নামাজ এমন একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। এই ইবাদত আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কথা বলার এক অনন্য মাধ্যম। মুমিন জীবনের অন্যতম ইবাদত হলো- নামাজ, এটা ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ; কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে নামাজের। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হবে।’ -সুনানে তিরমিজি

দৈনন্দিন জীবনে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে নানাবিধ চিন্তা-ভাবনা ও অলসতা কারণে নামাজে অমনোযোগীতা বাড়ে। এর প্রধান কারণ নামাজে একনিষ্ঠতার অভাব ও মনোযোগ না থাকা। একনিষ্ঠতা ছাড়া নামাজ আল্লাহ কবুল করবেন না। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমারা একনিষ্ঠতার সঙ্গে আমার ইবাদত করো।’ -সুরা বাইয়্যিনাত : ০৫

ইসলামি স্কলাররা নামাজে পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ সাধনে পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন।

১. অন্তরে এটা অনুভব করা, এই ওয়াক্ত নামাজই আমার শেষ নামাজ। মৃত্যু এমন একটি বিষয়, যা কখন আসে- বলা যায় না৷ নামাজে যখন দাঁড়াবে, তখন এটা অনুভব করতে হবে- এটাই আমার বিদায়ী নামাজ। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তুমি নামাজে দাঁড়াও, তখন তুমি বিদায়ী নামাজ পড়ো।’ -মুসনাদে আহমদ

২. নামাজের সময় এটা অনুভব করা, নামাজ হলো- আল্লাহর সঙ্গে বান্দার কথোপকথনের মাধ্যম। নামাজের মাধ্যমে বান্দা ও মনিবের মাঝে কথা বলা যায়। যদিও সেটা আমাদের সাধারণ কানে শোনা যায় না, তবুও এই মনোভাব ধারণ করতে হবে অন্তর দ্বারা, আমরা কথা বলছি মহান আল্লাহর সঙ্গে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘বান্দা যখন নামাজ পড়ে তখন তা আমি আধাআধি ভাগ করি এবং তার কথার উত্তর দিয়ে থাকি।’ -সহিহ বোখারি

বান্দা যখন বলে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি এই বিশ্বজগতের মালিক। তখন আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার প্রশংসা করছে। এভাবে তিনি প্রতিটি কথার উত্তর দিয়ে থাকেন। এই অনুভূতি অন্তরের মধ্যে লালন করতে পারলে নামাজে মনোযোগ বাড়বে।

৩. ধীরস্থির হয়ে নামাজ আদায় করা। নামাজ মুমিন জীবনে সবরের (ধৈর্য) শিক্ষা দেয়। নম্রভদ্র হয়ে বিনয়ের সঙ্গে আদায় করতে হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা তাদের নামাজে বিনয় অবলম্বন করে।’ -সুরা মুমিনুন : ০২

যত্নসহকারে নামাজ আদায় না করলে নামাজে মনোযোগ সাধন হবে না। কেরাত, রুকু ও সেজদায় ধীরস্থিরতা অবলম্বন করতে হবে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় চোর ওই ব্যক্তি যে, ধীরস্থিরভাবে নামাজ পড়ে না ও রুকু সেজদায় দেরি করে না।’ -তাবারানি

শুধু রুকু-সিজদা নয়, নামাজের তাসবিহ-তাহলিলগুলো অর্থসহ জানার মাধ্যমে ধীরস্থিরভাবে নামাজ আদায় করতে হবে। যার ফলে মনোযোগ অন্যদিকে ঝুঁকে পড়ার সুযোগ থাকবে না।

৪. নামাজের সময় এটা অনুভব করা, আমি আল্লাহর সঙ্গে দেখা করছি। আল্লাহতায়ালা সার্বক্ষণিক আমাদের প্রতি দৃষ্টি রাখেন, কিন্তু দুনিয়ার কোনো চোখ দ্বারা তাকে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব নয়। নামাজের ক্ষেত্রে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এমনভাবে, যেন তাকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন।’ -সহিহ বোখারি

আল্লাহর সামনে যখন মাথানত করতে হয়, তখন এই ভয়ে করতে হবে- তিনি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন। পৃথিবীর সব চোখ ফাঁকি দেওয়া যায়, কিন্তু আল্লাহর চোখ কখনও ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয়। বান্দা যখন সেজদা দেয় তখন, আল্লাহর কুদরতি পায়ে সেজদা দেয়। সুতরাং এক্ষেত্রে খুবই সজাগ থাকতে হবে। এই অনুভব হৃদয়ে লালন করতে পারলে, নামাজে মনোযোগ বাড়বে।

৫. নামাজে মনোযোগ বাড়ানো সর্বশেষ কৌশল হলো, পূর্ববর্তী লোকদের থেকে শিক্ষাগ্রহণ। পূর্ববর্তী লোক হলো- সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি, তাবে-তাবেয়িন ও ইসলামি স্কলাররা। কারণ, তারা সর্বত্র আল্লাহকে বেশি ভয় করে।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে নামাজ পড়তেন, সাহাবারা নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তাদের থেকে ধারাবাহিকভাবে আলেমরা শিক্ষালাভ করেছেন। তাদের এই শিক্ষা দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করতে পারলে নামাজে একাগ্রতা, বিনয়ীভাব ও পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ লাভ সম্ভব হবে।

অনেক ঘটনার নীরব সাক্ষী আল-আকসা

পৃথিবীর অনেক ঘটনার নীরব সাক্ষী আল-আকসা

ফিলিস্তিন এবং সিরিয়া যদিও ভৌগোলিকভাবে আরব রাষ্ট্র, কিন্তু তা রোমানদের দখলে ছিল। ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর সময়ে ফিলিস্তিনের কিছু অংশ মুসলিমরা বিজয় করেন। ইয়ারমুক যুদ্ধের পর মুসলিম সেনাপতি আমর ইবনুল আস (রা.)-এর মাধ্যমে ৬৩৭/৩৮ খ্রিস্টাব্দে পুরো ফিলিস্তিন বিজিত হয়। সেই বিজিত অঞ্চলে মুসলিমরা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

মুসলিম বিশ্বের খলিফা নিজে উপস্থিত হয়ে জেরুজালেমবাসীকে অভয় দিয়ে আসেন। তাদেরকে স্বাধীনভাবে ধর্মপালনের অধিকার এবং জান-মালের নিরাপত্তা দেন। বিজিত অঞ্চল থেকে তাদেরকে বিতাড়িত করেননি।

অপরদিকে ১০৯৫ সালে থেকে শুরু হওয়া খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের বর্বরতার দৃশ্য পৃথিবীর ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। এমনকি ক্রুসেডের নতুন রূপের বরবর্তা আজকের পৃথিবীকে বিষময় করে তুলেছে। ৩টি স্তরে বিভক্ত ৮টি ক্রুসেডের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১০৯৫-১১৪৪ খ্রিস্টাব্দে ক্রুসেডাররা এশিয়া মাইনর ও রোম দখল করে নেয়। ১০৯৮ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়া এবং ১০৯৯ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম দখল করে। ১১০০-১১০৯ খ্রিস্টাব্দ জেরুজালেমের খ্রিস্টান রাজা বলডুইন স্থানীয় জাফা, আক্কা, বৈরুত এবং ত্রিপলি দখল করে৷ সেই যুদ্ধগুলোতে তারা দশ হাজারের অধিক নারী ও শিশু হত্যা করে। ষষ্ঠ ক্রুসেডে ১২১৬-১৭ খ্রিস্টাব্দে পোপ তৃতীয় ইনসেন্টের অধীনে আড়াই লাখ খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধা সিরিয়ায় উপস্থিত হয়ে মিসরের দিকে ডামিয়েটা আক্রমণ করে সেখানকার সত্তর হাজার অধিবাসীকে হত্যা করে। তারা মুসলিমদের ক্যারাভানে আক্রমণ করে মুসলিম নারীদের ধরে নিয়ে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করতো।

তাদের এমন নৃশংস ঘটনার সমালোচনায় ঐতিহাসিক মিলম্যান মাইকদ বলেন, ‘যুবতীদের ওপর সদর রাস্তায় বীভৎস অত্যাচার করা হতো। গণিকারা কুৎসিত গানে পবিত্র ধর্মগৃহ অপবিত্র করতো এবং খ্রিস্টান যাজকরা বিপুল লুণ্ঠিত দ্রব্য গ্রহণ করার নিমিত্তে আগ্রহ সহকারে উপস্থিত হতো।’

ঐতিহাসিক মিলস বলেন, ‘প্যালেস্টাইনের ব্যভিচারী, বিশ্বাসঘাতক এবং উৎপীড়ন খ্রিস্টানরা আবার পবিত্র ভূমির রক্ষক বলে পরিগণিত হতো।’

এই ক্রুসেড পশ্চিমাদের জন্য এক কলঙ্কময় ইতিহাস হয়ে আছে। ক্রুসেডের এই বর্বরতা থেকে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করতে এসেছিলেন ইমামুদ্দিন (রহ), নুরুদ্দিন (রহ.) ও সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী (রহ.)। সালাহউদ্দিন আইয়ুবী (রহ.) যখন জেরুজালেমে প্রবেশ করেন, তখন তিনি দেখতে পান; আল-আকসার ভেতরেও ধর্ষিতা মুসলিম নারীর লাশ। খ্রিস্টানদের এসব নির্যাতনের প্রতিশোধের বদলে সালাহউদ্দিন আইয়ুবী তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। যা মক্কা বিজয়ের মতো ইতিহাসের আরেকটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শান্তি ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করেছিলেন মুসলিম বিশ্বকে।

কিন্তু মুসলিম বিশ্বের দূর্বল নেতৃত্বের কারণে নতুনরূপে ক্রুসেড আবার আক্রমণ করছে আল-আকসাসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে। তারা সিরিয়া ও ইরাকে হাজার হাজার নারী, শিশুকে হত্যা করেছে। আফগানিস্তানের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে বৃষ্টির মতো বোমাবর্ষণ করেছে। অনাহারী আফ্রিকানদের খনিজসম্পদ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

সর্বশেষ ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ কিলোমিটার প্রস্তের গাজা উপত্যকার অধিবাসীদের সর্বশক্তি দিয়ে হত্যা করে যাচ্ছে প্রতিদিন। নারী ও শিশুদের বন্দী করে উল্টো গাজাবাসীদেরকেই মিডিয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা হচ্ছে। ইসরায়েলি আক্রমণে দালানের ধ্বংসস্তুপের নিচে পড়ে থাকা শহীদ বাবার মুখে হাত বুলাতে বুলাতে ছোট্ট শিশুর আর্তচিৎকার যেন- এ সময়ের কোনো এক সালাহউদ্দিনকে আহ্বান করছে।

হ্যাঁ, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক যুগে একেক সালাহউদ্দিনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ এই উম্মতের জন্য প্রতি একশত বছরের শিরোভাগে এমন লোকের আবির্ভাব ঘটাবেন, যিনি এই উম্মতের দীনকে তার জন্য সঞ্জীবিত করবেন। -সুনানে আবু দাউদ : ৪২৯১

;

মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক

মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে পদযাত্রা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ কারাবন্দী আলেমদের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। আগামী ১০ নভেম্বর সারা দেশে বিক্ষোভ ও ৮ নভেম্বর ঢাকায় ছাত্র সমাবেশ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগর আয়োজিত পদযাত্রার আগে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক ডাক দিয়েছেন, বাংলাদেশের আপামর জনতা রাস্তায় নামতে শুরু করেছে। তখনই তাকে গ্রেফতার করে জেলে ভরে রেখেছে। এরপর আমরা যতবার জামিনের জন্য আবেদন করেছি, নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।

বক্তারা আরও বলেন, জনগণ রাস্তায় নেমে মাওলানা মামুনুল হককে মুক্ত করবে- ইনশাআল্লাহ।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন বলেন, মাওলানা মামুনুল হককে বছরের পর বছর বন্দী করে রাখা হতে পারে, কিন্তু তার আদর্শকে বন্দী করতে পারবে না।

বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরের সভাপতি মাওলানা জাহিদুর জামানের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি পরিষদের সদস্য মাওলানা আবুল হাসনাত জালালী, প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা রাকিবুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস গাজীপুরের সভাপতি হাফেজ কাজী নিজামউদ্দিন প্রমুখ।

সমাবেশ শেষ তারা পদযাত্রা করেন। পদযাত্রাটি বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইট থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগরের দিকে যায়।

;

জুমার দিনের বৈশিষ্ট্য ও আমল

জুমার দিনের অন্যতম আমল সুরা কাহাফ পাঠ করা

সৃষ্টিজগতের শুরু থেকে জুমার দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। আবু লুবাবা বিন আবদুল মুনজির (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার দিনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। তা হলো- এক. আল্লাহতায়ালা এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। দুই. আল্লাহতায়ালা এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে জমিনে অবতরণ করিয়েছেন। তিন. এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে মৃত্যু দিয়েছেন। চার. এই দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা কিছুই প্রার্থনা করবে তিনি তা দেবেন। যতক্ষণ সে হারাম কিছু প্রার্থনা করবে না। পাঁচ. এই দিনে কেয়ামত সংঘটিত হবে।’ -ইবনে মাজাহ : ৮৯৫

নিম্নে জুমার দিনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

জুমার নামাজ আদায়ের সওয়াব
হজরত সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহতায়ালা তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গোনাহ মাফ করবেন।’ -সহিহ বোখারি : ৮৮৩

জুমার দিন গোসল করা
জুমার দিন গোসল করা ও আগে আগে মসজিদে যাওয়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। হজরত আউস বিন আউস সাকাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালো করে গোসল করল, দ্রুততর সময়ে মসজিদে গেল ও (ইমামের) কাছাকাছি বসে মনোযোগসহ (খুতবা) শুনল, তার জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৩৪৫

আগে মসজিদে প্রথমে প্রবেশ করা
জুমার দিন মসজিদে আগে প্রবেশ করা ও মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনার বিশেষ গুরুত্ব আছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, অতঃপর প্রথমে মসজিদে গেল সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে এরপর মসজিদে গেল, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল। আর যে এরপর ঢুকল, সে যেন ছাগল কোরবানি করল, এরপর যে ঢুকল সে যেন মুরগি কোরবানি করল, আর যে এরপর ঢুকল সে ডিম সদকা করল। অতঃপর ইমাম খুতবার জন্য এলে ফেরেশতারা আলোচনা শোনা শুরু করে।’ -সহিহ বোখারি : ৮৪১

বেশি বেশি দোয়া করা
জুমার দিন একটি সময় আছে, যখন মানুষ আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আসরের পর অনুসন্ধান করো।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১০৪৮

সুরা কাহাফ পাঠ করা
জুমার অন্যতম আমল সুরা কাহাফ পাঠ করা। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যে ব্যক্তি অজুর পর এই দোয়া পড়বে তার নাম একটি চিঠিতে লেখা হবে। অতঃপর তাতে সিল দেওয়া হবে, যা কিয়ামত পর্যন্ত আর ভাঙা হবে না।’ -সহিহ তারগিব : ১৪৭৩

বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা
জুমার দিন নবীজি (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা কর্তব্য। হজরত আউস বিন আবি আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়ো। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ সাহাবারা বললেন, আমাদের দরুদ আপনার কাছে কীভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনার দেহ একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জমিনের জন্য আমার দেহের ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১০৪৭

;

পীরে কামেল প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানের ইন্তেকাল

প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক সহকারী অধ্যাপক প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সর্বমহলে তিনি প্রফেসর হজরত হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার ছেলে মুহাম্মদ আরিফুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ঢাকার ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। ডা. রাশিদুল হাসানের অধীনে তার চিকিৎসা চলছিল। বুকে প্রচণ্ড কফ জমেছিল, অক্সিজেন উঠানামা করছিলো।

প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। পরে ১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)।

ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে কর্মজীবন শুরু করেন সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনে। পরে যোগ দেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম। প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। এর পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।

প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।

তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।

হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়িয়েছেন আমৃত্যু।

একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না।

তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।

;

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *