সারাদেশ

১২ মার্চ চালু হচ্ছে বুড়িমারী এক্সপ্রেস

ডেস্ক রিপোর্ট: নিমতলী থেকে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের মতো যত ঘটনা আছে সেগুলোর পরে অবহেলাজনিত মৃত্যুর কারণে মামলা করা হয়৷ তবে এসব ক্ষেত্রে অবহেলাজনিত মৃত্যুর মামলা না করে বেআইনি কার্যকলাপের মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ।

শনিবার (৯ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নিমতলী থেকে বেইলি রোডঃ অগ্নিকাণ্ডের বাস্তবতা ও করনীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড আ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট,বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, আ্যসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড আ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি, বিলস,শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরাম, সেফটি আ্যান্ড রাইটস সোসাইটি যৌথভাবে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে৷

কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, নিমতলী থেকে বেইলি রোডে আগুন লাগার পেছনে অবহেলা জড়িত নয়। এটির সঙ্গে বেআইনি কার্যকলাপ জড়িত। অবহেলাজনিত কারণে মামলা করে সময় নষ্ট করার সময় বোধহয় শেষ হয়ে গেছে। বেআইনি কার্যকলাপের জন্য মামলা করতে হবে। যে মামলার মাধ্যমে দন্ড হবে, অর্থদন্ড হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে এমন মামলা করতে হবে।

তিনি আরোও বলেন, ঢাকা শহরে বেশিরভাগ অগ্নিকান্ড গুলো ইমারত জনিত কারণেই হয়েছে। একটি ইমারত তৈরী করতে হলে রাজউকের অনুমতি লাগে। এই অনুমতি কারা দেয় এবং কারা এটি মনিটরিং করে এগুলো চিহ্নিত হওয়া প্রয়োজন। একটি জমির উপরে ইমারত তৈরী করতে যে আইন আছে সে আইন পাশ করতে এবং ইমারতের যে নকশা আছে সেটি দিতে রাজউকের কাছে যেতে হয় তারা কতটুকু অনুমতি দিয়েছে।

মতবিনিময় সভায় এসব অগ্নিকাণ্ডের কারণ, আগুন লাগার পরের অবস্থা ও তদারকি সংস্থাগুলোর করনীয় এবং সীমাবদ্ধতা নিয়েও আলোচনা করেন বক্তারা৷ এসময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করেন নগরবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব।

তিনি বলেন, এই নগরীর সব থেকে বেশি অসহায়ত্বের কারণ কেন্দ্রীভূত সরকার ব্যবস্থা ও পুঞ্জিভূত সম্পদ। ফলে বিশৃঙ্খলভাবে পুরো নগরী অতি জনঘনত্বের নগরীতে পরিণত হয়েছে। এমন ঘনবসতিপূর্ণ নগরে ফায়ার ব্রিগেডে আগুন নেভানোর জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্র আনা হয়েছে। অথচ এই সংস্থা ইন্সপেক্টরদের মাত্র ৪৬ শতাংশ পদায়ন আছে।বাদ-বাকি পদায়নের জন্য আবেদন করলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বছরের পর বছর সেটি ঝুলিয়ে রেখেছে। মাত্র ৪৬ শতাংশ মানুষ নিয়ে পুরো নগরী কি সুরক্ষিত হবে?

ভবন মালিক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কেউই আইন মানে না বলে মন্তব্য করেছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক প্রকৌশলী ফরিদ আহম্মদ। তিনি বলেন, চুড়িহাট্টা থেকে বেইলি রোড পর্যন্ত যতগুলো অগ্নিকান্ড হয়েছে আমরাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নিয়ে সেগুলোর তদন্ত করেছি। তদন্তের উদ্দেশ্য ছিল এধরনের দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করা। ঢাকা শহরের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। আমাদের সবকিছুর আইন আছে কিন্তু সেটি মানুষ মানছে না।

এসব ঘটনার আগে ও পরে আদালত বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়। তবে এসব নির্দেশনা কেউই মানে না বলে আক্ষেপ জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, দোষীরা আদালতের নির্দেশ কোনোভাবেই মেনে চলে না। আদালত বারবার বলেছে বেইলি রোডের আগে যে অগ্নিকাণ্ড গুলো হয়েছে তখন সরকার যে কমিটি গঠন করেছে সেই রিপোর্ট গুলো আদালতের সামনে জমা দেওয়া হয়নি। যখন চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে তখন অনেকগুলো ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা জমা দিয়েছিল। চুড়িহাট্টার একটা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আজ পর্যন্ত সেই ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি। কিন্তু সেই ব্যাংকগুলোর অফিসিয়াল সাইটে উল্লেখ করা আছে তারা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে টাকা জমা দিয়েছে।

নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেন ঢাকা সিভিল ডিফেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ারুল হক বলেন, বাংলাদেশে যখন মহুকুমা ছিলো তখন যে পরিমান জনবল ছিলো আমরা এখনো সেই জনবল নিয়ে চলতেছি। যার কারণে আমাদের জনবলের অনেক অভাব রয়েছে। যখন কোনো ভবনে আগুন লাগে তখন উৎসুক জনতার ভিড়ের কারণে আমাদের কাজ করতে অসুবিধা হয়। ঢাকায় ওয়াসার যতগুলো পাম্প হাউজ আছে, সেগুলোতে যদি একটি অথবা দুইটি করে ফায়ার হাইড্রেন্ট পয়েন্ট স্থাপন করা হয় তাহলে আমদের জন্য আগুন নেভানোর কাজ অনেক সহজ হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড আ্যান্ড সার্ভিসেস (ব্লাস্ট)-এর আইন বিষয়ক পরিচালক মো. বরকত আলী। এসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরে অধিকারভিত্তিক সংগঠন গুলোর করা মামলায় বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন বেলা ও ব্লাস্টের আইনজীবীরা। আরও বক্তব্য রাখেন ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন,এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদাসহ আরও অনেকে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *