সারাদেশ

দুর্যোগ সহনশীল জাতি গঠনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনে অবদান রাখুন: রাষ্ট্রপতি

ডেস্ক রিপোর্ট: ফেনীতে প্রাণিসম্পদ বিভাগের জনবল-কাঠামোয় অনুমোদিত পদ ৮৩টি, যার মধ্যে বর্তমানে জনবল আছে ৪৮ জন। অর্থাৎ প্রায় ৩৫টি পদ শূন্য। এরমধ্যে জেলার ৬ উপজেলার ৫টিতেই নেই কোন পশুচিকিৎসক। এতে করে গবাদি পশুর কোন সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসক দেখানোর সুযোগ পান না পশুপালনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

খামারিরা বলছেন, যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক বা ফোনকলে শহর থেকে কাউকে এনে টাকা দিয়ে চিকিৎসা করান তারা। সরকারি চিকিৎসক আছেন, এটাও জানেন না অনেকে।

জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ফেনী জেলায় গবাদিপশুর মধ্যে গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল রয়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৯২৩টি এবং হাঁস-মুরগি রয়েছে ৯৯ লাখ ৭৭ হাজার ২৭১টি। আর এসব পশু চিকিৎসায় ছয় উপজেলার ফুলগাজী ব্যতীত অন্য পাঁচটিতেই নেই চিকিৎসক। এতে ব্যাহত হচ্ছে পশুচিকিৎসা কার্যক্রম।

ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর এলাকার আবদুর রহিম বলেন, বাড়িতে ৬টি গরু ও ৭টি ছাগল পালন করছি। রোগবালাই সম্পর্কে তেমন ধারণা না থাকায় প্রায় সময় পশু হাসপাতালে আসা হয়। এখান থেকে কিছু ওষুধ লিখে দিলে বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। সরকারিভাবে যদি আরও সহযোগিতা পাওয়া যায় আমরা উপকৃত হব।

ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বীরচন্দ্র নগর গ্রামের নূর নাহার বেগম বলেন, গত ১৫ বছর ধরে বাড়িতে গরু পালন করে আসছি। যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক বা ফোনকলে শহর থেকে কাউকে এনে টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাই। কোন অফিস থেকে কিছু পাইনি। এছাড়া এসব কিছু শুনিওনি কখনো।

সদর উপজেলা পশুহাসপাতালে নিজের পোষা বিড়ালের চিকিৎসা নিতে আসেন শহরের বাসিন্দা ঝিমু সুলতানা। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে ভ্যাকসিনগুলো দেওয়া হয়। অন্যান্য ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। এছাড়া চিকিৎসক না থাকায় স্বয়ং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিজেই চিকিৎসা দিয়েছেন। চিকিৎসক থাকলে আমরা আরও ভালো সেবা পেতাম।

ছাগলনাইয়া উপজেলার নিজকুঞ্জরা গ্রামের খামারি ইকবাল হোসেন বলেন, খামারে বিভিন্ন সময়ে ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মুরগি মারা যায়। তখন অভিজ্ঞ কাউকে এনে টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। কখনো কোন দফতরের সুযোগ-সুবিধা পাইনি। এসব বিষয়ে কেউ কখনো জানতেও চায়নি। সরকারিভাবে যদি আমাদের ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান ও উৎপাদিত পণ্য বিক্রিতে সহায়তা করা হয়, তাহলে আরও এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

দাগনভূঞা উপজেলার বাসিন্দা ইয়াকুব নবী বলেন, কখনো কোন ধরনের সহায়তা পাওয়া দূরের কথা, এসব বিষয়ে শুনিওনি। গরুর কোন সমস্যা দেখা দিলে গ্রাম্য চিকিৎসক বা ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে খাওয়াই। প্রজননকালে এনজিওর লোকদের বাড়িতে এনে একহাজার থেকে ১২শ টাকা দিয়ে কৃত্রিম প্রজনন করাতে হয়।

যোগাযোগ দূরত্বের কারণে ফেনীর সমুদ্র উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীর প্রাণিসম্পদ বিভাগের সেবাবঞ্চিত চরাঞ্চলের মানুষ। সরকারি ওষুধ, চিকিৎসা, প্রজনন সেবাসহ কোনো সেবাই পাচ্ছে না দেড় লাখেরও বেশি গবাদিপশু। এতে বেসরকারি বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চড়া দামে সেবা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন পশুপাখির খামারিরা।

চরচান্দিয়া এলাকার খামারি আহমেদ হোসেন বলেন, আমরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে টিকে উঠতে পারলেও রোগবালাইয়ের কাছে হার মানতে হচ্ছে। সঠিক চিকিৎসা করতে পারছি না। চরাঞ্চল থেকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের দূরত্ব ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার। গবাদিপশু আনা-নেওয়ার জন্য খরচ গুনতে হয় হাজার টাকার বেশি। সাথে ওষুধ খরচ আছে। এজন্য নিজেরাই অভিজ্ঞতা থেকে চিকিৎসা করি।

চর খন্দকারের মহিষ খামার মালিক শাহজালাল ভূঞা বলেন, পশুহাসপাতালটি উপজেলার এক প্রান্তে হওয়ায় সোনাগাজীর তিন ভাগ মানুষ এ সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। উপজেলা সদরে প্রাণিসম্পদ বিভাগের একটি উপকেন্দ্র করা হলে সবাই সমানভাবে সুবিধা ভোগ করতে পারবে।

সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালে আসা অসুস্থ পশুর চিকিৎসা দিচ্ছেন উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) মো. ছাদেক মজুমদার। তিনি বলেন, জনবল না থাকায় আমি বাড়তি দায়িত্ব পালন করছি। ভেটেরিনারি সার্জন থাকলে আমাকে চিকিৎসা করতে হতো না। ৩ জনের দায়িত্ব একজনকে পালন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। শূন্য পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হলে সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি কাজের পরিধিও বাড়বে।

ফেনী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় ১১টি সৃষ্ট পদের মধ্যে ভেটেরিনারি সার্জন, কম্পাউন্ডার ও ড্রেসারসহ তিনটি পদই শূন্য। পশুচিকিৎসা সম্পর্কিত প্রধান তিনটি পদে কোন জনবল না থাকার পরেও আমরা সেবাপ্রত্যাশীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রান্তিক পর্যায়ের পশুপালনকারী ও খামারিদের আধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া টিকাদান কার্যক্রমে গুরুত্ব দেওয়ায় আগের চেয়ে অনেক রোগবালাইয়ের সংক্রমণ থেকে পশুপাখি রক্ষা পাচ্ছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, জেলায় বর্তমানে ৮৩ পদের বিপরীতে ৩৫টি পদ শূন্য রয়েছে। ছয় উপজেলার মধ্যে শুধুমাত্র ফুলগাজী উপজেলায় ভেটেরিনারি সার্জন কর্মরত আছেন। অন্যাদের সহযোগিতায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। শূন্য পদে পদায়ন করা হলে আমাদের সার্বিক কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। এসব শূন্য পদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই এ সমস্যা সমাধান হবে।

কৃত্রিম প্রজননে বাড়তি টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রমে মাঠপর্যায়ে আমাদের একাধিক প্রশিক্ষিত টিম কাজ করছে। পশুর মালিক অনেকসময় ফোনকলে প্রজনন কার্যক্রমে নিয়োজিত এনজিওকর্মীকে বাড়িতে নিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে কিছু বাড়তি টাকা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে সুনির্দিষ্ট ভাবে এই ধরনের অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *