রাজনীতি ও নির্বাচন ঘিরে গুজবের ছড়াছড়ি
ডেস্ক রিপোর্ট: দেশজুড়ে পুরোদমে চলছে নির্বাচনী ডামাডোল। প্রার্থীরা ব্যস্ত ভোটরাদের কাছে নিজের প্রতিশ্রুতি ও প্রচারণায়। অপরদিকে নির্বাচন কমিশনসহ আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনী ব্যস্ত শান্তি শৃঙ্খলা, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠ নির্বাচন আয়োজনে। দেশের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক বিরোধ। ফলে নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা ছড়াতে কাজ করছে বিরোধীরা। আর এই সুযোগে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি, চলমান নির্বাচন, নির্বাচন কমিশান এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে গুজব। বাদ যাচ্ছে না শিক্ষার নতুন কারিকুলাম ও ধর্মীয় বিষয়গুলো।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের গবেষণায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি, সেনাবাহিনী, নির্বাচন কমিশনাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের নিয়ে গুজব ছড়ানোর এ সকল তথ্য উঠে এসেছে। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে নানাভাবে গুজব ছড়ানো হয়েছে। তবে গুজবের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে গণমাধ্যমের ওয়েব সাইট ও সামজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ফটোকার্ড।
রিউমর স্ক্যানার বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেটে রাজনৈতিক বিষয়ে গুজবের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিদায়ী বছরের শেষ তিন মাসে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেড়েই চলেছে নির্বাচন কেন্দ্রিক গুজবের সংখ্যা। এই তিন মাসে ইন্টারনেটে রাজনৈতিক ও নির্বাচন কেন্দ্রীক গুজব ছড়াতে ফেসবুকে ও ইউটিউব সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। এই সকল মাধ্যমে বিভিন্ন আইডি থেকে ভুয়া শিরোনাম ও থাম্বনেইল সম্বলিত ভিডিও এবং গণমাধ্যমের আদলে তৈরি ভুয়া ফটোকার্ড ছড়ানো হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি আরও বলছে, সদ্য বিদায় নেওয়া ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ভুয়া ফটোকার্ডের আধিক্যতা থাকলেও ডিসেম্বর মাসে এসে ভুয়া শিরোনাম ও থাম্বনেইল সম্বলিত ভিডিওর আধিক্যতা বেড়েছে।
গত তিন মাসে রিউমর স্ক্যানার বিভিন্ন বিষয়ের ফ্যাক্ট চেকে ৬০০টি গুজবের প্রমাণ পেয়েছে। যার মধ্যে অক্টোবর ২১০, নভেম্বরে ১৭৫ ও ডিসেম্বর মাসে ২১৫টি গুজবের প্রমাণ পাওয়া যায়। এই সকল গুজবের অধিকাংশই নির্বাচন ও রাজনৈতিক কেন্দ্রিক। তিন মাসের মোট গুজবের ৪৫ শতাংশ রাজনৈতিক। আবার রাজনৈতিক গুজবের ৮৩ দশমিক ৭০ শতাংশ জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রিক। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক ৮৪ টি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে ৬৫টি। নভেম্বর মাসে রাজনৈতিক ৭৬টি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনের নির্বাচন নিয়ে ৬৬ টি এবং ডিসেম্বরে ১১০ টির মধ্যে নির্বাচন নিয়ে ৯৫টি গুজবের প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও তিন মাসে ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে সর্বোচ্চ ৫৬টি গুজব ছড়িয়েছে। বাদ যায়নি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও। নির্বাচনে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ৪৩টি, পুলিশ নিয়ে ২৪টি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে নিয়ে ১৮টি, বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক সংগঠন ও কূটনীতিকদের উদ্ধৃত করে ১৭টি, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ১৩টি গুজব ছাড়ানো হয়েছে।
এছাড়াও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে ১৪টি ও কারাগরে থাকা দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল কে নিয়ে ১৩টি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ১২টি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে ৯টি, রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে ৭টি, খালেদা জিয়াকে নিয়ে ৭টি, রুহুল কবির রিজভীকে জড়িয়ে ৬টি গুজব। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক নুরকে নিয়ে চারটি করে গুজব ইন্টারনেটে ছড়ানো হয়েছে। বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা, ইশরাক, সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে তিনটি করে গুজব ছড়ানো হয়।
নোবেল জয়ী ড. ইউনূস, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায়, বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান ও অনলাইন এক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যকে নিয়ে ২টি করে এবং জাতীয় পার্টি (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর, মাশরাফি বিন মুর্তজা, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম, চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহি, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ ও অভিনেতা মিশা সওদাগরকে জড়িয়ে একটি করে গুজব ছড়ানো হয়েছে।
রাজনৈতিক দল হিসেবে সব চেয়ে বেশি গুজব ছড়ানো হয়েছে বিএনপিকে নিয়ে। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন জড়িয়ে ২৮টি, আওয়ামী লীগসহ ক্ষমতাশীন দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনকে জড়িয়ে ৯টি জামায়াত ইসলাম ও শিবিরকে নিয়ে ৪টি ও জাতীয় পার্টিকে নিয়ে একটি গুজব ছড়ানো হয়।
দেশে চলমান নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে গুজবের বিষয়ে জানতে চাইলে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ) সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ বলেন, ‘স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যক্তি গোষ্ঠী অথবা রাষ্ট্র ভুয়া তথ্য ছড়ানোর পেছনে জড়িত থাকে। অনলাইনে কোন তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শেয়ার না না করা ও ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ তথ্যটি সত্যতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমি এটি শেয়ার করব নাকি বর্জন করব। কারণ ইন্টারনেটে একটি ক্লিক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবহারকারীদের অসচেতনতার কারণে একটি অসত্য তথ্য যদি ছড়িয়ে পড়ে এটি সমাজের ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।’
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪ ডট কম-এ।