আমাগো আবার ঈদ!
ডেস্ক রিপোর্ট: ‘গরিবের আবার ঈদ। আমাগো কোন ঈদ নেই। যেদিন দুইডা টাকা বেশি রোজগার করতে পারি, একটু ভালো কিছু বাজার করতে পারি সেদিনই আমাগো ঈদ।’
এভাবেই নিজের মনে থাকা চাপা কষ্টের কথা বার্তা২৪.কমের প্রতিবেদককে বলছিলেন রাজধানীতে চলাচলকারী আন্তঃজেলা বাস গাবতলী লিঙ্ক পরিবহনের চালকের সহকারী মাসুদ রানা।
গতকাল সোমবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর পল্টনে কথা হয় মাসুদ রানার সঙ্গে। মাসুদ রানা বলেন, গরিব পরিবারের ছেলে আমি। ছোটবেলা থেকেই পরিবারের জন্য ইনকামের পথে নামছি। দিন এনে দিন খাওয়া সংসার। একদিন কাজ না করলে খাওন জোটে না। বউ-পোলাপাইন নিয়া ঢাকায় থাকি। মা-বাপ গ্রামে থাকে। কতদিন বাপ-মার সঙ্গে ঈদ করতে পারি না সেটাও বলতে পারি না।
তিনি বলেন, আমার বাড়ি বরিশাল। বাড়িতে বাপ-মা আর ছোট বোন থাকে। আব্বা এলাকায় পরের জমিতে কাজ করে, যা পান তাই দিয়ে সংসার চালাতে হয়। মাঝেমধ্যে আমারও টাকা পাঠাতে হয়। আমি ঢাকায় একটা বস্তিতে পরিবার নিয়া থাকি। আর বাসের হেল্পারি করি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই কাজ করতে হয় টাকার জন্য। সারাদিন কাজ করে যা পাই তাই দিয়ে বাজার করতেই শেষ হয়ে যায়। যেদিন ভালো যাত্রী পাই সেদিন আমার ৮০০/৯০০ টাকা থাকে। আর যেদিন যাত্রী কম থাকে সেদিন মালিকের টাকা, রোড খরচ, তেল খরচ সবকিছু মিলিয়ে খরচের পর আমাগো ভাগে আর তেমন কিছুই থাকে না।
ঈদে পরিবার নিয়ে বাড়িতে যাবেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বলেন, মানুষজন দেখি ঈদের আগে থেকেই বাড়ি যাওন শুরু করে। আমাগোও যাওনের ইচ্ছা করে। কিন্তু যাইতে পারি না। কয়ডা টাকা বেশি ইনকামের আশায় ঢাকা পড়ে থাকি। এই সময় মানুষজন বাড়িতে যায়। আবার ঈদের পর বাড়ি থেকে আসে। তখন ভালো যাত্রী হয়। ভালো টাকা ইনকামও হয়। কিন্তু এবার রোজার শুরু থেকেই খুব কম ভাড়া হচ্ছে।
প্রায় একই কথা বার্তা২৪.কমকে জানান রাজধানীতে চলাচলকারী অন্য একটি গণপরিবহনের চালকের সহকারী।
ওয়েলকাম পরিবহনের চালকের এক সহকারী বার্তা২৪.কমকে বলেন, কয়টা টাকা বেশি রোজগারের জন্য পরিবার রেখে ঢাকাতে ঈদ করতে হয়। ঈদের দিনও নামাজ পড়েই গাড়ি নিয়ে বের হই। একদিন বসে থাকলে পরিবার চলবে না। একবেলা না খেয়ে থাকলে কেউ জিজ্ঞেসও করবে না। তাই আমাদের কোন উৎসব নেই। পেটের জন্য রোজই কাজে বের হতে হয়।
এদিকে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনের এরই মধ্যে রাজধানী ছেড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।
মুঠোফোন অপারেটরদের পরিসংখ্যানে অনুযায়ী, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গেল দুই দিনে ঢাকা ছেড়েছেন ২০ লাখের বেশি মুঠোফোন সিমধারী। মোবাইল অপারেটররা, সিমধারী বলতে একেকজন সিম ব্যবহারকারীকে অর্থাৎ ইউনিক ইউজার বুঝানো হয়ে থাকে। মুঠোফোন সিমধারীর সঙ্গে পরিবারের সদস্যরাও থাকেন, যাদের অনেকেই মুঠোফোন ব্যবহার করেন না। ফলে ঠিক কত মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন, সেই হিসেবে নেই কারও কাছেই।
মুঠোফোন অপারেটরদের সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতর সামনে রেখে গত দুদিনে রাজধানী ছেড়েছেন ২০ লাখের বেশি মোবাইলফোন সিমধারী। অপরদিকে ৬ ও ৭ এপ্রিল ঢাকায় প্রবেশ করেছেন সাড়ে ৯ লাখের বেশি সিমধারী ব্যক্তি। তাদের সঙ্গে মোবাইলফোন ব্যবহার করেন না এমন প্রবীণ নারী–পুরুষ ও শিশুরা থাকতে পারে। ফলে প্রকৃতপক্ষে কত মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন এবং প্রবেশ করেছেন সেই হিসাব পাওয়া কঠিন।
ঈদ উপলক্ষে ১০ এপ্রিল থেকে সরকারি ছুটি শুরু হচ্ছে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে গেল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) থেকেই মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। এরপর শুক্র ও শনিবার দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি এবং মাঝে রবিবার পবিত্র শবে কদরের ছুটি পড়ে। পবিত্র ঈদুল ফিতরে এবার লম্বা ছুটি রয়েছে। মূল ঈদের ছুটি ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল। এর পরদিন, অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তার পরদিন রবিবার পয়লা বৈশাখের ছুটি। এতে টানা পাঁচ দিন ছুটি নিশ্চিত।
এদিকে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদীউজ্জামানের ২০২৩ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ঈদের আগের চার দিনে ঢাকা ছাড়েন ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। সে হিসাবে ঈদের সময় প্রতিদিন গড়ে বাড়ি যান ৩০ লাখ মানুষ।
গত বছর ঈদুল ফিতরের সময়ে ঈদের আগে পাঁচ দিনে এক কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছিলেন।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।