সারাদেশ

নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু আইনে বরিশালে প্রথম মামলা

ডেস্ক রিপোর্ট: নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু আইনে দায়েরকৃত বরিশাল আদালতে ১৭ মাস পর প্রথম মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। দীর্ঘ শুনানি শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক মেহেদী হাসান আল মাসুদ মামলাটি গ্রহণ করেন।

বাদী বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মালা আক্তার তার আইনজীবী নাজিম উদ্দিন আহম্মেদ পান্নার মাধ্যমে পুনরায় মামলার আর্জি করলে শুনানি শেষে তা গ্রহণ করেন বিচারক। 

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) এ আদেশ দেয়া হয়।

২০১৩ সালের ১১ মার্চ তিন নারীকে অকথ্য নির্যাতনের অভিযোগ এনে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু আইনে আদালতে মামলা দায়ের করেন বাদী। মামলাটি দায়েরের পর তৎকালীন পুলিশ ও আইনজীবীদের বাধার মুখে ওই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে এর কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।

মামলার আসামিরা হলেন, তৎকালীন বাবুগঞ্জ থানার এসআই খলিলুররহমান, এসআই নাসির উদ্দিন ও কনস্টেবল নিপা রাণী। বর্তমানে তারা দেশের বিভিন্ন থানায় কর্মরত।

বাদী বলেন, ২০১৩ সালের ৩ মার্চ রাতে বাবুগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ দেহেরগতি গ্রামের মাহিনুর বেগমের বাড়িতে পারিবারিক বনভোজনের আয়োজন করা হয়। এ কারণে সাউন্ড বক্স লাগিয়ে বাজানো হয় গান। কিন্তু গ্রামের কিছু লোক গানবাজনা বন্ধ করার জন্য টহল পুলিশের নিকট অভিযোগ করেন। এরপর টহল পুলিশ ওই বাড়িতে প্রবেশ করে উচ্চস্বরে গান বন্ধ করার নির্দেশ দেন। তখন পরিবারের সকলে তাদের বোঝান বনভোজন উপলক্ষে ছেলে-মেয়েরা আনন্দ করছে। এতে আরো ক্ষুব্ধ হন বাবুগঞ্জ থানার এসআই খলিলুর রহমান, এসআই নাসির উদ্দিন ও কনস্টেবল নিপা রাণী। এক পর্যায়ে তাদের সাথে বাগবিতণ্ডা হলে ৬ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন আকাশী, রাশিদা ও মালা।

এ ঘটনায় উল্টো এসআই নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে ছয়জনসহ আরো ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ৪ মার্চ আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনজনের বয়স ১৪ বছর হওয়ায় বিচারক জামিন দেন। আর ওই তিন নারীকে কারাগারে পাঠান। ১২ মার্চ তাদেরকে আদালতে উঠানো হলে তারা বিচারকের নিকট পুলিশের অমানুষিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন। ঘটনা শোনার পর বিচারক পুলিশ সুপারকে মামলা নেয়ার আদেশ দেন এবং তাদেরকে জামিন দেন। একই সাথে মেডিকেলে ভর্তি করে তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করে মেডিকেল রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দেন।

বাদী বলেন, মেডিকেল রিপোর্ট এবং জবানবন্দি পাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট অভিযুক্ত তিন পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু আইনে মামলা নেয়ার নির্দেশ দেন পুলিশ সুপারকে। বাবুগঞ্জ থানা পুলিশ দায়সারা গোছের এজাহার রেকর্ড করে সময় ক্ষেপন করেন। পরবর্তীতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ।

ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আইনজীবী পান্না ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারাজি দরখাস্ত দাখিল করেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের চাপের কারণে ম্যাজিস্ট্রেট দাখিলকৃত নারাজি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করেন। অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারাজি শুনানিকালে এএসপি পদ মর্যাদার কর্মকর্তারা আদালতে উপস্থিত থেকে চাপ সৃষ্টি করেন। এমনকি আইনজীবী পান্নাকে হুমকি-ধামকি দেয়া হয়। ওই বছরের ৭ আগস্ট মামলাটি না মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক।

আইনজীবী পান্না বলেন, ওই আদেশের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আনা হলে পুলিশ বিভাগ থেকে ওই আদালতের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। এ কারণে ওই আদালত রিভিশন মামলাটি বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে প্রেরণ করেন। আদালতে মামলাটি শুনানিকালে পুলিশ বিভাগ থেকে ৫০ জন আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়। ওই সময়ও আইনজীবীরা বাদীর আইনজীবী পান্নাকে হুমকি দেন।

এ বছরের ২৯ আগস্ট পূর্বের আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন মামলা দায়ের করেন। ওইদিন দীর্ঘ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে মামলাটি মঞ্জুর করেন এবং নারাজি আবেদন না মঞ্জুরের আদেশ বাতিল করেন বিচারক। আইনজীবী পান্না দাবি করেন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু আইনে এ মামলাটি দায়ের হলো।

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা সরকার পুলিশ হেফাজতে কোনো নির্যাতন হয় না আন্তর্জাতিকভাবে দেখানোর জন্য ২০১৩ সালে প্রণয়ন করেন ‘ নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারন) আইন। আইন থাকলেও সরকারের অনাগ্রহের কারণে কোনো মামলা হয়নি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *