ভারতে দূতাবাসের কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ করল আফগানিস্তান
ডেস্ক রিপোর্ট: রক্তক্ষয়ী সংঘাত, লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ, সাড়ে ৫০০ এরও অধিক শিশুর নিথর দেহ, হাসপাতালে গণকবর আর একটা ভূখণ্ডের স্মরণকালের সবথেকে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের পর অবশেষে আজ থেকে চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু!
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৭টা (বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টা) থেকে গাজা উপত্যকায় শুরু হয়েছে বহু আকাঙ্ক্ষিত এই যুদ্ধবিরতি।
স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার মধ্যেই ১৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দিবে বলে জানিয়েছে গাজা উপক্যতার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস। শর্তানুযায়ী ক্রমান্বয়ে ৪ দিনে মোট ৫০ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য যুদ্ধবিরতি শুরুর সময় জানিয়েছিল কাতার। সেই সময় অনুযায়ীই বিরতি শুরু হয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গত দেড় মাসে উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৫ হাজার ৫৩২ জনে। এই নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদে ১৪ অক্টোবর প্রথম বার গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে রাশিয়া। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আপত্তির কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।
তার দুই দিন পর ১৬ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় মানবিক বিরতির আহ্বানের প্রস্তাব উত্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্রও। কিন্তু রাশিয়া ও চীনের আপত্তির কারণে সেটিও বাতিল হয়ে যায়।
তবে নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন প্রস্তাব বাতিল হলেও গাজায় যুদ্ধবিরতি কিংবা মানবিক বিরতির পক্ষে শক্ত অবস্থান নেয় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ। সেই সঙ্গে এই যুদ্ধের শুরু থেকেই হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করে আসছিল কাতার ও মিশর।
গত সপ্তাহে কাতারের মাধ্যমে ইসরায়েলের কাছে যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল কাতারে অবস্থানরত হামাসের হাইকমান্ড।
প্রস্তাবে বলা হয়, যদি ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি, কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিদের মুক্তি, উপত্যকায় ত্রাণপণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে প্রবেশ এবং আহত বেসামরিকদের উপত্যকার বাইরে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণের অনুমতি দেয় তাহলে নিজেদের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্যে ৫০ জনকে মুক্তি দেবে হামাস।
ইসরায়েল এই প্রস্তাব মানতে না চাইলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরলস প্রচেষ্টা, সেখানকার জনগণ ও জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের চাপে ২১ অক্টোবর এক জরুরি বৈঠকে সেই প্রস্তাবে সায় দিতে বাধ্য হয়।
বৃহস্পতিবার থেকে হওয়ার কথা থাকলেও ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা অবশেষে ১দিন পিছিয়ে শুক্রবার থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করেছে।
এই যুদ্ধবিরতি গাজা উপত্যকায় বসবাসকারী প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনিদের জীবনে স্বস্তি বয়ে এনেছে। বেকারত্বপীড়িত এই ফিলিস্তিনিদের এক তৃতীয়াংশই জাতিসংঘ ও অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থার সহায়তার ওপর সরাসরি নির্ভরশীল। চলমান যুদ্ধ তাদের একেবারেই বিধ্বস্ত করে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ভোরে ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। উপত্যকার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত বেড়া ভেঙে ইসরায়েলে প্রবেশ করে নির্বিচারে সামরিক-বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করে তারা।
সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে যায় ২৪২ জনকে। হামাসের এই হামলার জবাবে ওই দিনই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। ১৬ অক্টোবর থেকে সেই অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।