দেশের সামুদ্রিক অঞ্চলে অতিমাত্রায় প্লাস্টিক দূষণ হচ্ছে: চুয়েট ভিসি
ডেস্ক রিপোর্ট: বেনাপোল, প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর। বিপুল সংখ্যক পর্যটক দুই প্রান্ত থেকেই এই বন্দর দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। সাম্প্রতিক বছরে বন্দরের পরিষেবা ফি ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে এক লাফে ১০০০ টাকা করা হয়েছে-তা কমবেশি আমরা সবাই জানি। সঙ্গে আরও ৪৬ টাকার মতো অন্যান্য ফি মিলিয়ে যদিও প্রদেয় ফি’র পরিমাণ ১০৪৬ টাকার মতো কিন্তু বাস্তবে ভারতে গমনেচ্ছুদের গুণতে হয় আরও বেশি টাকা। গণমাধ্যমের কল্যাণে কমবেশি সবারই জানা যে এই বন্দর এলাকায় পা দেওয়া কোন আগুন্তুককে পদে পদে পড়তে হবে সক্রিয় দালালদের খপ্পরে। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে একজন ভারত গমনেচ্ছুকে এই সময়ে কি অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে, সেকথাই জানাব আমরা।
সোমবার ভোর রাত পৌনে ৫টা। জনপ্রতি ৯০০ টাকা ভাড়ায় সৌদিয়া পরিবহণে ঢাকা থেকে বেনাপোলে এসে নামেন যাত্রীরা। বাসের ২ হাত লম্বা এক টুকরো কম্বলে ওম ছেড়ে নীচে নামতেই হাড় কাঁপানো শীতের তীব্রতা টের পাওয়া যায়। বাসের সহকারী বেশ চাপ দিয়েই সকলের পাসপোর্ট নিয়ে নিলেন, ১০৪৬ টাকা ফি’র সঙ্গে আরও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে থাকলেন ওই সহকারী। সবার থেকে যে সমান হারে নিলেন তা নয়। অতিরিক্ত ন্যূনতম ১০০ আর উপরে যার থেকে যেমন নেওয়া যায়!
সৌদিয়ার মতো অন্যান্য পরিবহণের যাত্রীরাও একইভাবে নিরুপায় হয়ে পাসপোর্ট আর সঙ্গে পরিবহণ সহকারীদের দাবিকৃত অর্থ দিয়ে শীতের মধ্যে ঠক ঠক করে কাঁপছিলেন। কাউন্টারগুলিতে আসন যতগুলো, যাত্রী তার চেয়ে কয়েকগুণ! রাতভর জার্নি করে অনেকেরই টয়লেটে যাওয়া অনিবার্য হয়ে উঠেছে, কিন্তু যাত্রীরা যেতে পারছেন না। কারণ পর্যাপ্ত টয়লেট নেই। যা আছে তাও চরম নোংরা, রীতিমতো ব্যবহার অযোগ্য।
এতো গেল, পরিবহণের যাত্রীদের কথা। কিন্তু যারা আরও সাশ্রয়ী যান ব্যবহার করে এই বেনাপোলে পৌছেছেন, পশ্চিমবঙ্গে কোন স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হতে যাবেন বা জীবনে প্রথমবার ভারতে যাওয়ার শখ চেপেছে-তাদের তো কোন অবস্থাই নেই! তারা না পারছেন টয়লেট ব্যবহার করতে, না পারছেন কাউন্টারের ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে একটু ওম নিতে। এই সব মানুষগুলো একেবারে রাস্তার উপরে টপ টপ করে ঝরে পড়া কুয়াশার বিন্দুতে মাখামাখি হচ্ছেন আর কাঁপছেন!
ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে যে বড়সড় একটি ছাদ-চত্বর করা হয়েছে জনগণের বিপুল অর্থব্যয়ে সেই জায়গাটিতেও তাদের দাঁড়াবার কোন সুযোগ নেই সাধারণের। পদ্মাসেতুর দৌলতে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো এখন রাত ১২টার পর যাত্রা করলেও বেনাপোলে পৌঁছে যায় সাড়ে ৪টা কিংবা ৫টার মধ্যেই। কিন্তু সোনালী ব্যাংকের যে বুথটিতে ট্রাভেল ট্যাক্স, পোর্ট ট্যাক্সসহ অন্য ফি নেওয়া হয় সেটি সাড়ে ৬টার আগে খুলে না। তাও সেই বুথটি ঘিরে থাকে ওই পরিবহণের সহকারীদের বিরাট সিন্ডিকেট। ওই বুথকে ওরা এমনি ভাবে আগলে রাখে যে সাধারণ ভারত গমনেচ্ছু কেউ সেখানে ভিড়তে পারার কোন সুযোগ বা সাহস কোনটিও করতে পারেন না। বিশেষ ক্ষমতাবান কেউ কেউ এখানে চলে আসতে পারলেও সিংহভাগই স্থানীয় এক শ্রেণির দালালদের ধরে বাড়তি অর্থ গুণে সরকারকে রাজস্ব দেওয়ার কাজটি সম্পন্ন করেন। অনলাইনে ফি জমা দেওয়ার নাম করে কেউ কেউ অর্থ হাতিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। তাদের হন্যে হয়ে খোঁজে ফিরে ক্লান্ত পর্যটকটি হয়তো আবার নতুন কাউকে খুঁজতে থাকেন।
যে জায়গাটিতে সাধারণ মানুষের এ ধরণের দূর্ভোগ পোহাতে হয়, তাদের ঠিক সামনেই থাকেন বিজিবি, পুলিশ ও আনসারের অসংখ্য সদস্য। কিন্তু সাধারণের প্রতিকার বিধানে কারোর এগিয়ে আসার দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। শুধু কি তাই? ভারত গমনেচ্ছেুদের পুরো ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে প্রতিটি পদে পদে শিকার হতে হয় ভোগান্তি ও হয়রানির।
একটি সরল প্রশ্ন জানতে ইচ্ছে হলো, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কেউই এনিয়ে কোন কথা তো বলননি, উল্টো বড় বড় চোখ করে এই প্রশ্ন করার সাহস কিভাবে হলো তাই যেন বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন সংশ্লিষ্টরা। সরল সেই প্রশ্নটি হলো, শুধুমাত্র খুচরা টাকা না থাকার ‘অপরাধে’ বেচারা পর্যটককে বেজোড় সংখ্যার অতিরিক্ত অর্থটি ফেরত দেওয়া হয় না। অধিকাংশ পর্যটকদের থেকে যে ৫, ১০ কিংবার আরও বড় অংকের যে অর্থ ফেরত প্রদান করা হয় না, দিনশেষে বেনাপোল বন্দরের ইমিগ্রেশনে সেই ‘ছোট অংকের’ অর্থের পরিমাণ আসলে কত হতে পারে? ব্যাংকের কাছে খুচরো অর্থই বা কেন থাকবে না? অতিরিক্ত নেওয়া এই অর্থটির গ্রহিতা শেষ পর্যন্ত কে হন? সরকার কি অতিরিক্ত এই অর্থটি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা পান, নাকি আদায়কারীদের মধ্যেই তা বণ্টন হয়, কিংবা গোমর জেনে যাওয়া সংশ্লিষ্ট পুরো সিস্টেমের সকলেই তার অংশীদার হন?
যাক, ‘ছোট মুখে এসব বড় কথা’র চিন্তা বাদ দিয়ে একটু ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, অনেক কষ্ট করে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শুরুর পর দুই ধাপ পেরুলেই অভ্যন্তরে অনেকগুলো শৌচালয়। সেগুলো ব্যবহারের তো কোন সুযোগই পেলেন না সাধারণ দর্শনার্থীরা, তাহলে এই যে ফি বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হলো, সরকার বা রাষ্ট্র, স্টেকহোল্ডারদের কি সুবিধা দিলো? কন কনে শীতে ঠক ঠক করে দাঁড়িয়ে থাকার প্রায়শ্চিত্ত নাকি টুপ টুপ করে ঝরে পড়া কুয়াশার বিন্দুতে মাখামাখি হওয়ার ‘সৌভাগ্য’?
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।