রাজনীতি যেখানে আছে, ষড়যন্ত্র সেখানে থাকবে: ওবায়দুল কাদের
ডেস্ক রিপোর্ট: রাজনীতি যেখানে আছে, ষড়যন্ত্র সেখানে থাকবে সেটা বিশ্ব রাজনীতি হোক বা দেশের রাজনীতি হোক বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
আমেরিকার প্রতিনিধির সাথে বৈঠক করে বিএনপি কোনো ষড়যন্ত্র করছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন কথায় কথায় শুধু ষড়যন্ত্র বললে কি দায়িত্ব শেষ হবে। ষড়যন্ত্র বিষয়টা আছে, থাকবে। ষড়যন্ত্রের ঘাড়ে সব কিছু চাপিয়ে দিয়ে নিষ্কর্ম থাকার কোনো কারণ নাই। রাজনীতি যেখানে আছে, ষড়যন্ত্র সেখানে থাকবে। বিশ্ব রাজনীতি হোক, দেশের রাজনীতি হোক। এখন এর মধ্য দিয়েই আমাদের চলতে হবে। আমার কথা হচ্ছে, আমরা তো ষড়যন্ত্র রাজনীতি করছি না। আমরা পজেটিভ পলিটিক্স করছি। রাজনীতির ইতিবাচক ধারায় আছি। যারা ষড়যন্ত্র করে তারা নেতিবাচক ধারায়। পজিটিভ রাজনীতিরই বিজয় হবে শেষ পর্যন্ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘অস্থিরতার মধ্যেও কিন্তু আমাদের জনগণের কোথাও হাহাকার নেই। জনগণের পক্ষ থেকে কোন বিক্ষুব্ধ আমরা লক্ষ্য করিনি। সবাই স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। আমাদের দায়িত্ব যেটা আমরা সেটা পালন করছি। আমাদের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন এই বিষয়টি নিয়ে ভাবিত। দেশের মানুষকে যে অঙ্গীকার তিনি করেছেন বিশেষ করে নির্বাচনী ইশতেহারে যে বক্তব্য জনগণের কথা ছিল, নির্বাচনের ইশতেহার বাস্তবায়ন মাথা ঘামাচ্ছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালকে ডেকে পরামর্শ দিচ্ছেন, কর্মপরিকল্পনা দিচ্ছেন। কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাবার অনুরোধ করেছেন। কথা বেশি না বলে কাজ করার জন্য দায়িত্বশীল সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বিএনপির আন্দোলনে জনগণ সাড়া দেয়নি জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারপর নির্বাচনেও হেরে যাবার ভয়ে অংশ নেয়নি। এখন বিএনপি একটা দল তার প্রাসঙ্গিকতা নিজেরাই হারিয়ে ফেলেছেন। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই।’
আমেরিকার সম্পর্ক আরও ভাল হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সারা দুনিয়ার সবাই কিন্তু নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত আছে। আমেরিকাও চ্যালেঞ্জের মুখে আছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলকে সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে। একদিকে বৃষ্টি, ঠান্ডা, শৈত্যপ্রবাহ অপরদিকে রক্ত। বৃষ্টির পানির সাথে লাল রক্ত পানি আর দেখা যায় না। আমেরিকার দুষ্ট ছেলে ইসরাইল, ইসরাইল তাদের কথা শুনছে ন। বাইডেন বলছে একটা নেতানিয়াহু বলছে আরেকটা। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করার অঙ্গীকার করেছে হামাসকে ধ্বংস করা পর্যন্ত।
তিনি বলেন, ওইদিকে হুতীদের সঙ্গে সংঘাত এসেছে। ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজ ও ভ্যাসেলগুলো চলাচল অনেকটা বন্ধ করে দিয়েছে সুইস ক্যানেল দিয়ে। সুইস ক্যানেল দিয়ে যাত্রাটা বন্ধ করে আমেরিকার জন্য আরেকটা সংকট সৃষ্টি করেছে। আজকের মধ্যপ্রাচ্যর দেশে দেশে ন্যায্য দ্রব্যমূল্যের জন্য এবং যন্ত্রপাতির মূল্যবৃদ্ধির জন্য কৃষকরা রাস্তায়। এসব নিয়ে ইউরোপের প্রায় সব দেশে কৃষকরা রাস্তায় নেমেছে। জার্মানিতে নেমেছে, ফ্রান্সের নেমেছে। আমেরিকা তো এখানে অনেক চিন্তা আছে। তারা নিজেদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেরা ব্যস্ত। বাংলাদেশের দিকে আরো অত মনোযোগ দেয়ার সময় তাদের কোথায়।
বাংলাদেশের জনগণের ভারত বিরোধী মনোভাবের কারণে সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে কোন ধরনের টানাপোড়েন নেই।
নির্বাচন বানচালে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোন কথা বলছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কথা যখন হয়, কথা প্রসঙ্গে অনেক কথায় হয়। স্পেসিফিক কোন বিষয় নিয়ে আমরা কোনো চাপের মধ্যে নেই। আমরা চাপ অনুভব করছি না। অহেতুক একটা বিষয় নিয়ে মাতামাতি করব দরকারটা নেই।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ে কঠোর অবস্থার কথা যখন জানান তখনই দাম বেড়ে যায় কোন না কোন পণ্যের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমিতো এ কথা বলিনি আগামীকালই দ্রব্যমূলক কমে যাবে। আমি বলেছি নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। এর অর্থ কি আগামীকাল কমে যাবে? সে আশা দেয়ার ক্ষমতা আছে আমার? এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা আমার মুখ দিয়ে অন্তত বের হবে না।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দলীয় প্রতীক না থাকায় প্রার্থীদের ওপর এমপিদের প্রভাব বাড়বে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোন বড় কাজ করতে হলে, কিছু ছোট ছোট বিষয় এর মধ্যে এসে পড়বে। কারো ইচ্ছায় নির্বাচন প্রভাবিত হবে এর কোন কারণ নেই। নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী এবার তারা প্রমাণ করেছে এবং তারা আরো শক্তিশালী হবে। তারা আরো বেশি করে তাদের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালন করতে পারবে। তাতে করে নির্বাচনী ব্যবস্থায় সামনের দিকে আমাদের জন্য শুভ দিন অপেক্ষা করছে।’
দলীয় প্রতীক না দিলেও প্রার্থীদের ওপর প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা কোনো প্রকার সমর্থন দিবো না। জনগণ যাকে পছন্দ তাকে নির্বাচিত করবেন, যাকে খুশি তাকে ভোট দিবেন।’
সোমবার ক্যাবিনেট মিটিংয়ে দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করার জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের বলেন, একটা আইন ক্যাবিনেটে প্রথমত নীতিগত সিদ্ধান্ত করে, তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। দুইটা মিটিং লাগে। এরপর বিষয়টা পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যাবে। স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আলাপ-আলোচনা বা রেকমেন্ডেশন থাকলে সেটাসহ পার্লামেন্টে বিল আকারে যাবে। পার্লামেন্টে বিল আকারে আইনটা পাস হবে। পার্লামেন্টে আইনটি সংশোধনীর ব্যাপারে আলোচনা করারও অনেক সুযোগ আছে। তো সেক্ষেত্রে কোন অবস্থায় স্থিতি দেবে সেটা এখন এই মুহূর্তে বলা যায় না।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।