সালমানের দুঃখের জীবন শেষ হলো আগুনে পুড়ে
ডেস্ক রিপোর্ট: থাইল্যান্ডে রাজধানী ব্যাংককে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল হাই অভিজ্ঞ কূটনৈতিক। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে দায়িত্ব পালন করছেন থাইল্যান্ডে। এর আগে ২০০৪ থেকে ২০০৭ সালেও দেশটিতে কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন।
সম্প্রতি ব্যাংককের একটি হোটেলে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে থাইল্যান্ড-বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে তিনি। আলোচনার শেষ পর্বে ওঠে এসেছে রোহিঙ্গা সংকট, প্রধানমন্ত্রীর সফর ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক।
আলোচনায় আবদুল হাই বলেন, এ বছরই আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই থাইল্যান্ডে বিমসটেক সামিট উপলক্ষে আসবেন। একই সঙ্গে সামিটের পূর্বে বা সামিটের সাথেই একটি বাইলেটারেল সফরের বিষয়টি উভয় দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে রয়েছে। আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রীর থাইল্যান্ডে দ্বিপাক্ষিক সফর এবং বিমসটেকের আওতায় আঞ্চলিক সফর বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যকার সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেবে।
গত ১৫ বছর প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যে উঁচু স্থান নির্ধারণ করেছে, প্রধানমন্ত্রীর এই দ্বিপাক্ষিক সফরের মাধ্যমে পূবের দেশগুলোতেও এই সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ হবে। চলতি বছরের দ্বিতীয় ভাগেই এই সফরের কথা রয়েছে বলে জানান তিনি।
রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে থাইল্যান্ডের আকাশ যোগাযোগ বেশ ভাল। দৈনিক প্রায় পাঁচটি করে ফ্লাইট রয়েছে। থাই এয়ারলাইন্সের দুটি ফ্লাইট, বাংলাদেশ বিমানের একটি, ইউএস বাংলার একটি এবং এয়ার এশিয়ার একটি ফ্লাইট রয়েছে। তাই বলা যায় এয়ার কানেক্টিভিটি ভাল। প্রতি ৩-৪ ঘণ্টা পরপর ফ্লাইট পাওয়া যায়।
দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে পারে বলে মনে করের তিনি। আবদুল হাই বলেন, থাইল্যান্ডে জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী কিছুটা কম পাচ্ছে। তাই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এখানে এসে পড়াশোনা করতে পারে। এবং ওইসময়ে এখানকার ভাষা রপ্ত করে ফেললে পরবর্তীতে তারা নিজেদের এখানে ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারে। এখানে এমন বাংলাদেশিকেও চিনি যিনি এখানে পড়াশোনা করেছেন। এখন এখানে রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত এবং নিজের পণ্য বিপণন করে থাকেন।
থাইল্যান্ডের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পর্যটনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশও যে বিষয়গুলোতে জোর দেওয়া প্রয়োজন সে বিষয়ে তিনি বলেন, পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যে বিষয়গুলো জরুরি, তার অনেক কিছুই এখনো আমাদের দেশে করে ওঠা হয়নি। যখন আমি বলছি করে ওঠা হয়নি, তখন বিষয়টা হচ্ছে এই রকম, আমাদের আরও ভাল মানের থাকার হোটেল, খাবারের রেস্টুরেন্ট দরকার, চলাচলের জন্য গাড়ি দরকার। এবং যারা পর্যটনে আসে, তাদের জন্য ফ্যামিলি ট্যুর, পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণ করে এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এই মানুষগুলোকেও আমরা আমাদের পর্যটন শিল্পের প্রথম উপজীব্য হিসেবে ধরতে পারি। সেক্ষেত্রে এই সংখ্যাটাও কিন্তু কম নয়। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে যদি বিদেশি পর্যটকের হার দেখি, সেটি এখনো ৫ লক্ষ অতিক্রম করেছে বলে মনে হয় না।
এক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাতেও নতুনত্বের প্রয়োজন রয়েছে। যখন আমি নতুনত্বের কথা বলি, তখন ধরুন আমাদের পাহাড়পুর, বৌদ্ধ ধর্মের সমৃদ্ধ স্থান। সেখানে যাতায়াতের ব্যবস্থা কী! সেখানে যাওয়ার পরে থাকার ব্যবস্থা কী! খাওয়ার ব্যবস্থা কী! আর যারা সেখানে পর্যটনে কাজ করবে, তারা কি ইংরেজি বা যে দেশ থেকে পর্যটক বেশি আসে সেই ভাষায় কথা বলতে পারে? এখান থেকে যদি থাইরা বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মের স্থাপনাগুলো দেখতে যায়, যেগুলো বেশিরভাগ চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী অঞ্চলে যাওয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হতে হবে। যাত্রাপথে স্যানিটেশন ব্যবস্থা কেমন, সেগুলাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা হয়তো বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভাবি, তাদেরকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দিতে পারব কিনা! পানীয় জলের কথা ভাবি! কিন্তু এর বাইরেও কিন্তু অনেক কিছু আছে এবং তার গ্রাহকও আলাদা।
কারণ আমি যখন ফ্যামিলি ট্যুরিজমের কথা বলি, এদেশেই আপনি দেখবেন অনেক আরব পরিবার বেড়াতে আসেন, স্ত্রী সন্তানসহ; তাদের জন্য কিন্তু এই দেশ মুসলিম খাবারের ব্যবস্থা রেখেছেন। এদের কাছ থেকে আমরা এটা শিখতে পারি বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের সাংস্কৃতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে একটা বড় মিল রয়েছে। আমাদের বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং কয়েক লক্ষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রয়েছে। আবার এখানে বৌদ্ধরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং মুসলিমদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। ব্যাংককেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম রয়েছে। বাংলাদেশ এবং থাইল্যান্ড উভয় দেশেই দুই ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে পাশাপাশি অবস্থান করছে। এই বিষয়ে দুটি দেশ একই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে যে সংখ্যালঘুদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়াও বিশেষভাবে নজর রাখা।
আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে থাইল্যান্ড আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। বাংলাদেশও আসিয়ান রিজিওনাল ফোরামের সদস্য। সেক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় আসিয়ানের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডের কী ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যেতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত আবদুল হাই বলেন, বিশেষ বিষয় হচ্ছে মিয়ানমারের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তার যারা প্রতিবেশী দেশ রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, চীন, লাওস, থাইল্যান্ড রয়েছে; মোট ৫টি দেশ।
পাঁচটি দেশের নিজেদের মধ্যে যদি যোগাযোগ বাড়ানো যায় এবং সমঝোতার জায়গাগুলো বাড়ানো যায়, সেক্ষেত্রে মিয়ানমারের যে সংকট তার থেকে উত্তরণের পথ পাওয়া সহজ হবে৷ সে ক্ষেত্রে যখন মিয়ানমারের রাজনৈতিক স্থিতি আসবে তখনই রোহিঙ্গা সমস্যারও সমাধান হবে। আমাদের কাজ হবে এই ৫টি দেশের মধ্যে এই বিষয়ে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে কূটনৈতিক পর্যায়ে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ ধারাবাহিক রাখা।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।