সারাদেশ

দেশে ফিরল সিঙ্গাপুরে রড চাপায় বাংলাদেশি শ্রমিকের মরদেহ

ডেস্ক রিপোর্ট: দুলালী সরকারের ছয় সদস্যের পরিবার। নিজেদের টিউবওয়েল থাকলেও বেশ কয়েকদিন ধরে পানি উঠছে না। ফলে সীমাহীন কষ্টে ভুগছে পরিবারটি। একদিকে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ অন্যদিকে পানির জন্য হাহাকার। সবকিছু মিলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে দুলালী সরকারের পরিবারের জীবনযাত্রা। পানির অভাব মিটাতে ছুটছেন এদিক-ওদিক। কিন্তু কোথাও মিলছে না একফোঁটা পানি।

শুধু দুলালী সরকারের পরিবারই নয়। পানির জন্য এমন চিত্র রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির সাতটি ইউনিয়নের হাজার হাজার পরিবারের। তীব্র তাপপ্রবাহ এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এই ভোগান্তি বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।

বালিয়াকান্দি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ভৌগোলিক কারণে বৃহত্তর ফরিদপুরের মধ্যে বালিয়াকান্দি উপজেলাটি ভিন্ন। আশেপাশের অঞ্চল থেকে এই অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ স্তর নিম্নমুখী। যে কারণে প্রতি বছর পানির স্তর ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি নিচে নেমে যাচ্ছে। বালিয়াকান্দিতে মোট পরিবারের সংখ্যা ৫০ হাজার। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ৫টি পরিবারের জন্য কমপক্ষে একটি টিউবওয়েল থাকা জরুরি।

সে অনুযায়ী বালিয়াকান্দিতে প্রয়োজন প্রায় ১০ হাজার টিউবওয়েল। কিন্তু সরকারিভাবে ২০২২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৬০টি সাবমার্সিবল ও ২০১৯ সাল থেকে ৫২০টি তারা টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য।

ব্যক্তিগত উদ্যোগে যেসব টিউবওয়েল বসানো হয়েছে সেগুলোতে এখন আর পানি ওঠছে না। পানি না ওঠার কারণ হিসেবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বলছে- বালিয়াকান্দিতে বর্ষা মৌসুমে পানির স্তর থাকে ১৫ থেকে ২২ ফুট নিচে। আর শুষ্ক মৌসুমে বিশেষ করে এপ্রিল, মে ও জুন মাসে সেটা নেমে দাঁড়ায় ৩২ ফুট নিচে। ব্যক্তিগত উদ্যেগে বসানো ৬ নং টিউবওয়েলগুলো পাম্পিং ক্ষমতা ২০ থেকে ২৪ ফুট। যার কারণে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলে পানি থাকে না। শুধুমাত্র সরকারিভাবে বসানো তারা ও সাবমার্সিবল টিউবওয়েল পানি থাকে।

পানির জন্য হাহাকার বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সরেজমিন সদর ইউনিয়নের পাইককান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বাড়িতেই প্রায় টিউবওয়েল রয়েছে, থাকলেও বেশির ভাগ টিউবওয়েলে নেই পানি। কোন কোন টিউবওয়েলে সকাল ও সন্ধ্যার পর কিছু পরিমাণ পানি উঠছে। যেখানে সরকারি সাবমার্সিবল ও তারা পাম্প রয়েছে সেখান থেকে অনেকেই সংগ্রহ করছে পানি।

এদিকে বৈশাখ মাসে কোন বৃষ্টি না হওয়ায় বৃষ্টির জন্য বালিয়াকান্দির বিভিন্ন এলাকাতে বিশেষ নামাজ ও প্রার্থনার আয়োজন করছেন মুসল্লিরা।

পাইককান্দি গ্রামের বাসিন্দা গোলাম মোর্তবা রিজু বার্তা২৪.কমকে জানান, প্রায় এক সপ্তাহ হতে চললো বাড়ির টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না। ৫০টি চাপ দেওয়ার পর এক গ্লাস পানি উঠছে। পানির অভাবে নানা ধরণের সমস্যায় ভুগছে তার পরিবার। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ নারীরা অনেক কষ্টে রয়েছেন জানান তিনি।

বহরপুর ইউনিয়নের ইলিশকোল গ্রামের বাসিন্দা কামরুজ্জামান কামরুল বার্তা২৪.কমকে জানান, পানির অভাবে নিজেরা তো কষ্টে আছেনি। এর থেকেও বেশি কষ্ট পাচ্ছে পশুপাখি। তার বাড়ির হাঁস-মুরগিগুলো পানির জন্য হাঁফাচ্ছে। তীব্র রোদ ও প্রচন্ড গরমের মধ্যে পানি না থাকার প্রভাব মানুষের পাশাপাশি পড়ছে পশুপাখি ও গাছপালার ওপর।

নবাবপুর ইউনিয়নের মেছুয়াঘাটা এলাকার কৃষক রহিম মিয়া বার্তা২৪.কমকে জানান, পানি না ওঠায় তিনি মাঠে ফসল চাষ করতে পারছেন না। এখন পুরো পাট চাষের উপযুক্ত সময়। জমিতে সেচ দিয়ে পাটের চারা রোপন করতে হবে। পানি না ওঠায় তিনি পাটের বীজ রোপন করতে পারছেন না।

নিরাপদ পানির নিশ্চয়তার জন্য সরকারের কাছে ১০ হাজার টিউবওয়েলের চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে জানিয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলা সহকারি প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বার্তা২৪.কমকে জানান, বালিয়াকান্দির ৬০ শতাংশ পরিবারে এখন পানির অভাব রয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে এ অঞ্চলের ভূগর্ভস্ত পানির স্তরের ওপর প্রভাব পড়ছে।

প্রতি বছর পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। আগামী দিনগুলো আরও কঠিন হয়ে পড়বে। নিরাপদ পানি ও শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি পেতে হলে পরিকল্পনা করে টিউবওয়েল স্থাপন করতে হবে। এখন থেকে যারাই টিউবওয়েল স্থাপন করবেন তারা অবশ্যই সাবমার্সিবল অথবা তারা টিউবওয়েল স্থাপন করবেন। এ সকল টিউবওয়েল কমপক্ষে ১৬০ ফুট নিচের স্তরের পানি তুলতেও সক্ষম।

তিনি আরও বলেন, এখন থেকে টিউবওয়েল স্থাপন করলে আগামী ৫০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত পানির জন্য কোন চিন্তা থাকবে না।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *