আন্তর্জাতিক

আসছে বাজেটে জ্বালানির বরাদ্দ বাড়তে পারে ৩ গুণ

ডেস্ক রিপোর্ট: ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে উন্নয়ন বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৩৮ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ চেয়েছে ৩৪ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, আর জ্বালানি বিভাগ মাত্র ৪ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা।

উন্নয়ন বরাদ্দে সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ৬ হাজার ৭২৩ বোটি ৮৫ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। অর্থাৎ নিজস্ব অর্থায়ন বাদ দিলে বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকৃত বরাদ্দ দাঁড়াবে ৩২ হাজার ৭৫ কোটি টাকার মতো।

প্রত্যাশিত মাত্রায় না হলেও বিদ্যুৎ বিভাগের তুলনায় জ্বালানি খনিজ সম্পদ বিভাগ বেশি গুরুত্ব পেতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। মন্ত্রণালয় সুত্র জানিয়েছে, আসছে বাজেটে বিদ্যুৎ খাতের প্রবৃদ্ধির চেয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ খাতের প্রবৃদ্ধির হার অনেক বেশি হতে পারে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে চলতি অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় ৪৯ শতাংশ বরাদ্দ কমানো হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কমিয়ে ৯১১ কোটি টাকা করা হয়। সে দিক বিবেচনায় এবারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদের বাজেটের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হতে যাচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এবার  জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ খাতে (নিজস্ব অর্থায়ন ছাড়া) ২ হাজার ৮৯৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রায় ৩ গুণ বাড়তে যাচ্ছে বাজেটের আকার।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৩৬টি প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে। জিওবি ও প্রকল্প সাহায্য ৯টি, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে ১৯টি এবং গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে ৮টি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের চিত্রে দেখা গেছে, এপ্রিল পর্যন্ত জিওবি ও প্রকল্প সাহায্য ৭৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং নিজস্ব অর্থায়ন ৯২ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং জিডিএফ ফান্ডের ৮৩ দশমিক ১৪ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন, জ্বালানি বিভাগকে গুরুত্ব কম দেওয়ার কারণে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। প্রাথমিক জ্বালানির সংকটের কারণে বসে থাকছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতে করে একদিকে জনগণ লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, অন্যদিকে বসিয়ে রেখেও কোটি কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচেছ।

গ্যাস সংকট মোকাবিলায় অস্থিতিশীল আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানিতে পা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু চড়া দামে এলএনজি আমদানি করতে গিয়ে চরম মাশুল দিতে হচ্ছে। চড়া দামের কারণে ২০২৩ সালে ঘোষণা দিয়ে আমদানি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ। তখন দেশে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং শুরু হয়।  

বাংলাদেশ প্রতি ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটারের একটি করে কূপ খননের লক্ষ্যে কাজ করছে, আমেরিকা প্রতি ১৪ বর্গকিলোমিটারের ১টি এবং ভারত ১৮ দশমিক ৬ বর্গকিলোমিটারের ১টি কূপ খনন মানদণ্ড বিবেচনায় কাজ করছে। শুধুমাত্র অনুসন্ধান কার্যক্রমের ঢিলেমির কারণে দেশকে চরম মাশুল দিতে হচ্ছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত স্থবিরতা দেশকে চরম সংকটের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। বাংলাদেশে প্রচুর গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে, প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানো।

তবে আশা কথা হচ্ছে কয়েক দশকের স্থবিরতার আড়মোড়া ভেঙে বুলেট গতিতে ছুটতে শুরু করেছে পেট্রোবাংলা। ইতোমধ্যেই তার সুফলও পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। এতোদিন তেল-গ্যাস অনুসন্ধান একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আটকে ছিল বাংলাদেশ। আরও ছোট করে বলতে গেলে সুরমা বেসিন তথা, সিলেট থেকে শুরু করে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী এবং ভোলার মধ্যে আটকে ছিল বাংলাদেশ। অন্যান্য এলাকায় কিছু অনুসন্ধান কার্যক্রম হলেও তার পরিমাণ নগণ্য বলাই যায়। সেখানেও আমূল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা।

চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ৪৬ কূপ প্রকল্পের সঙ্গে আরও দু’টি যুক্ত করা হয়েছে। দ্রুত গতিতেই এগিয়ে চলছে ৪৮ কূপ খনন প্রকল্প, ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ হবে। ৪৮ কূপ খনন প্রকল্পের পাশাপাশি ২০২৬-২৮ সালের মধ্যে আরও ১০০ কূপ খননের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এ জন্য তিন শতাধিক সম্ভাবনাময় এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *