সারাদেশ

মিরপুরে প্রজাপতি পরিবহনে আগুন

ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলার বুকে প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার খ্যাত জেলা নরসিংদী। ২৪ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ জেলায় সারাদেশের আরো প্রায় ৫ লাখ লোক ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে বসবাস করে। প্রায় ১৯ বছর পর এই জেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন নরসিংদীবাসী।

স্যার কে জি গুপ্ত, ভাই গিরিশ চন্দ্র সেন, কবি শামসুর রাহমান, শহীদ আসাদ স্মৃতি বিজরিত খ্যাতিমান চিত্র শিল্পী সাহাবুদ্দিনসহ আরো অনেক বিখ্যাত গুণীজনের জন্ম এ জেলায়। বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রধান শিল্পাঞ্চলীয় জেলাও এটি। 

তবে নরসিংদীতে সকল সুযোগ সুবিধা থাকা স্বত্বেও একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতার ৫২ বছরেও প্রতিষ্ঠা হয়নি। সেই সাথে নেই কোনো মেডিকেল কলেজও। এছাড়া জেলাটি সবজি কলা, লটকনসহ নানান দেশি ফলের বড় যোগান দাতা হলেও জেলাটিতে এখনো নেই কোনো কোল্ড স্টোরেজ। তাই প্রধানমন্ত্রী আগমন উপলক্ষে সবাই অপেক্ষা করছেন স্বপ্ন পূরণ হবার।

নরসিংদী সরকারি কলেজ মাঠে সন্ধ্যার অলস সময়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন পাঁচ বন্ধু। কথায় কথায় তারা বললেন, গত এক দশকে নরসিংদীর চেহারা আমূল পালটে গেছে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে শিল্প-বাণিজ্য সব কিছুতেই অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তবে আক্ষেপ কোনো বিশ্ববিদ্যালয় না থাকার। ঢাকার পাশেই এত বড় একটি জেলা, কিন্তু কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। যে কারণে আমাদের ঢাকা যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থী ঝড়েও পড়ছে। কারণ তাদের পক্ষে ঢাকায় গিয়ে এত টাকা খরচ করে পড়া সম্ভব হয় না। তাই আমরা চাই ও বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশা পূরণ করবেন।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের সামনে কথা হয় বিল্লাল হোসেনের সাথে। তার মা বয়সের ভারে নুব্জ। তাই চাইলেও ঢাকায় নিয়ে ডাক্তার দেখানো সম্ভব হয় না। আবার নিজের একার আয়ে সংসার চালিয়ে ঢাকায় নিয়ে ডাক্তার দেখানোটা আর্থিকভাবেও কষ্টকর তার জন্য। সেই আফসোস থেকেই বলছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের নানা জায়গায় কত উন্নয়ন করতেছেন তিনি। আমাদের এখানেও যদি একটা মেডিকেল কলেজ করে দিতেন তাহলে আমাদের কষ্ট কমতো। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটাই চাওয়া, তিনি যেন একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল করে দেন।

দেড় যুগ পর বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নরসিংদী যাচ্ছেন। তাকে স্বাগত জানাতে আয়োজনের বিন্দুমাত্র কমতি নেই কোথাও। উজ্জীবিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে পুরো জেলা।  ধুয়ে মুছে চকচক করা হয়েছে রাস্তাঘাট ও রোড ডিভাইডার। প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় নেতারা আসছেন জেলায়। মাঠ পরিদর্শনসহ বিভিন্ন প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন তারা। দিনব্যাপী জেলা জুড়ে চলছে মাইকিং।

এই নিয়ে নরসিংদীর নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯ বছর পর প্রধানমন্ত্রী নরসিংদী আসছেন এটা তাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। তারা প্রধানমন্ত্রীর আগমনে উচ্ছ্বসিত। সেই উচ্ছ্বাসকে বাড়িয়ে দিতে ও প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে তার কাছে একটি পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের আবদার জানাবেন। সেই সাথে শিল্প ও কৃষি বিস্তৃত জেলায় কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণের মাধ্যমে যেনো কৃষি বান্ধব এ সরকার কৃষকদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন সেই আশায় তাদের।

এ ব্যাপারে শিল্পমন্ত্রী ও নরসিংদী-৪ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে উন্নয়নের যে বিপ্লব করেছেন নরসিংদী তার বাইরে নয়। তিনি নরসিংদীর পলাশে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সার কারখানা নির্মাণ করেছেন। নরসিংদী বিসিক শিল্প নগরী সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বেলাবতে আরেকটি শিল্প নগরী স্থাপন প্রক্রিয়াধীন আছে।

একই সঙ্গে নরসিংদীবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি- বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ এবং কৃষকদের উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের বিষয়ে অবগত আছেন তিনি। আশা করি, সমাবেশের মঞ্চ থেকে নরসিংদীবাসীর দাবিগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার হিসেবে দিবেন।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সর্বোচ্চ আয়োজন করছেন জানিয়ে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব বার্তা২৪.কম’কে বলেন, এত বড় আয়োজন কোথাও হয়েছে কি না আমার সন্দেহ। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নরসিংদীবাসীর পক্ষ থেকে গ্রহণ করার জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি।

একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, একটি মেডিকেল কলেজ ও পলাশ, শিবপুর ও বেলাবো এই তিনটি উপজেলায় সবজি রাখার জন্য তিনটি কোল্ড স্টোরেজ নরসিংদীবাসীর চাওয়া। এই বার্তাটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিব বলেও জানান তিনি।  

এনিয়ে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন বার্তা২৪.কম’কে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে নরসিংদীতে সাধারণ জনগনসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দের চেয়েও অনেক বেশি উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। 

নরসিংদী ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চটাই করতেছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা ত্রিশ হাজার ছাত্র নিয়ে স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকব। এদিন আমরা নরসিংদীরবাসীর পক্ষ থেকে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি মেডিকেল কলেজের আকাঙ্খার কথা জানাবো। যদিও আমরা জানি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে আমরা এগুলো না বললেও পাব। 

উল্লেখ্য, আগামী ১২ নভেম্বর ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প উদ্ধোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার ১১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন ও নরসিংদী মুসলেহ উদ্দীন ভূইয়া স্টেডিয়ামে আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *