সারাদেশ

সকালেই পড়ুন দেশ-বিদেশের আলোচিত ৫ খবর

ডেস্ক রিপোর্ট: কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে চলছে তিস্তার ভাঙন। গত সপ্তাহ খানেকের ভাঙনে ৫০ টিরও বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। কেউ ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব, কেউবা হারিয়েছেন একমাত্র ফসলী জমি। ভাঙনের তীব্রতা কমার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৎপরতা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর জন্য শুধুই ‘সান্ত্বনা’ বলছে এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, ভাঙনের আগে শুষ্ক মৌসুমে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়না। বিপরীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, দীর্ঘমেয়াদী ও স্থায়ী কাজের বরাদ্দ নেই। ভাঙন শুরু হলেই কেবল জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানো হয়।

শনিবার (২২ জুন) দুপুরে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তিস্তাপাড়ের ভাঙনকবলিত কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখে বার্তা২৪.কম। চোখে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের আহাজারি। বাড়ির মালিকদের সাথে বাড়ি সারাতে ব্যস্ত শ্রমিকেরা। ভাঙনে নিশ্চিত বিলিন হবে জেনে কাটা হচ্ছে ছোট-বড় সব গাছ। এসব গাছ বিক্রি হচ্ছে অর্ধেকেরও কম দামে। এই ইউনিয়নের চতুরা গ্রামের কালিরহাট বাজার ও বাজারে অবস্থিত কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও ভাঙন ঝুঁকিতে। মাত্র কয়েক মিটার দুরেই তিস্তার চোখ রাঙানি বলে দিচ্ছে বিদ্যালয়টির সময় ফুড়ানোর বার্তা। বিদ্যালয় ও বাজারটিকে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড এই দিনেই প্রথম জিও ব্যাগ প্রস্তুত করার কাজ শুরু করেছে। তবে, উদ্যোগকে লোক দেখানো বলছেন এলাকাবাসী।

বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে চলছে তিস্তার ভাঙন। এই গ্রামের বাসীন্দা জাহেরুল ইসলামের সাথে দেখা হয় বাজারের পাশে একটি ভিটায়। কয়েকদিন আগেও যেখানে বসতি ছিলো, সেই ভিটের অর্ধেক এখন তিস্তার দখলে। তিনি বলেন, এটা আমার বাড়ি ছিলো। কয়েকদিন আগে সব শেষ হয়েছে। কিছু গাছ কাটার আগেই নদী খেয়ে নিয়েছে। পাশের স্কুলে গিয়ে উঠেছি। এখন আমার কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই। ভাঙনের আগেই যদি সরকার ব্যবস্থা নিতো তাহলে আমাকে নিঃস্ব হতে হয়না। আজকে কিছু জিও ব্যাগ এনে আমাদের সান্ত্বনা দেয়া হচ্ছে। এগুলো এই স্রোতে টিকবেনা।

পাশেই বাড়ি সরিয়ে নিতে সকাল থেকেই কাজ করছেন নমিতা রানী। অসুস্থ্য স্বামীকে পাশের বাসায় রেখে এসে একাই বাড়ির আসবাবপত্র গোছাচ্ছেন তিনি। কাজ করতে করতে বলছিলেন, গত শুক্রবারও নদী অনেক দূরে ছিলো। এত দ্রুত ভাঙবে আশা করিনি। মেয়ে ক্লাস টেনে পড়ে। এই যায়গা ছাড়া আর কোনো যায়গা নাই। মেয়ের বিয়ে নিয়ে টেনশন করি নাকি থাকা নিয়ে ভাবি। এই অসুস্থ্য স্বামী আর জুয়ান মেয়কে নিয়ে এখন কোথায় থাকবো। বাজারে জিও ব্যাগ দেখে আসলাম। ওগুলো কিছুদিন আগে আনলেও বাড়িটা রক্ষা করা যেতো।

বাজারে জিও ব্যাগ আনার খবরে দূর থেকে নিজের ভিটে দেখতে এসেছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, যেখানে জিও ব্যাগ রেখেছে নদীতে ফেলার জন্য, সেটা আমার জমি। এখানে আমার বাড়ি ছিলো। ভাঙনে বাড়ি সরিয়ে নিয়েছি। গতবছর এখানে জিও ব্যাগ ফেলার পরেও ভেঙে গিয়েছে। ব্যাগ গুলো নদীর স্রোতে সরে যায় নাহলে দেবে যায়। বন্যার সময় এগুলো দিয়ে কাজ হবেনা। কিছুদিন পর নষ্ট হবে।

রিভারাইন পিপলের পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও ডিন নদী গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, বাংলাদেশ অংশে তিস্তার প্রায় ৩২ কিলোমিটার ভাঙনপ্রবণ এলাকা রয়েছে। এগুলো স্থায়ীভাবে সমাধানের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার বেশি লাগেনা। এর ফলে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার সম্পদ সাশ্রয় করা সম্ভব। কিন্তু উত্তরাঞ্চলের প্রতি সরকারের মনোযোগ কম থাকার কারণে তিস্তার জন্য বিশেষ কোনো বাজেট থাকেনা। এটি সরকারের হেয়ালিপণা। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন ঠেকাতে বালির বস্তা দিয়ে যে ব্যবস্থা নেয় সেটা খুব কাজে আসেনা। এটা চরম সংকটে সান্ত্বনা ছাড়া আর কিছু নয়।

জনগণের অভিযোগ ও অস্থায়ী ভাঙন ঠেকানোর ব্যবস্থা নিয়ে কথা হয় রাজাহাট উপজেলা অংশের তিস্তা নদীর দ্বায়িত্বে থাকা কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাফসান জানি’র সাথে। তিনি বলেন, রাজারহাট উপজেলায় ৪-৫ টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সবথেকে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কালীর হাট এলাকা। আমরা ইতোমধ্যে সেখানে ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ প্রস্তুত করছি। রোববার থেকে জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হবে। যতটা দরকার হবে ততটাই সেখানে দেয়া হবে।

তিনি আরাও বলেন, এগুলো জরুরি কাজ। যখন যেখানে সমস্যা হয় আমরা সেখানে চলে যাই। বর্ষা মৌসুমের আগে বরাদ্দ দেয়না স্যারেরা। এটা একটা ক্ষণস্থায়ী কাজ। নদীতে ব্লক দিয়ে বাধ দেয়া আমাদের স্থায়ী কাজ। যেটা প্রায় সব মৌসুমে চলে। তিস্তায় আমাদের নিজস্ব একটা স্টাডি চলমান। সেটা হলে আমরা প্রকল্প পেশ করবো। সেই বরাদ্দ না আসা পর্যন্ত তিস্তায় স্থায়ী কাজ হচ্ছেনা।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *